জড়তা কাকে বলে?কত প্রকার।স্থিতি জড়তা,গতি জড়তা সংজ্ঞা সহ উদাহরণ

সংজ্ঞা : বস্তু যে অবস্থায় রয়েছে চিরকাল সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা সেই অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম, তাকে জড়তা( Inertia)বলে। 

(toc) Table Of Contens

জড়তার উদাহরণ : 

গাড়ি হঠাৎ চলতে শুরু করলে আরোহীর শরীরের নিম্নভাগ গাড়ির সাথে গতিপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু শরীরের উপরিভাগ স্থিতিজড়তার জন্য স্থির থাকে। ফলে আরোহী পেছনের দিকে হেলে পড়ে। বিপরীত পক্ষে, গাড়ি হঠাৎ থামলে শরীরের নিচের অংশ স্থির হয় কিন্তু গতি জড়তার কারণে ওপরের অংশ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

জড়তার প্রকারভেদ : 

জড়তা প্রধানত দুই প্রকার। যথা

১। স্থিতি জড়তা। 

২। গতি জড়তা। 

স্থিতি জড়তা :

সংজ্ঞা : স্থিতিশীল বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা স্থিতি বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম, তাকে স্থিতি জড়তা বলে।

আরও পড়ুন : ত্বরণ,সুষম ত্বরণ,অসম ত্বরণ সংজ্ঞা সহ উদাহরণ।পার্থক্য বেগ ও ত্বরণনের

স্থিতি জড়তার উদাহরণ : 

থেমে থাকা বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে বাস-যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়েন স্থিতি জড়তার কারণে। বাস যখন থেমে থাকে তখন যাত্রীর শরীরও স্থির থাকে। কিন্তু হঠাৎ বাস চলতে শুরু করলে যাত্রীদের শরীরের বাস সংলগ্ন অংশ গতিশীল হয় কিন্তু শরীরের উপরের অংশ স্থিতি জড়তার জন্য স্থির অবস্থায় থাকতে চায় তাই শরীরের নিচের অংশ থেকে উপরের অংশ পিছিয়ে পড়ে বা শরীর পিছনে হেলে যায়।

গতি জড়তা :

সংজ্ঞা : গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা একই গতি অক্ষুণ্ণ রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে গতি জড়তা বলে।

গতি জড়তার উদাহরণ :

চলন্ত বাস হঠাৎ ব্রেক করলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। চলন্ত অবস্থায় বাসের সাথে সাথে যাত্রীও একই গতি প্রাপ্ত হয়। কিন্তু বাস হঠাৎ থেমে গেলে বাসের সাথে সাথে যাত্রীর শরীরের নিচের অংশ স্থির হয় কিন্তু শরীরের উপরের অংশ গতি জড়তার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

আরও পড়ুন : দ্রুতি ও বেগ,সুষম বেগ ও অসম বেগ সংজ্ঞা,একক,পার্থক্য।শব্দের বেগ একটি সুষম বেগ

ভর হচ্ছে জড়তার পরিমাপ।- ব্যাখ্যা :

উত্তর : একই আকৃতির ২টি বিরাট নিরেট সিলিণ্ডার বিবেচনা করি। যাদের একটি কাঠের এবং অন্যটি ইস্পাতের তৈরি। এখন যদি আমরা সিলিণ্ডার দুটিকে কোন অণুভূমিক অমসৃণ তলে ঠেলতে চেষ্টা করি তাহলে দেখব ইস্পাতের সিলিন্ডারটিকে গতিশীল করতে কাঠের সিলিণ্ডারের থেকে অধিকতর প্রয়াসের প্রয়োজন। আবার যদি দুটিই গতিশীল থাকে তাহলে ইস্পাতের সিলিন্ডারকে থামানোর জন্য বেশি প্রচেষ্টার দরকার হবে। তাহলে আমরা বলতে পারি কাঠের সিলিন্ডারের চেয়ে ইস্পাতের সিলিণ্ডারের জড়তা বেশি। ইস্পাতের সিলিণ্ডারের ভর কাঠের সিলিণ্ডারের ভরের চেয়ে বেশি বলেই এর জড়তা বেশি। তাই বলা যায়, ভর হচ্ছে পদার্থের জড়তার পরিমাপ ।

নিউটনের গতির প্রথম সূত্র থেকে কিভাবে জড়তার ধারণা পাওয়া যায় ব্যাখ্যা :

উত্তর : নিউটনের গতির প্রথম সূত্র থেকে আমরা পাই, প্রত্যেক বস্তুই যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকতে চায় অর্থাৎ বস্তু স্থির থাকলে স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল থাকলে গতিশীল থাকতে চায়। নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে দেখা যাচ্ছে বস্তুর এই স্থিতিশীল ও গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে বল প্রয়োগ করতে হয়। পদার্থের নিজস্ব অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে প্রবণতা, তাকে জড়তা বলে। 

স্থিতিশীল বস্তু চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা স্থিতি বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম, তাকে স্থিতি জড়তা এবং গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা একই গতি অক্ষুণ্ণ রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম, তাকে গতি জড়তা বলা হয়।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad