বিরাম চিহ্ন কাকে বলে?বিরাম চিহ্ন কয়টি ও ব্যবহারের নিয়ম:উদাহরণসহ

কোন বাক্য পড়া বা লেখার সময় মাঝে-মধ্যে থামতে হয়। এই থামার জন্য  যেসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় সেগুলোই হল যতি বা  বিরাম চিহ্ন। একে ছেদ চিহ্ন বলা হয়। বিরাম-চিহ্ন ব্যবহারের ফলে বাক্যের অর্থ বা ভাব বুঝতে সহজ হয়। বিরাম-চিহ্ন সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় ব্যবহার করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

বিরাম চিহ্নের বা যতি চিহ্নের সংজ্ঞা : 

বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বুঝানোর জন্য এবং উচ্চারণের সুবিধার্থে বাক্যের মধ্যে স্থানে স্থানে এবং ভাব অনুযায়ী বাক্যের সমাপ্তিতে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।  এগুলোকেই বিরাম চিহ্ন বা যতিচিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন বলে। যেমন- কমা(,) সেমিকোলন(;) ড্যাস(—) ইত্যাদি।

বিরাম চিহ্নের বা যতি চিহ্নের প্রকারভেদঃ 

বাংলা ভাষায় বিরাম চিহ্নের সংখ্যা অনেক। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিরাম বা ছেদ চিহ্নগুলো অধিকাংশই ইংরেজি ভাষা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের নাম ও ইংরেজিতেই রয়ে গেছে। যেমন- কমা, সেমিকোলন, ড্যাস, কোলন ড্যাস, হাইফেন ইত্যাদি । তবে কতগুলো বাংলা নামেই সুপ্রচলিত। যেমন- দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ, বিস্ময়সূচক চিহ্ন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন, লোপচিহ্ন, বন্ধনী উদ্ধরণ চিহ্ন ইত্যাদি।

আরও পড়ুন : কমা,সেমিকোলন,কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার বা ব্যবহারের নিয়ম

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিরাম চিহ্নসমূহ :

বিরামচিহ্নের নাম আকৃতি বিরতিকাল
১। কমা (Comma) (,) ১ বলতে যে সময়
২। সেমিকোলন (Semi Colon) (;) ১ বলার দ্বিগুণ সময়
৩। দাঁড়ি (Full Stop) (।) এক সেকেন্ড
৪। কোলন (Colon) (:) এক সেকেন্ড
৫। কোলন ড্যাশ (Colon Dash) (:-) এক সেকেন্ড
৬৷ ড্যাশ (Dash) (—) এক সেকেন্ড
৭। হাইফেন (Hyphen) (-) বিরতি নেই
৮। উদ্ধৃতি/কোটেশন(Inverted Commas) (“ ”) এক সেকেন্ড
৯। লোপ চিহ্ন (Apostrophe ) (') বিরতি নেই
১০। প্রশ্নবোধক চিহ্ন. (Note of Interrogation) (?) এক সেকেন্ড
১১। বিস্ময় বা ভাবসূচক চিহ্ন (Note of Exclamation) (!) এক সেকেন্ড
১২। বন্ধনী চিহ্ন- প্রথম বন্ধনী (1st) দ্বিতীয় বন্ধনী (2nd) তৃতীয় বন্ধনী (3rd)
() { } []

বিরতি নেই . বিরতি নেই বিরতি নেই
১৩। বর্জন চিহ্ন (Asterisk) (...) প্রযোজ্য নয়
১৪। বিন্দু চিহ্ন (Full stop) ( . ) প্রযোজ্য নয়
১৫। বিকল্প চিহ্ন (Alternative) (/) প্রযোজ্য নয়
১৬। সমান চিহ্ন (equal sign) (=) বিরতি নেই

বিরাম , যতি বা ছেদচিহ্নের ব্যবহার বৈচিত্র্য :

বিরামচিহ্নগুলোর মধ্যে কিছু আছে, যা বাক্যের ভেতরে ব্যবহৃত হয়; আর কিছু রয়েছে যা বাক্যের শেষে বসে।

■ বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত বিরামচিহ্ন মোট ১২টি কমা, সেমিকোলন, ড্যাশ, হাইফেন, কোলন, কোলনড্যাশ, ঊর্ধ্বকমা, বিকল্পচিহ্ন - এক বিন্দু, এক উদ্ধৃতিচিহ্ন, জোড় উদ্ধৃতিচিহ্ন।

■ বাক্যের শেষে বা পূর্বে বা পরে ব্যবহার্য বিরামচিহ্ন ৭টি— ত্রিবিন্দু, এক উদ্ধৃতিচিহ্ন, জোড় উদ্ধৃতিচিহ্ন, বিকল্পচিহ্ন, প্রথম বন্ধনী, দ্বিতীয় বন্ধনী ও তৃতীয় বন্ধনী।

■ বাক্যের পরে বসে ৪টি বিরামচিহ্ন - এক দাঁড়ি, প্রশ্নচিহ্ন, বিস্ময়চিহ্ন, ত্রিবিন্দু।

আরও পড়ুন : গরুত্বপূর্ণ কিছু বিরাম চিহ্নের ব্যবহার অনুচ্ছেদ ও প্রয়োজনীয়তা

বিরাম , যতি বা ছেদচিহ্নের ব্যবহার বা ব্যবহারের নিয়ম :

১। কমা (,) : বাক্যের মধ্যে কোথাও অল্প সময়ের জন্য থামতে হলে কমা (,) ব্যবহার করতে হয়। যথা— শাহিন, মুরাদ, ফরহাদ, জুয়েল, বিউটি, তাহের, খালেদা ও রেহানা কলেজে পড়ে।

২। সেমিকোলন (;) : কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজনে সেমিকোলন বসে। যেমন- দৃষ্টি তার অরণ্যানীর বন-বিন্যাসের দিকে নিবদ্ধ হয় না; দৃষ্টি তার আকাশের তারাকে খুঁজে বেড়ায় ।

৩। দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।): একটি বাক্যের পরিপূর্ণ সমাপ্তিতে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। যেমন : ঢাকা বাংলাদেশে রাজধানী। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। 

৪। কোলন (:) : একটি অপূর্ন বাক্যের পর আরেকটি বাক্য ব্যবহার করলে কোলন বসে। যেমন : আমি তাকে দেখলাম: সে মাঠে কাজ করছে। 

৫। কোলন ড্যাস (:-) : উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করতে হলে কোলন ড্যাস ব্যবহার হয়।  যেমন- ভাষা দুই প্রকার। যথা:- সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা ।

৬। ড্যাস (—): যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা ততোধিক বাক্যের যোগাযোগ বুঝাতে ড্যাস ব্যবহার হয়। যেমন- তুমিতো চলে যাবে আমাদের কী হবে, সে কথা কি একবারও ভেবে দেখেছমা?

৭। হাইফেন (-) : দুই বা ততোধিক পদ সমাসবদ্ধভাবে একপদীরূপে সংযোগের জন্যে পদগুলোর মধ্যে হাইফেন ব্যবহার হয়। যেমন- রাজা-রাণী, পিতা-মাতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ইত্যাদি।

৮।  কোটেশন বা উদ্ধরণ চিহ্ন (“ ”) : কারো উক্তি হুবহু প্রকাশ করতে অথবা উদ্ধৃতাংশ বুঝাতে, এ চিহ্ন ব্যবহার হয়। যেমন- নবীজী বললেন, “যে ব্যক্তি অন্যের দোষ গোপন রাখে, কাল কেয়ামতে আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন।” তিনি বললেন, “আগামী মঙ্গলবার আমি ঢাকা যাব।”

৯। লোপচিহ্ন (') : বর্ণের লোপ বু ঝাতে এ চিহ্নের ব্যবহার হয়। যেমন- দুইটি → দু'টি, উপরে → 'পরে ইত্যাদি।

১০। প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) : কোন প্রশ্ন বা কিছু জিজ্ঞেস করা হচ্ছে এরূপ বোঝাতে বাক্যের শেষে  প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। যেমন : তোমার নাম কি ?তোমার স্কুলের নাম কি ? তোমার বাবার নাম কি ?

১১। বিস্ময়সূচক চিহ্ন (!) : বাক্যে হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে হলে বিস্ময়সূচক চিহ্ন বসে। যেমন- আহা! কি চমৎকার দৃশ্য! হায় খোদা! এ কি করলে তুমি?

১২। ৰন্ধনী [{()}] : বাক্যের অন্তর্গত কোন অংশের ব্যাখ্যা করতে বন্ধনী ব্যবহার হয়। যেমন- আমার ঠাণ্ডা লাগায়, ১ জানুয়ারি থেকে ৪ জানুযারি (চারদিন) পর্যন্ত আমি মাদরাসায় আসতে পারিনি । এছাড়া এ তিনটি চিহ্ন সাধারণ গণিত শাস্ত্রে ব্যবহার করে থাকে। 

১৩।  বিন্দু চিহ্ন বা বিশ্রাম-চিহ্ন ( . ) : শব্দের সংক্ষেপণ বোঝাতে এ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।

ক. সাধারণত ইংরেজি শব্দের সংক্ষেপণে শব্দের প্রথম বর্ণের পর এ চিহ্ন বসে। যেমন : মাস্টার অব আর্টস এম. এ. এম. বি.বি.এস; বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস, বি.সি.এস ।

খ. সংখ্যার ধারাবাহিকতা বোঝাতে সংখ্যার পর কমা বা পাঁড়ির পরিবর্তে ইংরেজি কায়দায় এ চিহ্ন বসে। যেমন : সমাজের দুই শত্রু : এক. দারিদ্রা এবং দুই. অশিক্ষা।

১৪। বর্জন চিহ্ন (...) : দীর্ঘ বাক্যের মধ্যে কিছু অংশ বাদ দেওয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

 যেমন : “আমি কিছু বলতে চেয়েছিলাম... কিন্তু সময় পাইনি।

"তুমি কি... মানে, এটা কি সত্যি?"

আমরা... বাড়ি ফিরলাম।

১৫। বিকল্প চিহ্ন (/) : একটির বিকল্পে অন্য আরেকটিও হতে পারে সেটা বোঝানোর জন্যই বিকল্প চিহ্ন (/) ব্যবহৃত হয়। যেমন :

চিঠিতে সম্বোধনের বেলায় : বা জনাব/জনাবা ব্যবহার হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকে : আবেদন পত্রের সঙ্গে ১০০ টাকার মানি অর্ডার/ পোস্টাল অর্ডার /ব্যাংক ড্রাফট পাঠাতে হবে। 

কবিতার ছত্র বিভাগ বোঝানোর জন্য :ছিপখান তিন দাঁড় / তিন জন মাল্লা।

মামলার রায়ে: আসামির তিন বছরের জেল /5 লাখ টাকা জরিমানা। 

১৬। সমান চিহ্ন (=) : সমানবাচক বা সমস্তবাচক বোঝাতে সমান চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন : নর ও নারী = নরনারী, পিতা ও মাতা =পিতামাতা।

FAQs

১। বিরাম চিহ্নের অপর নাম কি ?

উত্তর: যতিচিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন। 

২। বিরাম চিহ্নের প্রবর্তক কে ?

উত্তর: বিরাম-চিহ্ন সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় ব্যবহার করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

৩। বিরাম চিহ্ন ইংরেজি কী ?

উত্তর: Punctuation Marks .

৪। কোন বিরাম চিহ্নের বিরতিকাল নেই ?

উত্তর: হাইফেন (-), যার কোনো বিরতিকাল নেই। এটি মূলত শব্দ বা বাক্যাংশের মধ্যে সংযোগস্থাপন বা ভাঙার কাজে ব্যবহৃত হয়।

৫। বাক্যের শেষে ব্যবহৃত বিরাম চিহ্ন কয়টি ?

উত্তর: বাক্যের পরে বসে ৪টি বিরামচিহ্ন - এক দাঁড়ি, প্রশ্নচিহ্ন, বিস্ময়চিহ্ন, ত্রিবিন্দু।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad