সংজ্ঞা : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটিরই অর্থ না বুঝিয়ে সমস্তপদে অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তু পদার্থকে বুঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
(toc) Table Of Contens
বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- নদী মাতা যার = নদীমাতৃক
- স্ত্রীর সাথে বর্তমান = সন্ত্ৰীক
- দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যার = দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
- যুবতী জায়া যার = যুবজানি
- মেঘের মত নাদ করে যে = মেঘনাদ ।
বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণিবিভাগ :
বহুব্রীহি সমাস কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন :
১। সমানাধিকরণ বহুব্রীহি :
সংজ্ঞা : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ বিশেষণ এবং পরপদ বিশেষ্য হয়, তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে।
সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- পীত অম্বর যার = পীতাম্বর
- ছন্ন মতি যার = মতিচ্ছন্ন
- দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যার = দৃঢ় প্রতিজ্ঞ
- কৃত অঞ্জলি যৎকৃতক = কৃতাঞ্জলি
- গৌর অঙ্গ যার = গৌরাঙ্গ
- দশ আনন যার = দশানন
- হত ভাগ্য যার = হতভাগা
- খোশ মেজাজ যার = খোশমেজাজ
- সুন্দর শ্রী যার = সুশ্রী
- নত হয়েছে জানু যার = নতজানু
আরও পড়ুন : কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?কত প্রকার।প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞা সহ উদাহরণ
২। ব্যধিকরণ বহুব্রীহি :
সংজ্ঞা : পূর্ব পদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয় তবে সে বহুব্রীহি সমাসকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। এই সমাসে সাধারণত উভয়পদে পৃথক বিভক্তি থাকে।
ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- ধর্মে প্রাণ যার = ধর্মপ্রাণ
- নদী মাতা যার = নদীমাতৃক
- আশীতে বিষ যার = আশীবিষ
- পাপে মতি যার = পাপমতি
- ধর্মে মতি যার = ধর্মমতি
- বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি
- পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ
- বজ্র পাণিতে যার = বজ্রপাণি
ব্যতিক্রম : পরপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন :
- ছা পোষে যে = ছা-পোষা
- বোঁটা খসেছে যার = বোঁটাখসা
- পা চাটে যে = পা-চাটা
- ধামা ধরে যে = ধামাধরা
- পাতা ছেড়া যার = পাতাছেড়া
- পাতা চাটা যার = পাতাচাটা
৩। ব্যতিহার বহুব্রীহি :
সংজ্ঞা : একই শব্দের দ্বিরুক্তিতে যে বহুব্রীতি সমাস হয় তাকে ব্যতিহার বহুব্রীতি সমাস বলে। এ সমাসে পূর্বপদে ‘আ’এবং পরপদে ‘ই’ যোগ হয়।
ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- দন্তে দন্তে যে যুদ্ধ = দম্ভাদন্তি
- কানে কানে যে কথা = কানাকানি
- হাতে হাতে যে লড়াই = হাতাহাতি
- বকায় বকায় যে বাক যুদ্ধ = বকাবকি
- গলায় গলায় যে মিলন = গলাগলি
- লাঠিতে লাঠিতে যে মারামারি = লাঠালাঠি
- বলায় বলায় যে কথা = বলাবলি
- কোলে কোলে যে মিলন = কোলাকুলি
আরও পড়ুন : তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ বিস্তারিত
৪। মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি :
মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- মৃগের নয়নের ন্যায় নয়ন যার = মৃগনয়না
- চন্দ্রের ন্যায় বদন যে নারীর = চন্দ্রবদনা
- মুলার ন্যায় দাঁত আছে যার = মুলাদাঁতী।
- বিম্বের ন্যায় রক্তিম অধর যার- বিম্বধরা
- স্বর্ণের মতো আভা যার = স্বর্ণাভ
৫। নঞ বহুব্রীহি :
নঞ বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- ন (নাই) সীমা যার = অসীম
- ন (নাই) জ্ঞান যার - অজ্ঞান
- বে (নাই) চাল যার- বেচাল
- নির (নাই) ভেজাল যাতে = নির্ভেজাল।
- অ (নাই) আদি যার = অনাদি
- নি (নাই) ভুল যার= নির্ভুল
- নি (নাই) ভয় যার - নির্ভীক
- বে (নাই) হুঁশ যার = বেহুঁশ
- বি (গত হয়েছে) পত্নী যার = বিপত্নীক
- অ (নাই) অন্ত যার = অনন্ত
- বে (নাই) ইমান যার = বেইমান
- নির ( নাই) দোষ যার =নির্দোষ
৬। অলুক বহুব্রীহি :
অলুক বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- ছড়ি হাতে যার= ছড়ি-হাতে
- গলায় গামছা যার = গলায়-গামছা
- জুতা পায়ে যার = জুতা-পায়ে
- গায়ে হলুদ দেয় যে অনুষ্ঠানে = গায়েহলুদ
- মাথায় পাগড়ি যার = মাথায় পাগড়ি
- হাতে খড়ি দেয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি
- হাতে বেড়ি যার = হাতে-বেড়ি
- কানে খাটো যে = কানে-খাটো
৭। সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি :
সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- দশ আনন যার = দশানন
- তিন পায়া যার = তেপায়া
- চার হাত পরিমাণ = চারহাতি
- পঞ্চ আনন যার = পঞ্চানন
- সে (তিন) তার যে যন্ত্রের = সেতার
- চৌ (চার) চালা যার = চৌচালা।
- দশ গজ পরিমাণ যার = দশগজী
- দুই নল যার = দুনালা
৮। প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি :
প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- এক দিকে চোখ যার = একচোখা
- নি (নাই) খরচ যার = নিখরচে
- দুই দিকে মন যার = দোমনা
- ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখো
- দুই দিকে টান যার = দোটানা।
- দুই তলা যার = দোতলা।
৯। সহার্থক বহুব্রীহি :
সহার্থক বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- পুত্রের সহিত বর্তমান = সপুত্ৰক
- স্ত্রীর সহিত বর্তমান = সস্ত্রীক
- অর্থের সঙ্গে বর্তমান = সার্থক
- বান্ধবের সহিত বৰ্তমান = সবান্ধব
- বাকে (কথা) সঙ্গে বর্তমান = সবাক
- সমান বা একই পতি যার = সপত্নী
১০। নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস :
নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
- জীবিত থেকেও মৃত = জীবনৃত
- দুদিকে অপ যার = দ্বীপ
- নরাকারের যে পশু = নরপশু
- পণ্ডিত হয়েও যে মুর্খ = পণ্ডিতমূর্খ।