সন্ধি শব্দের অর্থ - মিলন। বাংলা ব্যাকরণে পাশাপাশি দুটি বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলা হয়। আর সমাস শব্দের অর্থ- সংক্ষেপণ। পরস্পর অর্থ সঙ্গতিবিশিষ্ট অন্বয়যুক্ত দুই বা বহু পদের এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে।
সমাস নির্ণয়ের উপায় :
সমাস বাংলা ব্যাকরণের একটি অতি গুরত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। পদের অর্থের দিক বিচার করেই সমাসের নামকরণ করতে হয়। তাই সমাস নির্ণয়ে কতকগুলো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয় । যেমন-
১। সর্বপ্রথম সমাসবদ্ধ পদ বা সমস্ত পদের অর্থ জানতে হবে।
২। কোন কোন পদের মিলনে সমস্ত পদটি গঠিত হয়েছে তা বুঝতে হবে।
৩। সমস্ত পদের কোনটি পূর্বপদ এবং কোনটি পরপদ তা ঠিক করতে হবে।
৪। সমস্ত পদের অর্থ দ্বারা কাকে বুঝাচ্ছে (পূর্বপদ, পরপদ বা উভয় পদ কিংবা এই উভয়পদ না বুঝিয়ে তৃতীয় কোন কিছুকে বুঝাচ্ছে) তা নির্ধারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন : সমাস কি? সমাস কাকে বলে ও কত প্রকার কি কি বিস্তারিত
৫। ক. যদি মনে হয় পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে তখন আবার দেখতে হবে পূর্বপদটি কোন অব্যয় পদ কিনা। যদি অব্যয় পদ থাকে তবে তা পূর্বপদ প্রধান সমাস অর্থাৎ অব্যয়ীভাব সমাস । কেবল অব্যয় পদ দেখেই অব্যয়ীভাব সমাস বলা যাবে না । যদি পূর্বপদ অর্থাৎ অব্যয়ের অর্থই সমস্ত পদে প্রাধান্য না পায় ।
খ. অপরদিকে সমস্ত পদটির অর্থ পরপদ প্রধান হলে তা পরপদ প্রধান সমাস হবে।
গ. যদি বিভক্তির চিহ্ন দেখা যায় তবে যে যে বিভক্তির চিহ্ন থাকবে সেই সেই তৎপুরুষের নামকরণ করা যাবে। যদি পরপদে কৃদন্ত পদ দেখা যায় এবং পূর্বপদটি উপপদ হয় তবে তাকে নিঃসন্দেহে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলা যাবে।
ঘ. পরপদ প্রধান সমাসের পূর্বপদটি যদি সংখ্যাবাচক বিশেষণ পদ হয়ে থাকে তবে তা দ্বিগু সমাস হবে। এছাড়া পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ দেখেই দ্বিগু সমাস বলা চলবে না। কারণ, সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাসেরও প্রথমে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকে, তবে তা অন্যপদ প্রধান। অর্থাৎ
পূর্বপদে সংখ্যা + পরপদ প্রধান = দ্বিগু সমাস। পূর্বপদে সংখ্যা + অন্যপদ প্রধান = সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।
যদি পূর্বপদ বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন হয় ও উত্তরপদ বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন হয় এবং এই দুই পদের মিলনে একটি পদ গঠিত হয়েও যদি উত্তরপদের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হলে, তা হবে কর্মধারয় সমাস ।
৬। সমস্ত পদের অর্থে পূর্বপদ ও পরপদ উভয় পদের অর্থই বিদ্যমান থাকলে বা প্রাধান্য পেলে তা হবে দ্বন্দ্ব সমাস ।
৭। সমস্ত পদটির অর্থ পূর্বপদ বা পরপদ কোনটির অর্থকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্য তৃতীয় পদকে বুঝলে তা হবে বহুব্রীহি সমাস ।
সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য :
সন্ধি | সমাস |
---|---|
১। পাশাপাশি দু’বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে । | ১। পরস্পর অর্থসঙ্গতিবিশিষ্ট দুই বা বহুপদের এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে । |
২। সন্ধিতে সন্নিহিত দু'বর্ণের মিলন ঘটে। | ২। সমাসে পরস্পর অর্থসঙ্গতিবিশিষ্ট একাধিক পদের মিলন ঘটে। |
৩। সন্ধি শব্দকে সংক্ষেপ করে। | ৩। সমাস বাক্যকে সংক্ষেপ করে। |
৪। সন্ধি উচ্চারণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে । | ৪। সমাস অর্থের প্রতি গুরুত্বারোপ করে। |
৫। সন্ধি শব্দের অর্থ- মিলন। | ৫। সমাস শব্দের অর্থ- সংক্ষেপণ । |
৬। সন্ধিতে বর্ণ লোপ পায় ৷ | ৬। সমাসে পদ ও বিভক্তি লোপ পায়। |
৭। সন্ধি প্ৰধানত দু'প্রকার । | ৭। সমাস প্রধানত ছয় প্রকার । |
৮। সন্ধিতে সূত্রের প্রয়োজন হয় । | ৮। সমাসে ব্যাসবাক্যের প্রয়োজন হয় । |
৯। সন্ধিতে দু’বর্ণের মাঝে যোগ চিহ্ন (+) দিতে হয়। | ৯। সমাসে দুই পদের মাঝে সাধারণত অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়। |
১০। সন্ধি শব্দের কাঠিন্য দূর করে সহজ ও প্রাঞ্জল উচ্চারণযোগ্য করে তোলে । | ১০। সমাস বাক্যকে সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর ও সাবলীল করে তোলে । |
উদাহরণ : সু + আগত = স্বাগত নব + অন্ন = নবান্ন | উদাহরণ : মহান যে নবী = মহানবী, শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী । |