শিষ্টাচার অথবা সৌজন্যবোধ - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

উপস্থাপনা : 

"Humility is the solid foundation of all the virtues." কবি বলেন, “সে-ই নীতিজ্ঞ বীর গুণ গাই তার, মন-মুখ ব্যবহার যার একাকার।” মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার জ্ঞান-কর্মে, আচার-আচরণে, ব্যবহারে ও কথাবার্তায় । ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধ মানুষকে মহিমান্বিত করে তোলে । ভদ্র ব্যবহারে শত্রুও মিত্রে পরিণত হয় । 

পক্ষান্তরে অভদ্র ব্যবহারে মিত্রও শত্রুতে পরিণত হয়। কথায় বলে, “পৃথিবীতে শত্রু-মিত্র কেহ কারো নয়, ব্যবহারে শত্রু-মিত্র সবাকার হয়।” কবির ভাষায়, “শিষ্টাচার উন্নতির প্রধান সোপান-শিষ্টাচারে মানব হয় মহা মহীয়ান।”

শিষ্টাচার লাভের উপায় : 

শিষ্টাচার বা আদব-কায়দা শিক্ষার জন্য কোনো অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না অথচ এ কথা সত্য যে, মানুষ ইচ্ছে করলেই শিষ্টাচারী হতে পারে না । শিষ্টাচারী হওয়ার জন্য মানুষকে সাধনা করতে হয় । শিশুকাল থেকেই একজন মানব- সন্তানকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হয়। উর্বর ভূমি যেমন উপযুক্ত কর্ষণের অপেক্ষা রাখে, মহৎ গুণের অধিকারী সন্তানকেও তেমনি ছোট বেলা থেকে তিলে তিলে গড়ে তুলতে হয় ।

শিষ্টাচার লাভে পরিবেশের প্রভাব :

শিষ্টাচার লাভ করার ব্যাপারে পারিপার্শ্বিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । একটি শিশু যে পরিবেশে জন্মায় এবং লালিত-পালিত হয় তা তার মনে বহুল পরিমাণে ছাপ ফেলে- দাগ কাটে। পরবর্তীকালে তার কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে এ পরিবেশের শিক্ষা-দীক্ষা এবং রীতি-নীতি তার চরিত্রে ফুটে ওঠে

আরও পড়ুন :- ছাত্র জীবন - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] 

মানব জীবনে শিষ্টাচারের স্থান : 

মানব জীবনের সার্বিক কল্যাণে শিষ্টাচারের স্থান অতি উচ্চে। পৃথিবীর যে কোনো মহামানবের জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই- তাদের উন্নতির মূলে রয়েছে শিষ্টাচার । শিষ্টাচারী মানুষই পৃথিবীকে- পৃথিবীর মানুষকে জয় করতে পারে সহজে। মানুষের যথার্থ পরিচয় মেলে তার শিষ্টাচারে । শিষ্টাচারকে সুষ্ঠুভাবে আয়ত্ত করতে পারলে জীবনে সোনা ফলানো যায়।

শিষ্টাচার ও সমাজ জীবন : 

শিষ্টাচার ও সমাজ জীবন পরস্পর সম্পর্কিত । কারণ মানুষ সামাজিক জীব। সে সমাজে বাস করে । অন্যের সাহায্য বিনা মানুষের পক্ষে এক মুহূর্তও চলা সম্ভব নয় । সমাজবদ্ধ মানুষ কেউই স্বাধীন নয়, একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল । তাই পরস্পর পরস্পরের প্রতি শিষ্টাচার প্রদর্শন করা জরুরি । 

অপরের সুবিধা-অসুবিধা, মতামত ও অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে চলাই শিষ্টাচারের লক্ষ্য । আর এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, শিষ্টাচার ব্যক্তিগত গুণ হলেও সমাজের সাথে এর নিবিড় সম্পর্ক বর্তমান ।

আরও পড়ুন :- বাংলা নববর্ষ - রচনা [ class 6, 7, 8, 9, 10 ] PDF 

শিষ্টাচারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :

সামাজিক জীবনের শিষ্টাচারের মূল্য, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, "Courtesy costs nothing but buys everything". শিষ্টাচারের গুণে মানুষ পৃথিবীতে অনেক কিছু করতে পারে অথচ পয়সা খরচ করতে হয় না । শিষ্টাচারী মানুষ যথেষ্ট লাভবান হতে পারে; কারণ শিষ্টাচার দিয়ে মানুষের মন জয় করে অতি সহজে যে কোনো কাজ উদ্ধার করা যায় । 

কোনো দরিদ্র ব্যক্তিও এর গুণে সফলতা অর্জন করতে পারে । প্রকৃত প্রস্তাবে, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই শিষ্টাচারের জরুরি প্রয়োজন। শুধু ব্যক্তি স্বার্থে নয়, জাতীয় স্বার্থেও এর ভূমিকা অনন্য । আমাদেরকে বড় হতে হবে; আর বড় হতে হলে শিষ্টাচারী হওয়া বাঞ্ছনীয় ।

শিষ্টাচার সম্পর্কে ভুল ধারণা : 

শিষ্টাচারকে অনেক দুর্বলতা মনে করে । এরা মনে করে শিষ্টাচার এক ধরনের তোষামোদ বা তেলানো । আসলে তাদের ধারণা সম্পূর্ণভাবেই অযৌক্তিক। এ ধারণার বশবর্তী যারা তারা নিজেদেরই ক্ষতি করে, কারণ সমাজের মানুষ শিষ্টাচারকেই ভালোবাসে। শিষ্টাচার তোষামোদ নয়, দুর্বলতা নয়, শিষ্টাচার মহৎ গুণ। শিষ্টাচার দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় । অনেক মহাপুরুষই তা বাস্তবে প্রমাণ করেছেন।

উপসংহার : 

শিষ্টাচার মানব চরিত্রের মহৎ গুণাবলির প্রকাশ । শিষ্টাচারেই নিহিত রয়েছে মানব জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি। "The greatest ornament of an illustrious life is modesty and huminity." এ কথা পুরোপুরি সত্য। তাই প্রত্যেকটি মানুষকে মনে-প্রাণে শিষ্টাচারী হওয়া উচিত।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad