পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য - রচনা [ Class - 6, 7, 8, 9 ,10 ] - PDF

ভূমিকা : 

পিতামাতাই পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় আপনজন। তাদের মাধ্যমেই আমরা পৃথিবীতে এসেছি। তাঁদের ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না। তাই তাঁদের সন্তুষ্টি বিধান করা আমাদের একটি বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সন্তানের জন্ম : 

মাতাপিতার জন্যই আজ আমরা দুনিয়াতে আসতে পেরেছি। মাতা অতি কষ্টে দশ মাস গর্ভে ধারণ করে নিজের শরীরের রক্তবিন্দু দিয়ে দিনে দিনে সন্তানকে বড় করে তোলেন। মাতৃগর্ভ সন্তানের প্রথম আশ্রয়স্থল। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও এ মাটির ধরায় মাতৃক্রোড়ই সন্তানের প্রধান আশ্রয়। মাতৃস্তন্য পান করে আমরা শৈশবে বেঁচে থাকি।

সন্তানের শিক্ষা : 

একটু বড় হলেই মাতাপিতা সন্তানের শিক্ষার জন্য সচেষ্ট হন। সাধ্যমতো সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে তাঁরা বিন্দুমাত্র ত্রুটি করেন না। সন্তান বিপথগামী হলে মাতাপিতা তাকে সুপথে পরিচালিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। বস্তুত আমরা আমাদের জন্ম, শিক্ষা-দীক্ষা সবকিছুর জন্যই মাতাপিতার নিকট ঋণী ।

সন্তানের প্রতি স্নেহ : 

মাতাপিতার স্নেহের তুলনা বিরল। আমরা মাতাপিতার নিকট থেকে যে স্নেহ লাভ করি, তা স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বর্গীয়। দুনিয়াতে আর কারো নিকট থেকে এরূপ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আশা করা যায় না। সন্তানের অসুখ-বিসুখ হলে মাতাপিতার উদ্বেগের সীমা থাকে না। তাঁরা আহার-নিদ্রা ভুলে দিনরাত সন্তানের শিয়রে বসে থাকেন। কেমন করে সন্তান আরোগ্য লাভ করবে, সবসময় সে চিন্তা ও চেষ্টা করেন। সন্তানের রোগমুক্তির জন্য যথাসর্বস্ব ব্যয় করতেও তাঁরা দ্বিধাবোধ করেন না।

আরও পড়ুন :- মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য - রচনা ২০ পয়েন্ট

মাতাপিতার প্রতি বাধ্য থাকা : 

মানুষের জন্য মাতাপিতার তুল্য শুভাকাঙ্ক্ষী দুনিয়াতে আর কেউ নেই। তাই সন্তানের প্রথম কর্তব্য হলো মাতাপিতার আদেশ পালন করা, তাঁদের বাধ্যও অনুগত থাকা। তাঁরা যা করতে আদেশ করবেন, তা-ই করতে চেষ্টা করা এবং যা নিষেধ করবেন, তা কখনো না করা। মাতাপিতার কথামতো চললে সন্তানেরও মঙ্গল হবে, তাঁরাও সন্তুষ্ট হবেন।

সুশিক্ষা লাভ করা : 

সন্তানের একটি বিশেষ কর্তব্য সুশিক্ষা লাভ করে মানুষ হতে চেষ্টা করা। সন্তান যদি সুশিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, সুনামের অধিকারী হয়, তবে মাতাপিতা সর্বাপেক্ষা অধিক সন্তুষ্ট হন। সন্তান যদি চরিত্রবান ও জ্ঞানী গুণী হতে পারে, তবেই মাতাপিতা সন্তুষ্ট। প্রকৃত মানুষ হয়ে মাতাপিতার মুখোজ্জ্বল ও তাঁদের গৌরব বৃদ্ধি করা সন্তানের প্রধান কর্তব্য।

মাতাপিতার সেবা যত্ন করা : 

সন্তানের আরেকটি কর্তব্য হলো মাতাপিতার সেবা শুশ্রুষা করা। তাঁরা অসুস্থ হলে চিকিৎসার সুব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের সেবা যত্নে বিন্দুমাত্র ত্রুটি যাতে না ঘটে, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তাঁরা কোনোরকমে নিজেকে উপেক্ষিত মনে না করেন। বৃদ্ধ মাতাপিতার সর্বপ্রকার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা প্রত্যেক সন্তানের অবশ্য কর্তব্য

ধর্মীয় নির্দেশ :

প্রত্যেক ধর্মেই মাতাপিতাকে সম্মান এবং তাঁদের সন্তুষ্টি বিধান করতে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ভক্তি শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে আল্লাহর পরেই মাতাপিতার স্থান উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র হাদীসে বলা হয়েছে “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”

আদব ও সম্মান করা : 

পিতামাতার মান-মর্যাদার প্রতি সম্পূর্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাঁদের সাথে নরম স্বরে কথা বলতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বৃদ্ধ বয়সে তাঁরা অহেতুক বিরক্ত করতে পারেন- সে অবস্থায় হাসিমুখে তাঁদের সেই আচরণ সইতে হবে। এমন কথা উচ্চারণ করা যাবে না যা তাঁদের সম্মানের পরিপন্থী হয়। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ-
“তুমি তাদের প্রতি উহঃ শব্দটিও বলো না। আর তাঁদের তিরস্কার করো না; বরং তাঁদের সাথে অতি সম্মানের সাথে কথা বল।” 

মরণোত্তর কর্তব্য : 

১. ক্ষমা চাওয়া ও দোয়া করা : মাতাপিতা বৃদ্ধ বয়সে অসহায় ও দুর্বল অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরে আল্লাহর দরবারে তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দোয়া করতে হবে এই বলে-
“হে প্রভু! তাঁদের ওপর রহম করুন। যেমন শিশুকালে তাঁরা আমাকে রহমত ও অপত্য স্নেহ দিয়ে লালনপালন করেছিলেন।”

২. ওয়াদা ওসিয়ত ও ঋণ আদায় করা : মাতাপিতার মৃত্যুর পর তাঁদের দাফন কাফনের পর তাঁদের ওয়াদা–ওসিয়ত এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করা সন্তানের কর্তব্য।

৩. পিতামাতার আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে উত্তম ব্যবহার : 
পিতামাতার অবর্তমানে পিতামাতার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করাও সন্তানের কর্তব্য।

উপসংহার : 

মাতাপিতার মতো শুভাকাঙ্ক্ষী পৃথিবীতে আর কেউ নেই। যে এতিম, পিতৃমাতৃহীন একমাত্র সেই বোঝে মা বাবার ভালোবাসা, স্নেহ-মমতার শূন্যতা। যার মাতাপিতা দীর্ঘজীবন লাভ করে সে পরম সৌভাগ্যবান। তাই আমাদের উচিত মাতাপিতার সেবা করা, তাদের অনুগত থাকা ।


Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad