বাংলা নববর্ষ/পহেলা বৈশাখ- রচনা [ class 6, 7, 8, 9, 10 ] PDF

উপস্থাপনা : 

পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষেরই বছরে এক বা একাধিক ধর্মীয় বা সামাজিক উৎসব আনন্দ থাকে। সে ধারামে পৃথিবীর সব দেশেই নতুন বছরের প্রথম দিনটি উৎসবের দিন হিসেবে পালন করা হয়। পৃথিবীব্যাপী এ নববর্ষ কিন্তু একটাবিশেষ দিন, জ্বরামুক্ত।

বিভিন্ন দেশে নববর্ষ : 

খ্রিস্টানরা খ্রিস্টাব্দের, মুসলমানরা হিজরি সনের, বাংলাদেশিরা বাংলা সনের হিসেবে নববর্ষ উৎসব পালন করে। কোনো কোনো জাতি তাদের নিজ নববর্ষ সাদামাটাভাবে পালন করলেও ইরান, চীন, রাশিয়া প্রভৃতি দেশে মহা জাঁকজমকের সাথে এ উৎসব পালনের ঐতিহ্য রয়েছে।

বাংলা নববর্ষ : 

বাংলা সালের সাথে বাংলা নববর্ষ সম্পর্কিত। মুঘল সম্রাট আকবরের সময় বাংলা নববর্ষের উদ্ভব। এর আগে এ দেশে চান্দ্রবছর হিসেবে হিজরি সন চালু ছিল, কিন্তু হিজরি সন সৌর বছরের প্রেক্ষিতে বছরে ১০/১১ দিন কম বলে ফসলের মৌসুম ও খাজনাদি আদায়ে ঝামেলা দেখা দেয়। 

তাই আকবর তার সভাসদ আমীর ফতেহউল্লাহ সিরাজি নামক বিজ্ঞ জ্যোতিষীকে দিয়ে সৌর হিসেবে বাংলা সনের পত্তন ঘটান। তখন ছিল ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯৬৩ হিজরি।

আরও পড়ুন :-  বিজয় দিবস - রচনা [class 6, 7, 8, 9 ] এবং HSC

নববর্ষে বাঙালির পুণ্যাহ ও হালখাতা : 

বাংলার প্রকৃতি যেমন বৈশাখী বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে, তেমনি এ দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা নববর্ষের আগমনের জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করে। জানা যায়, আগেকার দিনে যখন জমিদারি প্রথা বর্তমান ছিল, তখন নববর্ষের দিনে 'পুণ্যাহ' অনুষ্ঠান হতো। জমিদার বাড়িকে কেন্দ্র করে পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে রায়ত প্রজারা এসে জড়ো হতো। পুরাতন বছরের খাজনা পরিশোধের দিন ছিল এটা। জমিদারের পক্ষ থেকে এদিন জমিদার বাড়িতে আগত প্রজাদেরকে মিষ্টিমুখ করানো হতো।

রাতে বসত যাত্রা, সারি, জারি বা কবি গানের আসর। ব্যবসায়ী মহলেও হালখাতা নামে ঠিক একই ধরনের অনুষ্ঠান হয়। এদিকে নতুন বছরে ব্যবসায়ের নতুন খাতা লেখা শুরু হয়। খদ্দেরদের মিষ্টিমুখ করিয়ে গত বছরের বকেয়া আদায় করা হয় এ অনুষ্ঠানে। বর্তমানে হালখাতা অনেকটা ব্যবসায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর বাইরে যা হয়, তা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মাত্র।

বৈশাখী মেলা : 

নববর্ষ উপলক্ষ করে চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরুর কয়দিন গ্রাম বাংলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসে। পহেলা বৈশাখের পরিপূর্ণ রূপ প্রকাশিত হয় এ মেলায়। গ্রামের ছোটবড় সবাই সকাল থেকেই মেলাতে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এদিন আনন্দে মেতে ওঠে। মেলায় লোক-শিল্পের বিপুল সমাবেশ ঘটে। 

আরও পড়ুন :- আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস - বাংলা রচনা - Class 6, 7, 8, 9, 10

বিভিন্ন রকমের মাটির হাঁড়ি, বাসন, হাতি, ঘোড়া, পুতুল এবং বেত ও বাঁশের বিভিন্ন জিনিসপত্র, মুড়ি, বাতাসা, বিভিন্ন রকমের মিঠাই ইত্যাদি মেলার আকর্ষণ। চারদিক থেকে আগত ছেলেমেয়েদের প্রচণ্ড হৈ-হুল্লোড়, বাঁশি ও ঢোলের অবিরাম বাজনায় সেখানে টিকে থাকা দায়। আনন্দের ধারা যেন চারদিকে উপচে পড়ে। 

মেলায় খেলনা, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা ইত্যাদি কেনার জন্য বেশ কিছু আগে থেকেই ছেলেমেয়েরা বাঁশের চোঙ ইত্যাদিতে পয়সা জমায়। জিনিসপত্র, লোকজন ও হৈ হুল্লোড় সববিছু মিলিয়ে মেলা মোটামুটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়। মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ঘুড়ি উড়ানো ও ক্রয়-বিক্রয়। এছাড়া পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সুধী সমাজে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান, নাটক ইত্যাদি হয়ে থাকে।

নববর্ষে হিন্দু সম্প্রদায় : 

নববর্ষের সাথে আমাদের হিন্দু সমাজের বেশকিছু ধর্মীয় বিষয়েরও সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য তারা দু'দিক থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনে তৎপর হয়ে ওঠে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা অষ্টমী, নবমী, দোল, বারনীয়ন, চড়ক ইত্যাদি আচার- অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে। এর মধ্যে চড়ক ঘূর্ণন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার : 

‘পহেলা বৈশাখ' উপলক্ষ করে গ্রাম ও শহর বাংলার সর্বত্রই মানুষের মাঝে উৎসবের বন্যা বয়ে যায়। এতে বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের লোক সমভাবে অংশ নেয়। কোথাও বা মেলার আয়োজন হয়। এভাবেই পালিত হয় আমাদের নববর্ষ।


Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad