ভাব সম্প্রসারণ : অভাব অল্প হলে দুঃখ অল্প হয়ে থাকে(২টি)

মূলভাব : যার যত বেশি সম্পদ আছে তার চাহিদা তত বেশি। তাই জীবন সুন্দর করতে হলে অল্পতে তুষ্ট থাকতে হবে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ সামাজিকভাবে বসবাস করে। একাকী তার পক্ষে বাস করা কঠিন। সব সমাজে সুখ আছে, দুঃখ আছে, জ্বালা আছে, যন্ত্রণা আছে। সব দেশেই নানা শ্রেণির নর-নারী নিয়ে জনসমাজ গঠিত, যেখানে ধনী ও দরিদ্র-এ দু'শ্রেণিতে বিভক্ত। বিশ্বের মানব সমাজ যেখানে বেশিরভাগ লোক দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত, সেখানে অভাব অভিযোগ যে কত তা বলাই বাহুল্য। সব দেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা অনেক। তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এ অভাব অভিযোগের ফলে তাদের দুঃখ-বেদনাও অসীম। এ কথাও সত্য যে, ধনী দরিদ্র সব শ্রেণির লোকেরই অভাববোধ আছে, তারা সংসারে কোনো না কোনোভাবে অভাবের শিকার। 

দেশের রাষ্ট্রপতির যেমন অভাববোধ আছে, সেদেশের এক সাধারণ শ্রমিকেরও তেমনি অভাববোধ আছে। একজনার অভাববোধের সঙ্গে অপরজনের অভাববোধের মিল নেই। এ অভাববোধ আছে বলে মানুষের দুঃখের সীমা নেই। কিন্তু যারা অভাবী নয়, তাদের তো কোনো দুঃখ নেই। যদি মনে করি, আমার কোনো অভাব নেই অথবা অভাব নিতান্ত অল্প তাহলে মনের আকাশে দুঃখের মেঘ জমবে না, অথবা কালো মেঘ জমলেও নিতান্তই অল্প জমবে। মহাপুরুষদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় যে, তাঁদের জীবনে অভাববোধ নিতান্ত অল্প ছিল। ফলে তারা সুখেও কম পেয়েছেন। অভাব যার অল্প দুঃখও তার অল্প হতে রাখ। অভাব বেশি হলে জীবনে একমুহূর্তেও স্থিরতা আসে না। জীবনকে দুর্বিষহ বলে মনে হয়।

মন্তব্যঃ জীবনকে দুঃখের নিগড় থেকে মুক্ত রাখতে হলে অভাববোধকে সীমিত রাখতে হবে। কেননা অভাব থেকে দুঃখের জন্ম। সুতরাং অভাবকে কার করার মধ্যে জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।

আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : লোভে পাপ পাপে মৃত্যু (৩টি )

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব : মানুষের অভাব অসীম। অভাব কখনই পূরণ হওয়ার নয়। কারণ একটি অভাব পূরণ হলে অনেক অভাব সৃষ্টি হয়। অভাবের সঙ্গে দুঃখের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। যে কারণে অভাব যত কম হবে দুঃখও তত কম হবে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের চাহিদার শেষ নেই, চেষ্টার বিরাম নেই। চাহিদা অফুরন্ত, যা পূরণের জন্য মানুষ ব্যতিব্যস্ত। সেই সাথে চাকচিক্যময় সমাজব্যবস্থায় কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করা হচ্ছে। নানারকম সংগত ও অসংগত প্রচারণা চালিয়ে ফ্যাশন ও ডিজাইন পরিবর্তনের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সমাজ, সংসার ও মানুষের মনে। যা পূরণের জন্য অনেকেই মরিয়া। সামর্থ্যবানরা তো বটেই, যাদের সামর্থ্য নেই তারাও অনৈতিকভাবে হলেও বিচিত্র অভাব পূরণের চেষ্টায় লিপ্ত। এর ফলে সমাজে অসামঞ্জস্যতা ও সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি নানা বিশৃঙ্খলতা দেখা দিচ্ছে।বিশৃঙ্খলতার মধ্যেই চলছে নানাবিধ অসম প্রতিযোগিতা। এসবের কোনোটাই শুভ লক্ষণ নয়। 

যার ফলশ্রুতিতে অভাব হ্রাস না পেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ এটাতো অবধারিত যে একটি অভাব মেটানো হলে দশটি অভাব জন্ম নেবে। একটি চাহিদা পূরণ দশটি চাহিদার সৃষ্টি করবে। এ যেন মানবের অমোঘ নীতি। তাই অভাব যত কম হয় ততই মঙ্গল। কারণ অভাব ও দুঃখ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অভাব থাকলে দুঃখ থাকবে। অভাবের জন্য আমরা নানা প্রতিবন্ধকতা ও নানা দুঃখকষ্টের মুখোমুখি হই। সহ্য করতে হয় নানা যাতনা ও নির্যাতন। এতসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে সবাই চায় যেকোনোভাবে অভাব পূরণ করতে। প্রতিনিয়ত এসব অভাব পূরণের জন্য উদয়াস্ত অস্থির থাকতে হয়। জীবন হয়ে পড়ে যান্ত্রিক। যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে জীবন হয় উপেক্ষিত। যেটুকু জীবন অবশিষ্ট থাকে তার পরতে পরতে যেন দুঃখের বসবাস। এ জীবন মনে হয় অসহ্য ও মূল্যহীন। 

সমাজে এর প্রভাব পড়েছে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে। চারদিকে অসুখী মানুষের ছড়াছড়ি। মানুষ সুখ চায়, আনন্দ চায়, জীবনের চাহিদা মেটাতে চায়। এ জন্য অভাব সীমিত করতে হবে। কমিয়ে ফেলতে হবে চাহিদা। কারণ অভাব বা চাহিদা এক জীবনে পূরণ হওয়ার নয়। জীবনের সমান্তরালে শুধু বেড়েই চলে অভাব। আর পাল্লা দিয়ে বাড়ে অভাব অপূরণের দুঃখবোধ এ থেকে কারো মুক্তি নেই। হোক সে পথের ভিখারি কিংবা রাজপ্রাসাদের বাসিন্দা। এ থেকে মুক্তির একটিই পথ অভাব যত কম করা যায়, চাহিদার লিস্ট যত কাটছাঁট করা যায়, যত অল্পে তুষ্ট থাকা যায়। অল্পে খুশি থাকলে তা পূরণ যেমন সহজসাধ্য হয়, জীবনও তেমনি জটিলতামুক্ত হয়। এ কারণে অভাবজনিত দুঃখবোধ কমাতে হলে অভাব সীমিত করতে হবে। চাহিদার লাগাম টেনে ধরতে হবে। তবেই কেবল দুঃখ কমানো যাবে।

মন্তব্য : জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে অভাব। আর জীবন ও অভাবের সমন্বয়েই সুখ-দুঃখ। তাই অবধারিত যে, অভাব যত কম হবে দুঃখও সে অনুপাতে কম হবে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad