রচনা : স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞানী (২টি)

স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রচনা - ১

সূচনা : 

বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু সবচেয়ে খ্যাতিমান বাঙালিদের অন্যতম। তিনি তার সময়ে বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীদের একজন ছিলেন। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে জগদীশচন্দ্র বসুর মৌলিক কৃতিত্ব রয়েছে। 

জীবনী : 

জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে পৈতৃক নিবাস তৎকালীন বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) রাঢ়িখাল গ্রামে ।

জগদীশচন্দ্রের লেখাপড়ার সূচনা হয় বাড়িতে । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর পার হয়ে কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে ১৮৭৮ সালে এফ. এ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। 

কৃতিত্বের সাথে এফ. এ পাশ করে ১৮৮০ সালে বিজ্ঞান শাখায় ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে ডাক্তারি পড়ার জন্য বিদেশে যান। ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাশ করে ১৮৮৫ সালে কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি। এর পর পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগ দেন ।

আরও পড়ুন :- মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী - বাংলা রচনা 

আবিষ্কার, অবদান ও স্বীকৃতি :  

বিজ্ঞানী হিসেবে জগদীশচন্দ্র বসুর বড় আবিষ্কার হলো গাছের অনুভূতি থাকার তত্ত্বটি। তিনি যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেন যে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গাছের শরীরেও আনন্দ-বেদনার মতো বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। এ ছাড়া তিনি ক্ষুদ্র বেতার তরঙ্গ আবিষ্কার করেন, যা আজকের রাডার যন্ত্রের ভিত্তিরূপে বিবেচিত হয়। 

রেডিও বা বেতার যন্ত্রের আবিষ্কারের গবেষণায়ও অনেকদূর সাফল্য পেয়েছিলেন জগদীশচন্দ্র। মহাবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন— 'জগদীশচন্দ্র বসুর আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতের একটি বড় বিস্ময়।

লেখালেখি ও সম্মাননা : 

স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞান বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ ও বই লিখেছেন। ছোটদের জন্য তিনি লিখেছেন হাসির কল্পকাহিনি 'পলাতক তুফান'। তাঁর আরেকটি বই হচ্ছে ‘অদৃশ্য আলোক’। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার জগদীশচন্দ্র বসুকে 'নাইট' উপাধিতে (স্যার) ভূষিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩৫ সালে তাঁকে ডিএসসি' ডিগ্রিতে ভূষিত করে ।

মৃত্যু : 

১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর ভারতের ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে মৃত্যুবরণ করেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু।

আরও পড়ুন :- মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী - বাংলা রচনা 

উপসংহার : 

স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বাঙালির গর্ব। বাংলাদেশের মানুষ তথা বিশ্বের বিজ্ঞান সম্প্রদায় তাঁর অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে মনে রাখবে।

স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রচনা - ২

ভূমিক :

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তি নিজেদের কর্মকুশলতা ও সৃজনশীলতা দিয়ে বাঙালি জাতিকে মর্যাদার শিখরে অধিষ্ঠিত করেছেন। রেখেছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব স্যার জগদীশচন্দ্র বসু। 

জন্ম ও পরিচয় :

জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে। বাবার চাকরি সূত্রে ময়মনসিংহে তার জন্ম ।

শিক্ষাজীবন :

জগদীশচন্দ্র বসুর পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়েছিল বাড়িতেই। তারপর প্রাথমিক স্কুলে এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে মাধ্যমিক ধাপ পেরিয়ে কলকাতায় গমণ করেন। সেখানে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে ১৮৭৪ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কৃতিত্বের ধারাবাহিকতায় তিনি ১৮৭৮ সালে এফ.এ এবং ১৮৮০ সালে বিজ্ঞান শাখায় বি.এ পাস করে বিলেতে যান ডাক্তারি পড়তে।

আরও পড়ুন :- মহীয়সী রোকেয়া - রচনা Class 3, 4, 5

কর্মজীবন :

জগদীশচন্দ্র বসু বিলেতে এক বছর ডাক্তারি পড়ার পর সেখানকার এক অধ্যাপকের পরামর্শে ১৮৮১ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ‘ট্রাইপাস' পাস করার পর লন্ডন থেকে বি.এস.সি পাস করেন। ১৮৮৫ সালে দেশে ফিরে এসে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দেন। 

তিনি অস্থায়ীভাবে চাকরি করছিলেন বলে তাঁর বেতন একভাগ কেটে নেয়া হতো। এর প্রতিবাদে তিনি দীর্ঘ তিন বছর বেতন না নিয়ে কর্তব্য পালন করেন। শেষে ইংরেজ সরকার তাঁকে স্বীকৃতি দিয়ে সকল বকেয়া পরিশোধ করে চাকরিতে স্থায়ী করে।

গবেষণা ও আবিষ্কার :

তিনি নানা বিষয়ে গবেষণা করেন, তার মধ্যে ‘গাছেরও প্রাণ আছে' এই সত্য প্রমাণ করে বেশি পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র ছিল ‘বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ'। তাঁর আবিষ্কারের মধ্যে গাছ বেড়ে ওঠা মাপার যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ এবং গাছের দেহের উত্তেজনার বেগ মাপার সমতল তরুলিপি যন্ত্র অন্যতম। 

আরও পড়ুন :- বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল - রচনা

এছাড়া তিনি খ্যাতিমান হয়েছেন অতি ক্ষুদ্র বেতার তরঙ্গ/মাইক্রোওয়েভ প্রয়োগ আবিষ্কার করে। ১৮৯৫ সালে তিনি এই তরঙ্গ সৃষ্টি এবং তা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রেরণে সফলতা অর্জন করেন।

উপাধি ও স্বীকৃতি :

১৯১৫ সালে ব্রিটিশ ভারত সরকার জগদীশচন্দ্র বসুকে ‘নাইট' উপাধি দেয়। তাই তাঁর নাম হয় স্যার জগদীশচন্দ্র বসু। ১৯১৬ সালে তিনি ‘জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞান মন্দির' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৭ সালে ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা তাঁকে গ্যালিলিওর সমকক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৩৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.এস.সি ডিগ্রি প্রদান করে।

উপসংহার :

জগদীশচন্দ্র বসু ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর গিরিডিতে মারা যান। স্যার জগদীশচন্দ্র বসু একজন সফল বিজ্ঞানী। তিনি বাঙালির গৌরব ও অহংকার। ছোটবেলার সেই ভাবুক ছেলেটি বড় হয়ে বাঙালির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন।

আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad