যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : ব্যাধি হলো গতিময় জীবনে বাধা সৃষ্টি করা এবং জীবন প্রদীপ নিভে দেয়ার মত রোগ বিশেষ । মানুষ সামাজিক জীব । এই সমাজকে সুস্থ, সুন্দর ও যথাযথভাবে পরিচালনার জন্যে বহুদিন ধরে সমাজে বিভিন্ন প্রথা প্রচলিত রয়েছে। এসব সামাজিক প্রথার কোনটি জনহিতকর আবার কোনটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর এই ক্ষতিকর প্রথাগুলোই সামাজিক ব্যাধিরূপে চিহ্নিত।
সম্প্রসারিত ভাব : আমাদের সমাজে যৌতুক প্রথা তেমনি একটি সামাজিক ব্যাধিরূপে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যৌতুক কথাটির প্রকৃত অর্থ হলো উপঢৌকন বা উপহার। যা কনে পক্ষ থেকে বরপক্ষকে প্রদান করা হয়। এসব উপঢৌকনের মধ্যে অর্থ, স্বর্ণ অলঙ্কার, বিলাস সামগ্রী এমন কি চাকরিও থাকতে পারে । যৌতুক প্রথাটি প্রথমে ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ তার আদুরী কন্যার সুখের জন্যে বর পক্ষকে খুশি করা এবং নিজ আভিজাত্য জাহির করার জন্যে এরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। যা অনেকটা বাজারে পণ্য সামগ্রী কেনাবেচার মতই। বাজারে অনেক পণ্যই বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করা হয়। এসব পণ্যের মধ্যে ক্রেতার যেটি পছন্দনীয় সেটি অনেক বেশি মূল্য দিয়ে হলেও কিনে নেয় । তেমনি আমাদের সমাজের বিত্তবান মানুষেরা কোন ভাল প্রতিভাবন ও সম্ভাবনাময় মধ্যবিত্ত অথবা দরিদ্র পরিবারের ছেলে দেখলেই অর্থের বেড়াজালে ফেলে নিজ কন্যার জন্য কিনে নেন। বিত্তবানদের এমন খেলাই আজ সমাজ জীবনের জন্যে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌতুক আজ যেন বর পক্ষের একটা দাবিতে পরিণত হয়েছে। অথচ আমাদের সমাজে অর্থ- সম্পদশালী পরিবারের চেয়ে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই বেশি।
মন্তব্য : মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারসহ সকলের পক্ষে যৌতুক এক মারাত্মক অভিশাপ।
আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মূর্খ বন্ধুর চেয়ে জ্ঞানী শত্রু সবচেয়ে ভালো
এই ভাব সম্প্রসারণটি অন্য আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো
মূলভাব : আমাদের সমাজে যৌতুকপ্রথা এক কলঙ্কজনক অভিশাপ। এই ব্যাধি সমাজে প্রবেশ করে ধ্বংস ও নষ্ট করছে অগণিত নারীর জীবন।
সম্প্রসারিত ভাব : যৌতুকপ্রথা বর্তমানে বাংলাদেশে এক মারাত্মক ক্ষতের আকার ধারণ করছে। মানুষের মধ্যে লালসাবোধ জাগ্রত হলেই যৌতুকপ্রথার সৃষ্টি হয়। অর্থনৈতিক প্রভেদ, শিক্ষাগত অযোগ্যতা এই প্রয়াসকে ত্বরান্বিত করে। অভিভাবকরা উত্তম পাত্রের হাতে মেয়েকে পাত্রস্থ করার ইচ্ছায়, বিলাসিতার বশে অঢেল অর্থসম্পদ উপঢৌকন দিয়ে থাকেন। যার পরিপূর্ণ রূপ বা নাম যৌতুক। ধনীদের বেলায় এটা শৌখিনতা ও বিলাসিতা হলেও দরিদ্রের জন্য এটা অভিশাপ। ধনীদের কাছ থেকেই এর সৃষ্টি। কিন্তু এর বিস্তার সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে। এই যৌতুকপ্রথা সুখী জীবনের পথে বড় বাধা হয়ে আছে। সমাজের একটি বিষাক্ত ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে যৌতুকপ্রথা। আর এই ব্যাধির শিকার নারীসমাজ ও কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা। যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে না পেরে পিতাকেও আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে— এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয়।'
আর যৌতুকের আশাভঙ্গের কারণে লোভ-লালসার ভয়াবহ অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় আমাদের সমাজের মেয়েদের অর্থাৎ বধূকে। যৌতুকের শিকার হয়ে মেয়েদের নানা লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, তিরস্কারসহ শত সহস্র নির্যাতন সহ্য করতে হয়। এই ব্যাধিতে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। যৌতুক ব্যাধির যূপকাষ্ঠে হাজারও সহজ, সরল, অবলা নারী নিগৃহীত ও নিপীড়িত হচ্ছে। নারী জাতির মুক্তির লক্ষ্যে যৌতুক নামক বিষবৃক্ষের শিকড় সমাজ থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। কারণ এই ব্যাধি ক্রমেই সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিকার সম্মিলিতভাবে করতে না পারলে সমাজ কলুষিত থেকে যাবে। জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রগতিশীল যুগে প্রাচীন এই প্রথাটিকে কোনোভাবেই গ্রাহ্য করা যায় না। এটি সমাজের অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রতিবন্ধকস্বরূপ। যৌতুক প্রথার সামাজিক ব্যাধি যাতে সমাজকে ধ্বংস করতে না পারে এজন্য সবার উপলব্ধি করা দরকার- “নারীরা আমাদেরই বোন, মা ও আমাদেরই সন্তান।” এ উপলব্ধির বাস্তবায়নে দেশ হবে অভিশাপমুক্ত, ব্যাধিমুক্ত।
মন্তব্য : যৌতুকপ্রথা উচ্ছেদের লক্ষ্যে নারীকে হতে হবে শিক্ষিত ও স্বনির্ভরশীল। সবাই আন্তরিক হলেই সমাজ থেকে এ যৌতুক নামের কুপ্রথা দূর করা সম্ভব।