ভাবসম্প্রসারণ: নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশ পরিচয় (২টি)

নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশ পরিচয় সেই আশরাফ জীবন যার পুণ্য কর্মময়

মূলভাব : আভিজাত্য বা বংশ পরিচয়ে মানুষের মর্যাদা বাড়ে না, একমাত্র মহৎ গুণাবলির জন্যই মানুষ প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হন। 

সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীতে মানুষ নানা জাতি, উপজাতি, ধর্মবর্ণ ও গোষ্ঠী গোত্রে বিভক্ত। মনুষ্যসৃষ্ট এ বিভাজন রীতির কারণে এখানে এক শ্রেণির মানুষকে উচ্চ শ্রেণির বা উচ্চ জাতের মানুষরূপে বিবেচনা করা হয়, আর অন্য শ্রেণির মানুষদের নিম্ন জাতের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। ধারণা করা হয় যে, তথাকথিত উচ্চ জাতের মানুষ জন্মগতভাবেই সম্মান ও মর্যদার অধিকারী। আর নিম্ন জাতের মানুষ সম্মান ও মর্যাদাহীন। কিন্তু এ ধারণা সর্বাংশে ভুল। মানুষের সত্যিকার পরিচয় তার কর্মে, জাত বা বংশ পরিচয়ে নয়। আশরাফ বা অভিজাত বলে অনেকে বংশ গৌরব বড় করে দেখে, কিন্তু তার কাজকর্মে যদি কোনো গুণ প্রকাশ না পায়, তবে সে বংশ গৌরবের কোনো অর্থ নেই। জন্ম কোথায় হলো তা দেখার বিষয় নয়। উচ্চবংশে জন্মগ্রহণ করেও যদি কেউ অপকর্মে লিপ্ত থাকে তবে কেউ তাকে শ্রদ্ধা করবে না। 

অপরপক্ষে, একজন লোক নিচকুলে জন্মগ্রহণ করেও মহৎ কর্ম ও চারিত্রিক আদর্শের হিরনায় শিখায় জ্বলে উঠতে পারেন, এবং তখন তিনি হয়ে উঠেন অনন্য। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একেবারে সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন; তিনি একজন শ্রমিক ছিলেন। মালয়েশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট মোর্কাশ, তুরস্কের জাতির পিতা কামাল পাশা, বাংলা ভাষার বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলাম এরা সবাই সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আপন কর্ম দ্বারাই তারা অর্জন করেছেন দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। এ পৃথিবীতে যারা মহান, যারা স্মরণীয় এবং বরণীয় ব্যক্তি, তারা বংশ মর্যাদার বড়াই দেখিয়ে বড় হননি। কর্মের গুণেই তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তাই প্রকৃত কৌলীন্য বংশ মর্যাদার উপর নির্ভর করে না, এটা নির্ভর করে সৎ কর্মের উপর।

মন্তব্য : প্রত্যেক মানুষই তার বংশের জন্য নয় কর্মের জন্যই  প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হন হন ।

আরও  পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে (২টি)

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব : পৃথিবীতে যার জীবন পুণ্য-কর্মময়, তার জন্ম যে বংশেই হোক, প্রকৃতপক্ষে সে মর্যাদাবান। অপরপক্ষে জীবন যার গ্লানিময়, জন্ম তার যে বংশেই হোক না কেন সে মর্যাদাহীন হিসেবে গণ্য ।

সম্প্রসারিত ভাব : বিশ্বস্রষ্টা পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার এ বিশাল বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। সকল মানুষই আদি পিতা আদমের সন্তান। সুতরাং একজন মানুষ অন্যজন অপেক্ষা কোনোরূপ শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে না। তথাপি আমাদের বর্তমান সভ্য সমাজে আশরাফ আতরাফ তথা ভদ্র অভদ্র দুটি কথার প্রচলন রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে একই আদম সন্তান হিসেবে এটি সম্পূর্ণ অমূলক ও নিরর্থক। আমাদের সভ্য সমাজে এরূপ কৌলীন্য প্রথা মানুষের মাঝে বিষাক্ত ক্ষতের সৃষ্টি এবং সমাজবদ্ধ মানুষকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করেছে। বংশ বা গোত্র বলে প্রকৃতপক্ষে কিছুই নেই'। গোত্র বা বংশ সব মানুষেরই এক অর্থাৎ আদম গোত্র। এখানে কৌলীন্যের কিছুই নেই। উচ্চ বংশে জন্মগ্রহণই মানুষের যথার্থ পরিচয় নয়। তার সত্য পরিচয় তার কর্মের মাঝে। 

পৃথিবীতে যারা সৎকাজ করে তারাই কৌলীন্যের দাবিদার হতে পারে। আর যারা সমাজের অকল্যাণে প্রবৃত্ত থাকে, যত বড় উচ্চ বংশে অথবা বিত্তশালী বংশেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, তারা কখনো কুলীন বা সম্ভ্রান্ত হওয়ার দাবিদার হতে পারে না। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবি হযরত মুহম্মদ (স) তদানীন্তন আরব দেশের এরূপ মিথ্যা কৌলীন্য প্রথা রহিত করার নিমিত্ত তাঁর বিদায় হজ্জের সময় উপস্থিত মুসলমানদের উদ্দেশে কঠোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তাছাড়া পৃথিবীতে মহাজ্ঞানী মাত্রই মিথ্যা কৌলীন্যকে ঘৃণার চোখে দেখেছেন । সুতরাং নাম বা বংশ পরিচয় কাউকে বড় করে না। বড় করে তার কর্মে। কর্মই মানুষের আসল পরিচয় ।

মন্তব্য : মানুষের প্রকৃত কৌলীন্য বা বংশ মর্যাদা নির্ভর করে তার সৎকর্মের ওপর। সাধু ও মহৎ ব্যক্তিরা পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন আপনাপন বংশ পরিচয়ে নয়; বরং পুণ্য-কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad