ইসলামী শরীয়তে পবিত্রতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ইবাদতের জন্য পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় বেশ কয়েকটি ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য অজু অপরিহার্য। আর এ অজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য তার রয়েছে কতগুলো ফরজ, সুন্নত, মুস্তাহাব, ইত্যাদি।
অজুর নিয়ত :
অজুর ফরজ :
অজুর ফরজ ৪ টি । যথাঃ
১. মুখমণ্ডল ধৌত করা :
অর্থাৎ কপালের চুলের গোড়া হতে তুথনীর নিচ পর্যন্ত ও ডান কানের লতি থেকে বাম কানের লতি পর্যন্ত ভাল করে ধোয়া ।
২. উভয় হাত ধৌত করা :
অর্থাৎ দু হাতের অঙ্গুলির মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত ধৌত করা। প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাত ।
৩. মাথা মাছেহ করা :
অর্থাৎ মাথার এক চতুর্থাংশ মাছেহ করা ।
৪. উভয় পায়ের গিরা পর্যন্ত ধৌত করা :
অর্থাৎ পায়ের অঙ্গুলিগুলো মাথা থেকে গিরা পর্যন্ত এবং পায়ের অঙ্গুলির মাঝখানের খালি স্থান ভাল করে ধৌত করা।
আরও পড়ুন : গোসল অর্থ কি?কত প্রকার।গোসলের ফরজ কয়টি।গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
অজুর সুন্নত সমূহঃ
- ১। অজুতে নিয়ত করা সুন্নত।
- ২। বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত।
- ৩। দোন হাতের কব্জিসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত।
- ৪। মেছওয়াক করা সুন্নত ।
- ৫ । তিনবার কুলি করা সুন্নত।
- ৬। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত ।
- ৭ । সমস্ত মুখ তিনবার ধোয়া সুন্নত।
- ৮। ডান হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত ।
- ৯। বাম হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত।
- ১০। দোন হাতের আঙ্গুলী খিলাল করা সুন্নত।
- ১১ । সমস্ত মাথা একবার মাছেহ্ করা সুন্নত ।
- ১২। কান মাছেহ্ করা সুন্নত।
- ১৩। ভিজা আঙ্গুলি দ্বারা দাড়ি খিলাল করা সুন্নত।
- ১৪ । ডান পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত ।
- ১৫ । বাম পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত।
- ১৬। দোন পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা সুন্নত।
অযুর মুস্তাহাব সমূহ :
অযুর মুস্তাহাব ছয়টি। যথা-
- ১. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা।
- ২. তারতীব রক্ষা করা।
- ৩. সমস্ত মাথা মাসেহ করা।
- ৪. ডানদিক থেকে অযু শুরু করা, যে কোনো অঙ্গের ডান অঙ্গটি আগে ধৌত করা।
- ৫. এক অঙ্গ শুকানোর আগে অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
- ৬. ঘাড় মাসেহ করা।
অজু করার নিয়ম :-
১. প্রথমতঃ ওযূর নিয়্যাত করবে।
২. দ্বিতীয়তঃ দু হাতের কবজি পর্যন্ত অঙ্গুলির খালি স্থানসহ ৩ বার ধৌত করা, প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাত ।
৩. তারপর মুখে পানি নিয়ে ৩ বার করে কুল্লি করা। দ্বিতীয় বারের সময় গড়গড়ার সাথে কুলি করা ।
৪. তারপর ডান হতে পানি নিয়ে নাকের (রোযা ছাড়া অন্য সময়) ভেতরে নরম স্থানে পৌছানো এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধা অঙ্গুলি দ্বারা ৩ বার নাকের ভিতর পরিষ্কার করা ।
আরও পড়ুন : পানি কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞাসহ হকুম বর্ণনা
৫. তারপর দু হাতে পানি নিয়ে মুখ ধৌত করা। কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ পর্যন্ত, ডান কানের লতি থেকে বাম কানের লতি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করা।
৬. তারপর দু হাত অঙ্গুলির মাথা হতে দু হাতের কনুই পর্যন্ত ধোয়া। প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাত ।
৭. দু হাত ধোয়ার পর দু হাতের কনিষ্ঠ অঙ্গুলি এবং মধ্যের অঙ্গুলি একত্রে মিলিত করে (বৃদ্ধা অঙ্গুলি এবং শাহাদাত অঙ্গুলি মিলাবে না) পরে মাথার উপরিভাগে হাত টেনে মাথার পিছনের দিকে মুছে নেয়া।
৮. তারপর মাথার পিছন দিক থেকে কপালের উপরিভাগ পর্যন্ত হাতের তালু ও আঙ্গুলের পেট মুছে আনা ।
অজু ভঙ্গের কারণ :
- পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া।
- মুখ ভরিয়া বমি হওয়া।
- চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া।
- শরীরের ক্ষতস্থান হইতে রক্ত, পুচ, পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
- থুতুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
- পাগল, মাতাল, অচেতন হইলে।
- নামাজে উচ্চস্বরে হাসিলে।
অজুর দোয়া :-
بِسْمِ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ।
অর্থঃ আমি আল্লাহর নামে আরম্ভ করিতেছি এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
অজুর ভিতরে মাঝে মাঝে নিম্নোক্ত দোয়া পড়িতে হয় :-
ইহাতে গুনাহ মাফ হইবে। রিজিক – রুজিতে বরকত হইবে। এবং যাবতীয় অশান্তি দূর হইবে। ইনশাআল্লাহ তাআলা।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলি জাম্বি ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিকলি ফি রিজকি।
অর্থঃ আয় আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করিয়া দাও। আমার আবাস প্রশস্ত করিয়া দাও। আমার রিজিক বৃদ্ধি করিয়া দাও।
অজু শেষ করিয়া নিম্নের দোয়া পড়িতে হয় :
أَشْهَدُ أَن لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
উচ্চারণ : আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, আল্লাহুম্মাজ-আলনি মিনাত-তাওয়া-বিনা, ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতা-ত্বাহহিরিন।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত ইবাদতের উপযুক্ত আর কোন মাবুদ নেই। তিনি একক এবং তাহার কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাঃ আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসুল। আয় আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের শ্রেণীভুক্ত করিয়া লও। আয় আল্লাহ! আমাকে পবিত্রতা রক্ষাকারীদের শ্রেণীভুক্ত করিয়া লও।