মাইটোসিস কাকে বলে?মাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য,গুরুত্ব এবং কোথায় ঘটে

সংজ্ঞা :- যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় প্রথমে নিউক্লিয়াস ও পরে সাইটোপ্লাজম মাত্র একবার বিভাজিত হয়ে একটি মাতৃকোষ থেকে সংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট এবং সমগুণসম্পন্ন দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় তাকে মাইটোসিস বলে। 

  • মাইটোসিস কোষ জীবের দেহ কোষে অবস্থান করে ।

মাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য :-

  • ১। এ প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ক্রোজোসোম লম্বালম্বিভাবে তথ্য অনুদৈর্ঘ্যে দুটি ক্রোমাটিডে বিভক্ত হয়।
  • ২। প্রতিটি ক্রোমাটিড তথা অপত্য ক্রোজোসোম তার নিকটস্থ মেরুতে পৌঁছে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি করে। কাজেই দুটি অপত্য কোষেই ক্রোজোসোম সংখ্যা সমান থাকে ।
  • ৩। অপত্য কোষগুলো মাতৃকোষের সমান গুণসম্পন্ন হয়, কারণ জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রক জিনসমূহ বহনকারী ক্রোজোসোমগুলোর প্রতিটি লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষের নিউক্লিয়াসে যায় ।
  • 8। অপত্য কোষের ক্রোজোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোজোসোম সংখ্যার সমান থাকে ।
  • ৫. অপত্য কোষ বৃদ্ধি পেয়ে মোটামুটি মাতৃকোষের সমান আয়তনের হয়।

আরও পড়ুন :- মাইটোসিস এর ধাপ এবং মাইটোসিস কোষ বিভাজনের তাৎপর্য 

মাইটোসিস এর গুরুত্ব :-

জীবকুলে মাইটোসিসের বেশ কিছু গুরুত্ব বা - প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয়।

নিম্নে মাইটোসিসের কয়েকটি গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলো:-

। নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের ভারসাম্য রক্ষা: 
মাইটোসিসের মাধ্যমে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে; ফলে কোষের আকৃতি ও আয়তন নির্দিষ্ট থাকে।

। সুশৃঙ্খল বৃদ্ধি : 
মাইটোসিসে সৃষ্ট অপত্য কোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ একই রকম থাকায় দেহের বৃদ্ধি সুশৃঙ্খলভাবে হতে পারে।

। দৈহিক বৃদ্ধি ঃ 
মাইটোসিসের ফলে বহুকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে । সকল বহুকোষী জীবই জাইগোট নামক একটি কোষ হতে জীবন শুরু করে। এর একটি কোষই পুণঃ পুণঃ বিভাজনের ফলে অসংখ্য কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ণ জীবের আকৃতি প্রদান করে ।

 বংশবৃদ্ধি ঃ
এককোষী সুকেন্দ্রিক( eukaryotic) জীবে মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি ঘটে ।যেমনঃ Chalamydomonas।

। অঙ্গজ প্রজনন : 
অঙ্গজ প্রজনন সাধিত হয় মাইটোসিসের (mitosis)ফলে  ।

 ক্ষতস্থান পূরণ : 
জীবদেহের ক্ষতস্থানকে পূরণ করতে মাইটোসিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । 

 জননকোষের সংখ্যা বৃদ্ধি ঃ 
জননকোষের সংখ্যা বৃদ্ধিতেও মাইটোসিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

মাইটোসিস কোথায় ঘটে :-

সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণির বর্ধনশীল অঙ্গে মাইটোসিস সংগঠিত হয়। ইহা ব্যতীত এককোষী শৈবাল কিংবা আদ্য প্রাণী হতে আরম্ভ করে সপুষ্পক উদ্ভিদ এবং মেরুদণ্ডী প্রাণিদেহে মাইটোসিস দেখতে পাওয়া যায় ।

উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রভাগ, পত্র ও পুষ্পমুকুল, অগ্রমুকুল, ভ্রূণমূল, মৃদ্‌গত কাল্ডের মুকুল প্রভৃতি সজীব দেহকোষে মাইটোসিস সংগঠিত হয়। উচ্চতর প্রাণিদেহে সংগঠিত ভ্রুণের পরিস্ফূটন ও বৃদ্ধিকাল হতে জন্মের পর নির্দিষ্ট বয়ঃসীমা পর্যন্ত মাইটোসিস হয় । প্রসংগতঃ নিউরোন জন্মগ্রহণের পর বিভাজিত হয় না ।

ও অপত্য কোষ (Daughter Cell) গঠনের সময় মাতৃকোষটি (Mother Cell) চারটি দশা বা ফেস (Phase) বা অবস্থা (Stage) অতিক্রম করে।

  • ১. প্রোফেজ বা প্রথম অবস্থা (Prophase)
  • ২. মেটাফেজ বা দ্বিতীয় অবস্থা (Metaphase) 
  • ৩. অ্যানাফেজ বা তৃতীয় অবস্থা (Anaphase)
  • ৪. টেলোফেজ বা চতুর্থ অবস্থা (Telophase)

সমীকরণিক কোষ বিভাজন 

যে বিভাজন প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজোম ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয় তাকে সমীকরণিক কোষ বিভাজন বলে । 

মাইটোসিস কে সমীকরণিক কোষ বিভাজন বলা হয় কেন ?

মাইটোসিস কোষ বিভাজনে মাতৃকোষ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায়  বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয়। অপত্য কোষ গুলো নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজোম সংখ্যা ও গুনাগুন মাতৃকোষের মতো  হয়। এ কারণেই মাইটোসিস বিভাজন কে সমীকরণিক বিভাজন বলা হয়। 

আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad