একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা - বাংলা রচনা

উপস্থাপনা : 

সত্যিই সন্ধ্যা নেমে আসছে মন্দ মন্থরে। কিন্তু সংগীত থেমে যায়নি। প্রকৃতির আনাচে-কানাচে এখন বর্ষণ-সঙ্গীত ধ্বনিত। অবশ্য মন-বিহঙ্গের পাখা বন্ধ হয়নি, কল্পনার আকাশে সে বিস্তৃত । বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেই সকালে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তারপর সন্ধ্যা-একটানা নিশ্ছিদ্র বৃষ্টির রাজত্ব । পড়ন্ত শ্রাবণ জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বর্ষার দাপট ।

গৃহে অবস্থান : 

কবিরা বর্ষার প্রেমিক। এমন কি প্রাবন্ধিকরাও পিছিয়ে নেই। আমি নিতান্তই ছাত্র এবং কিশোর। একটানা বৃষ্টি আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়। দিনভর বৃষ্টি মানেই দুপুরে নিরামিষ আহার, পড়শীর বাড়ি যেতে হাঁটু কাদা, পদে পদে পিচ্ছিল পথের হুমকি, আর সবচেয়ে নিদারুণভাবে বিকেলে হাই স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলার পরিকল্পনার ইতি । অতএব বাধ্য হয়ে জানালার ধারে বসলাম।

অঙ্ক কষার চেষ্টা ঃ

পড়ুয়া ছাত্ররা বলে, বৃষ্টির দিনে নাকি অঙ্ক কষে সুখ। চেষ্টাও একবার করেছিলাম। কিন্তু অঙ্কটা তো কেবল মস্তিষ্কের ব্যাপার নয়, মনও লাগে। বৃষ্টির বেধড়ক অত্যাচারে মনটা এমনই বিরূপ হয়ে আছে যে, কোন অঙ্কই মিলবার সম্ভাবনা দেখা গেল না । অতএব জানালার ধার ঘেঁষে বসে রইলাম ।

আরও পড়ুন :- বর্ষাকাল অথবা, বাংলার বর্ষা রচনা [  ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ]

বৃষ্টি-পতন দেখা : 

বৃষ্টির জন্য দৃষ্টি বেশি দূর প্রসারিত করা গেল না। চোখের ঠিক সামনেই টপটপ করে বড় বড় ফোঁটার পানি পড়ছে টিনের চাল গড়িয়ে। আর তার কিছু দূরেই অঝোর ধারায় সূক্ষ্ম জলকণার বর্ষণ। আমাকে কিন্তু প্রথম ব্যাপারটাই আকৃষ্ট করল বেশি। প্রকৃতির বর্ষণের তুলনায় এ পতনের বেশ একটা ছন্দ আছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক একটি ফোঁটার পতন ।

কল্পনায় বিচরণ : 

দূরে গাছপালাগুলো ঝাপসা হয়ে আছে। সতেজ সবুজ গাছগুলো কালচে ধূসর দেখাচ্ছে। এমনকি পাশের বাড়িটিও দেখা যাচ্ছে না ভাল করে। দু-একজন লোক হাঁটছে। মাথায় টোপর, সাবধানী লঘু পদক্ষেপ। বৃষ্টির পর্দার আড়ালে চেহারা চিনবার উপায় নেই কারও। বোধহয় এ সবকিছুই বর্ষার দিনের সৌন্দর্য। কিন্তু আমি তা গ্রহণে, আস্বাদনে অক্ষম। 

জানালার ধারে কোন কদম তরুর দোলায়মান শাখাও নেই । তাই মনে কবির-ভাবও জাগল না। তবু মন বিহঙ্গ পাখা মেললো কল্পনার আকাশে-যদি ফুটবল খেলা যেত মাঠে গিয়ে কিংবা হা-ডু-ডু!

আরও পড়ুন :-  যমুনা সেতু - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

সন্ধ্যার অবসান : 

সূর্যের মুখ দেখা যায়নি সারাদিন। পুরোদিনটাতেই ছিল আজ সন্ধ্যার আমেজ। ধীরে ধীরে বৃষ্টির ফোঁটা মিলিয়ে গেল চোখের সামনে থেকে। কেবল শব্দ শোনা যেতে লাগল একটানা জল পতনের। সন্ধার অবসান হচ্ছে। ধারের ডোবা থেকে ব্যাঙের প্রমত্ত ডাক ভেসে আসছে, সে যেন এক কনসার্ট। দূরে একটি জোনাকি জ্বলে উঠল দেখলাম । 

কিন্তু বৃষ্টির দিনে তো জোনাকি জ্বলে না? তবে কি? না, লণ্ঠন হাতে কে যেন গোয়ালে গরু বাঁধছে। বৃষ্টির সচ্ছিদ্র পর্দার আড়ালে মনে হচ্ছে যেন জোনাকি জ্বলছে ।

কবিদের দৃষ্টিতে : 

বর্ষণমুখর সন্ধ্যা একজন কবির নিকট সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে হাজির হয়। তার মনে-প্রাণে জাগে নতুন শিহরণ। রচনা করেন নতুন কবিতা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও এরকম বর্ষাস্নাত দিনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন তাঁর কবিতায় । 
মোটকথা, একজন সাধারণ মানুষও একজন কবির নিকট শ্রাবণ মূর্তি সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্যে ধরা দেয় ।

উপসংহার : 

মানুষ সুন্দরের পূজারী এবং সুন্দর হচ্ছে মানব মনের এক চিরন্তন তৃপ্তি সরোবর। কথায়ও আছে-“সন্ধ্যাও হচ্ছে সুন্দরের প্রতীক-প্রকৃতি এক অভিনব রূপচিত্র।” আষাঢ়ের এ বর্ষণমুখর সন্ধ্যাটিও প্রকৃতির সেই অভিনব রূপবৈচিত্র্যের এক বৈচিত্র্যময় প্রতিচ্ছবি । অতএব, প্রকৃতির বহু বিচিত্র ও অবিস্মরণীয় ঘটনার মতই শ্রাবণের-এ সন্ধ্যাটিও দেদীপ্যমান হয়ে বিরাজ করবে, আমার স্মৃতি রঞ্চিত হৃদয়পটে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad