একুশে ফেব্রুয়ারি/আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা- ৫০০ শব্দ
ভূমিকা
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।”
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির গৌরবময় সেই ইতিহাস, যে ইতিহাস পৃথিবীর আর কোথাও নেই। মাতৃভাষা আদায়ের জন্য সেদিন রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল এ দেশের তরুণ সমাজ।
ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব
ভাষা আন্দোলনের মূল সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। এ সময় পৃথিবীর বুকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।
কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির প্রারম্ভেই সমস্যা দেখা দেয়। পাকিস্তানের জনসমষ্টির শতকরা পঞ্চান্ন ভাগ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। তবুও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে ১৯৪৭ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলা ভাষা বিষয়ে প্রথম প্রতিবাদ ওঠে। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের দানা বাঁধে এবং ধীরে ধীরে তা তীব্রতর হয়। চলতে থাকে বাংলা ভাষার দাবিতে মিছিল, ধর্মঘট। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে থাকে।
পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে ঢাকায় এক সমাবেশে উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে ঐ সমাবেশেই এ দেশের ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের তীব্র রূপ ।
আরও পড়ুন :- স্বাধীনতা দিবস - রচনা ১০০, ২০০ এবং ৫০০ শব্দ
ভাষা আন্দোলনের মূল প্রেক্ষাপট
১৯৪৮ সাল থেকেই ভাষা আন্দোলন দিন দিন জটিল আকার ধারণ করে। বাঙালিরা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা মেনে না নিয়ে এর প্রতিবাদ করে এবং এর পরবর্তী কয়েক বছর ১১ই মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবসরূপে পালিত হতে থাকে। ১৯৫২ সালে ঢাকায় তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাজিমউদ্দিন উর্দুর পক্ষে মত প্রকাশ করলে প্রতিবাদে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়।
তৎকালীন সরকার এই আন্দোলন দমন করার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ছাত্র, জনতা; নির্বিশেষে সব মানুষ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়তে থাকে। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদুনে গ্যাস ছোঁড়ে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে।
তখন গণপরিষদের অধিবেশন চলছিল। ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের গেট দিয়ে বেরিয়ে পরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হয়। তখন পাকিস্তানি নরপশুরা নিরপরাধ ছাত্রদের ওপর গুলি চালায়। এতে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেক ছাত্র প্রাণ হারায়। পাকিস্তানি অত্যাচারী শাসকদের নির্দেশে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়, সারাদেশে বিক্ষোভ আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি
২১শে ফেব্রুয়ারির এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং আতঙ্কিত সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এ স্বীকৃতি বাস্তবে কাজেকর্মে কখনো প্রমাণিত হয়নি।
আরও পড়ুন :- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস - রচনা ২০পয়েন্ট | PDF
ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে যে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য প্রতি বছর শহিদ দিবস উদযাপন করা হয়। তবে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য কেবল শহিদ দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং তা বাঙালির জীবনে সর্বত্রই প্রভাব বিস্তার করে। শহিদদের স্মৃতি রক্ষায় রাতারাতি তৈরি হয়েছে শহিদ মিনার। পরবর্তীতে এ শহিদ মিনার বাঙালি জাতিকে বহু আন্দোলনের পথে প্রেরণা জুগিয়েছে এবং স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
ভাষার জন্য আত্মত্যাগ বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। পৃথিবীর আর কোনো জাতি তাদের মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্ত দেয়নি। কিন্তু বাঙালির ভাষা দিবস এখন আর তার নিজস্ব নয়। এখন একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়।
১৯৯৯ সালে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৯৯ সালে ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বের ১৯২টি দেশে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন :- একুশে ফেব্রুয়ারী - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
উপসংহার
বাঙালি জাতির কাছে চির গৌরবের, চির স্মরণীয় একটি দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশের চেতনার ফলেই পরবর্তীতে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে পেয়েছি। তাই আমাদের সকলের উচিত এ দিনটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা এবং একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া।
একুশে ফেব্রুয়ারি/আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা- ১০০০ শব্দ
ভূমিকা
মানুষ ভাবের বিনিময় করে ভাষার মাধ্যমে। এ ভাষার গুণেই পৃথিবীর সকল প্রাণী থেকে মানুষ স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী। মানুষ তার হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা সবকিছুই প্রকাশ করে ভাষার মাধ্যমে। মাতৃভাষা ছাড়া তৃপ্তি মিটিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না। মাতৃভাষার এ গুরুত্বের কথা ভেবেই পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মাতৃভাষার মাধ্যমে। মাতৃভাষার ভেতর দিয়েই শিশুর মনে স্বদেশপ্রেমের সূত্রপাত ঘটে।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বিদেশি শাসকরা এ ভাষাকে যুগে যুগে পদানত করতে চেয়েছে ৷ তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এদেশের মানুষ । করেছে ভাষা আন্দোলন। অনেক রক্ত ঝরেছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে অকাতরে জীবন দিয়ে, তার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা ভাষার মর্যাদা। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃত ।
ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত যে আন্দোলন হয়েছে, তাকে ভাষা আন্দোলন বলা হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল। সেখানে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গৃহীত হয় উর্দু এবং ইংরেজি। বাংলাকেও গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি জানানো হয়। কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানসহ মুসলিম লীগের নেতারা এর বিরোধিতা করেন ।
ফলে ২ মার্চ ঢাকায় ফজলুল হক মুসলিম হলে এক সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করা হয়। এই পরিষদ ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে এবং ছাত্ররা শোভাযাত্রা নিয়ে রাজপথে নামে। শোভাযাত্রায় পুলিশ নির্বিচারে গুলি ও লাঠিচার্জ করলে অনেক ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়। এর প্রতিবাদে ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন এবং ১৫ মার্চ পর্যন্ত এই ধর্মঘট অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।
আরও পড়ুন :- বিজয় দিবস - রচনা [ class 6, 7, 8, 9 ] এবং HSC
১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রথম ঢাকায় আসেন। তিনি ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভায় ঘোষণা করলেন, "Urdu and only Urdu will be the State Language of Pakistan." এর প্রতিবাদে ২৬ মার্চ ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকায় গঠিত হয় 'রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ'। ১৯৫০ সালে গণপরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে জিন্নাহকে অনুসরণ করে লিয়াকত আলী খান বললেন, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।”
এর প্রতিবাদে ঢাকার রাজপথ গরম হয়ে ওঠে এবং ৩০ জানুয়ারি পালিত হয় ধর্মঘট। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এক সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস পালন ও হরতালের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সরকার জনরোষের ভয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ঢাকা জেলার সর্বত্র ধর্মঘট, জনসভা, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দেয় । কিন্তু ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে
নামলে পুলিশ নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে শহিদ হন রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত এবং নাম না জানা আরও অনেকে। শহিদদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় মর্যাদায় পালন করা হয় শহিদ দিবস' হিসেবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালি জাতির জন্য এ এক বিরাট গৌরব। একদিকে সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারবে বাংলাদেশ নামে একটি দেশের কথা, বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার কথা, অন্যদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশের ভাষাগুলো মর্যাদা লাভের পথ খুঁজে পাবে। বলা যায়, ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' এক বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুন :- মে দিবস - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
মাতৃভাষা দিবসের আনন্দ উৎসব
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাতৃভাষা দিবস উৎসবের আয়োজন করে ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর। উৎসবটি পালিত হয় ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে। ‘একুশ আমাদের অহংকার', ‘একুশ পৃথিবীর অলঙ্কার', 'অমর একুশ অজয় হয়েছে'—এরকম অজস্র কথা, কবিতা, গদ্য, নৃত্যছন্দে জমজমাট আনন্দ উৎসবের মধ্যে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে দিনভর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আনন্দ, শোভাযাত্রা, আলোচনা, নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পালিত হয় এ উৎসব।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। বাংলা ভাষাকে জাতীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ছুটে যায় শহিদ মিনারে।
জাতিসংঘের মহাসচিব এ দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বার্তা প্রেরণ করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি উদযাপন করে। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দিনটি অব্যয় ও অক্ষয় হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন :- বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা - রচনা (১৫০০ শব্দ)
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বাংলাদেশের গুরুত্ব
আজ আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, আমরাই প্রথম জাতি, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রক্ত দিয়েছি, অকাতরে জীবন দিয়েছি। মাতৃভাষার জন্য রক্ত এবং জীবন দেওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে আর নেই। সেই রক্ত বৃথা যায় নি। বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের মাতৃভাষাকে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের সাথে সাথে বাংলাদেশের গুরুত্বও বৃদ্ধি পেল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেই সাথে বাংলা ভাষা হলো গৌরবের ভাষা ।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বাঙালির সংগ্রামের ও আত্মত্যাগের ঘটনা বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করল। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী অনুভব করতে সক্ষম হবে, মাতৃভাষা একটি দেশের জাতিসত্তার প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তাই যখনই তাদের মাতৃভাষার ওপর কোন আঘাত আসবে, তখনই তারা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠবে তাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য। এর সাথে গুরুত্বের সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের নাম।
মাতৃভাষা দিবস প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ
মাতৃভাষা দিবসের সঠিক ইতিহাস বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশ সরকার কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গৃহীত পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ :
ক. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন : আমাদের মাতৃভাষাকে নিয়ে গবেষণা এবং পৃথিবীর সকল মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা গবেষণা কেন্দ্র' প্রতিষ্ঠা করেছেন। গোটা বিশ্বের তিন চার হাজার মাতৃভাষার কোনোটিই যেন হারিয়ে না যায়, এ কেন্দ্রে সেই বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে। বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে এ কেন্দ্র একদিন বিশ্বের সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণে সহায়ক হবে। এ জন্য বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে ভাষাতত্ত্ববিদ, তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের পণ্ডিতবর্গ ও নৃতত্ত্ববিদদের এখানে কাজ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর ফলে বাংলা ভাষার বিস্তৃতি ঘটছে বিশ্বের অনেক দেশে ।
খ. বিশ্বভাষা মেলা আয়োজন: সে সময়ে ঠিক করা হয়েছিল, আগামী মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজন করা হবে 'বিশ্বভাষা মেলা'। বর্ণাঢ্য এ মেলার সম্ভাব্য স্থান হচ্ছে রমনা পার্ক বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। মেলার প্রধান আকর্ষণ হবে বিভিন্ন দেশের বর্ণমালা, গ্রন্থাদি ও মহান সাহিত্যিকদের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া থাকবে ভাষা বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, প্রামাণ্য চিত্র, আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশন ইত্যাদি। মেলায় বাংলাদেশের একটি বড় স্টলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্টল থাকবে।
গ. সিডি ও ভিডিও ক্যাসেট তৈরির পরিকল্পনা : বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বিবর্তন ও পরিচয় বর্ণনা করে তৈরি একটি সিডি ও ভিডিও ক্যাসেট অচিরেই বিশ্বের ১৮৮টি দেশে পাঠানো হবে। এছাড়াও জাতিসংঘের ৫টি ভাষা; যথা : ইংরেজি, ফারসি, জার্মানি, স্প্যানিস ও আরবিতে সিডি ও ভিডিও ক্যাসেট তৈরি করা হবে ।
উপসংহার
আমরা একুশ শতকে পদার্পণ করেছি। আমাদের জাতীয় জীবনে গত শতক ছিল আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম, যুদ্ধে ভরা টালমাটাল দিন। ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি লাখ লাখ জীবনের বিনিময়ে। এদেশের মানুষ মাটির গন্ধ বড় বেশি ভালোবাসে । তাই তারা ভালোবাসে মাটির মাকে, আর মায়ের মুখের ভাষাকে। বাংলা মায়ের সন্তানেরা বিশ্বের বুকে নতুন শতকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য আজ দৃঢ়প্রত্যয়ী । আর সে জন্য আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাতৃভাষার প্রচলন নিশ্চিত করা প্রয়োজন ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা