ধ্বনি পরিবর্তন কাকে বলে? কত প্রকার উদাহরণ সহ বিস্তারিত

ভাষা এবং ধ্বনি পরস্পর নিবিড়ভাবে জড়িত। একটি ছাড়া অন্যটি কল্পনাও করা যায় না। ভাষার মতো ধ্বনিও পরিবর্তিত হয়। বিশেষ করে দ্রুত উচ্চারণের সময় এটি ঘটে থাকে। এ ছাড়া অন্য অনেকভাবেও ধ্বনির পরিবর্তন সাধিত হয়। তাই ব্যাকরণে ধ্বনি পরিবর্তনের আলোচনা অপরিহার্য।

সংজ্ঞা : উচ্চারণের সময় সহজীকরণের প্রবণতায় শব্দের মূল ধ্বনির যে সব পরিবর্তন ঘটে তাকে ধ্বনি পরিবর্তন বলা হয় ।

ধ্বনি পরিবর্তন এর প্রকারভেদ :

ধ্বনি পরিবর্তন প্রধানত ৩ প্রকার। যথা-

১. স্বরাগম বা ধন্যাগম। 

২. স্বরলোপ বা ধ্বনিলোপ বা সম্প্রকর্ষ। 

৩. ধ্বনির রূপান্তর।  

স্বরাগম বা ধন্যাগম :

সংজ্ঞা : উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদি, মধ্য এবং অন্তে অতিরিক্ত স্বরধ্বনির আগমন ঘটতে পারে। স্বরের এ আগমনকে স্বরাগম বলে। 

স্বরাগম তিন প্রকার। যেমন :

ক. আদি স্বরাগম : শব্দের শুরুতে যখন স্বরের আগমন ঘটে তখন সে স্বরাগমকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন : স্পর্ধা > আস্পর্ধা ; স্টেশন > ইস্টিশন; স্ত্রী > ইস্ত্রী ইত্যাদি।

খ. মধ্য স্বরাগম : উচ্চারণের সুবিধার জন্য যখন সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝে স্বরধ্বনি আগমন করে সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিকে বিযুক্ত করে তখন তাকে মধ্য স্বরাগম বলে। মধ্য স্বরাগমকে বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি নামেও অভিহিত করা হয়। যেমন :

১. অ-স্বরের—আগম

রত্ন > রতন; স্বপ্ন > স্বপন; হর্ষ > হরষ।

২. ই-স্বরের আগম :

স্নেহ > সিনেহ; দর্শন > দরিশন; ক্লেশ > কিলেশ; ফিল্ম > ফিলিম ইত্যাদি। 

৩. উ-স্বরের আগম :

ভূ > ভুরু; মুক্তা > মুকুতা ইত্যাদি ।

৪. এ-ধ্বনির আগম :

গ্রাম > গেরাম; গ্লাস > গেলাস ইত্যাদি।

গ. অন্ত্য স্বরাগম : উচ্চারণের সুবিধার জন্য শব্দের শেষে যখন অতিরিক্ত স্বরধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে অন্ত্য স্বরাগম বলে। যেমন : বেঞ্চ > বেঞ্চি; দিশ্ > দিশি ইত্যাদি ।

আরও পড়ুন : অপিনিহিতি,অভিশ্রুতি,সমীভবন ও স্বরসঙ্গতি কাকে বলে?উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা

স্বরলোপ বা ধ্বনিলোপ বা সম্প্রকর্ষ :

সংজ্ঞা : দ্রুত উচ্চারণের ফলে অনেক সময় শব্দের আদি, মধ্য অথবা অভ্যস্বর ধ্বনির লোপ হয়, এ প্রতিক্রিয়াকে স্বরলোপ বা ধ্বনিলোপ বা সম্প্রকর্ষ বলা হয়। 

স্বরলোপ তিন প্রকার। যেমন :

ক. আদি স্বরলোপ— অলাবু > লাবু > লাউ।

খ. মধ্য স্বরলোপ— সুবর্ণ > স্বর্ণ।

গ. অন্ত্য স্বরলোপ— সন্ধ্যা > সঞ্ঝা > সাঁঝ ইত্যাদি।

ব্যঞ্জনলোপ : সমোচ্চারণের দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি পাশাপাশি থাকলে একটি লোপ পায়। এরূপ লোপকে ব্যঞ্জন লোপ বা ব্যঞ্জনচ্যুতি বলে। যেমন : বড় দাদা > বড়দা ; বড় দিদি > বড়দি ইত্যাদি।

র-কার লোপ : কথ্য বাংলায় অনেক সময় র-কার লুপ্ত হয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়। যেমন : তর্ক > তক্ক; গৃহিণী > গিন্নী ইত্যাদি।

হ-কার লোপ : কথ্য বাংলায় র-কারের মতো অনেক সময় দুটি স্বরধ্বনির মাঝামাঝি হ-কারের লোপ হয়। যেমন: কহে > কয়; বেহাই > বেয়াই; চাহে > চায় ইত্যাদি।

আরও পড়ুন : বর্ণ, স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কাকে বলে?কত প্রকার।সংজ্ঞা সহ উদাহরণ

ধ্বনির রূপান্তর :

সংজ্ঞা : যখন একটি ধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে অন্য ধ্বনির রূপ লাভ করে তখন তাকে ধ্বনির রূপান্তর বলা হয়। 

ধ্বনির রূপান্তর সাধারণত দুই প্রকার :

১. স্বরধ্বনির রূপান্তর। 

২. ব্যঞ্জন ধ্বনির রূপান্তর। 

স্বরধ্বনির রূপান্তর :

সংজ্ঞা : শব্দ মধ্যস্থ স্বরধ্বনিগুলি যদি পরস্পরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়, তাহলে সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় স্বরধ্বনির রূপান্তর।

স্বরধ্বনির রূপান্তরকে আবার কয়েকভাবে ভাগ করা যায়। যথা :

১। স্বর সংগতি। 

২। স্বরের অসংগতি। 

৩। অভিশ্রুতি। 

৪। দীর্ঘীভবন

ব্যঞ্জনধ্বনির রূপান্তর :

সংজ্ঞা : শব্দ মধ্যস্থ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি যদি পরস্পরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়, তাহলে সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ব্যঞ্জনধ্বনির রূপান্তর।

ব্যঞ্জনধ্বনির রূপান্তরকে আবার কয়েকভাবে ভাগ করা যায়। যথা :

১। সমীভবন। 

২। নাসিক্যভবন। 

৩। বিষমীভবন 

৪। উষ্মীভবন। 

৫। রকারীভবন। 

৬। অল্পপ্রাণীভবন। 

৭। ধ্বনি সংকোচন। 

 ৮। মূর্ধন্যীভবন। 

৯। ধ্বনি প্রসারণ। 

১০। ঘোষীভবন। 

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad