‘অনু’ অর্থ পশ্চাৎ বা পরে । এগুলো প্রাতিপদিক বা বিভক্তিযুক্ত শব্দের পশ্চাতে বা পরে বসে। বাংলা ভাষায় অব্যয়সূচক এমন এই শব্দ গুলো বাক্যের মধ্যে কখনো কখনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সাথে যুক্ত হয়ে, অথবা শব্দ বিভক্তির ন্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাদেরকে অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় শব্দ বলে।
সংজ্ঞা : যে সকল অব্যয়সূচক শব্দ বা শব্দাংশ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে যুক্ত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাদেরকে অনুসর্গ বলে। যেমন- দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হইতে, থেকে, চেয়ে, বিনা, অপেক্ষা ইত্যাদি।
অনুসর্গের বৈশিষ্ট্য :
অনুসর্গের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে এর কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
১. অনুসর্গগুলো বিভক্তির পরিবর্তে বসে বিভক্তির কাজ করে ।
২. এরা বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে বসে।
৩. কারক নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়।
৪. অনুসর্গের পূর্বপদে কখনো বিভক্তি থাকে না ।
৫. কোন কোন সময় সাধু ও চলিত ভাষারীতির ক্ষেত্রে অনুসর্গের ব্যবহার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন-
সাধু রীতি | করিয়া | লাগিয়া | হইতে |
চলিত রীতি | করে | লেগে | হতে |
আরও পড়ুন : উপসর্গ কাকে বলে?কত প্রকার। উপসর্গের বৈশিষ্ট্য, কাজ, প্রয়োজনীয়তা
অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা :
বাংলা ভাষায় অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নিম্নে অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরা হল-
১. বিভক্তির ন্যায় ব্যবহার : অনুসর্গগুলো বাংলা বিভক্তির ন্যায় ব্যবহৃত হয় বিধায় এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন- গাড়ি খুলনা থেকে ছাড়লো।
২. তুলনা বুঝাতে : অভাব, তুলনা ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করতে অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়। যেমন- তুমি বিনা কে আছে আমার।
৩. বাক্য গঠনে সহায়তা : অনুসর্গগুলো বাক্য গঠনে সহায়তা করে । অনুসর্গ ছাড়া বাক্য গঠন সম্ভব নয়। যেমন- দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে?
৪. কারকের অর্থ প্রকাশে : অনুসর্গ দ্বারা কারকের অর্থ প্রকাশ হয়। যেমন- কারকের দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক।
পাঁচটি অনুসর্গের বাক্যে প্রয়োগ :
১। 'বিনা'- ব্যতীত অর্থে : তুমি বিনা আর কে আছে আমার?
২। ‘সহ’- সহযোগ অর্থে : তিনি পুত্রসহ উপস্থিত হলেন ।
৩। ‘অবধি’-পর্যন্ত অর্থে : সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করব।
৪। ‘পানে’– দিকে অর্থে : কেমন করে দুঃসাহসী চলছে উড়ে স্বর্গপানে!
৫। ‘পক্ষে’– সমকক্ষতা অর্থে : রাজার পক্ষে সবই সম্ভব।
আরও পড়ুন : উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই ,কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে-উক্তিটির তাৎপর্য
অনুসর্গের প্রকারভেদ :
অনুসর্গ প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
১. বিভক্তিসূচক অনুসর্গ এবং
২. অনুসর্গ অব্যয়।
১. বিভক্তিসূচক অনুসর্গ :
যে অনুসর্গসমূহ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে যুক্ত হয়ে প্রত্যক্ষভাবে কারক নির্ণয় করে, তাদেরকে বিভক্তিসূচক অনুসর্গ বলে । যেমন- হতে, থেকে, চেয়ে, দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, সাথে, কারণে, জন্যে ইত্যাদি বিভক্তিসূচক অনুসর্গ ।
উদাহরণ : ক. তোমা দ্বারা এ কাজ হবে না সাধন ।
খ. মামুনের চেয়ে মাসুদ অলস ।
গ. তুমি কি কারণে এখানে আসলে?
ঘ. তোমার জন্যে আমার এত কষ্ট।
ঙ. তোমার সাথে আমার আর মিল হবে না।
২. অনুসর্গ অব্যয় :
যে অনুসর্গসমূহ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে যুক্ত হয়ে বিশেষ বিশেষ বিভক্তি সূচিত করে এবং পরোক্ষভাবে কারক নির্ণয় করে, তাদেরকে অনুসর্গ অব্যয় বা কর্মপ্রবচনীয় বলে। যেমন- যথা, বিনা, অপেক্ষা, মত, উপর, বাবদ, যেন ইত্যাদি অব্যয় বা অব্যয় স্থানীয় পদ উপমা, তুলনা ও কারকাদি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ : ক. ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার মত লোক দেশে আর হবে না
খ. স্কুলের বেতন বাবদ একশত টাকা দিয়েছি।
গ. চাঁদ যেন জ্বলসানো রুটি।
ঘ. তোমা বিনা এ কাজ হবে না সাধন ।
৫. রহিম অপেক্ষা করিম ভাল ছাত্র ।
আরও পড়ুন : উচ্চারণ রীতি কাকে বলে?বাংলা উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম hsc - pdf