শৃঙ্খলাবোধ - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা  

আমাদের এই পৃথিবী তথা সমগ্র বিশ্ব একটি নির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে আবদ্ধ। সৃষ্টিকর্তা সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে একটা শৃঙ্খলা তৈরি করে দিয়েছেন। মানুষ সামাজিক জীব। তাই সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে নিয়ম মেনে চলতে হয়। এই শৃঙ্খলাবোধই বিশ্বজগতের উন্নতি ও স্থায়িত্বের মূলে কাজ করছে। জীবনের সুসম বিকাশের পথে অপরিহার্য উপাদান শৃঙ্খলাবোধ। এটা মানবজীবনের অলঙ্কারস্বরূপ।

শৃঙ্খলাবোধ কী  

নিয়ম-কানুনের প্রতি আনুগত্য ও অনুসরণকে সাধারণভাবে শৃঙ্খলা বলে। আর শৃঙ্খলার প্রতি সচেতনতাই শৃঙ্খলাবোধ। এটা মানব মনের এক বিশেষ অনুভূতি এবং মানুষের আনুগত্যের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। সুতরাং রাষ্ট্রীয় জীবনের নানা নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনকেই শৃঙ্খলাবোধ বলে ৷ 

প্রকৃতিতে শৃঙ্খলাবোধ  

প্রকৃতির সর্বত্রই এক অপার শৃঙ্খলাবোধ বিরাজমান। সৃষ্টির অণু-পরমাণু হতে শুরু করে সাগরের নিচে অন্তরীক্ষে সর্বত্রই শৃঙ্খলার খেলা। নিয়মমতো চন্দ্র-সূর্য ওঠে আবার অস্ত যায়; জোয়ার-ভাটা হয়, ঋতুচক্রের আবর্তন ঘটে। পশুপাখি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র কীট-পতঙ্গ কিছুই নিয়মের বাইরে নয়।

সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলাবোধ  

সামাজিক জীবনের সঙ্গে শৃঙ্খলা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সুন্দর সামাজিক জীবন মানেই শৃঙ্খলাবোধের জীবন। সামাজিক নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে না চললে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, অশান্তির সৃষ্টি হয়। সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে। যখন এসব নিয়ম-কানুন, বাধা-নিষেধ অমান্য করা হয়, তখন তাকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে ধরা হয়।

আরও পড়ুন :- নিয়মানুবর্তিতা- বাংলা রচনা - Sikkhagar

ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা  

ছাত্রছাত্রীরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের হাতেই দেশের সোনালি ভবিষ্যৎ গড়ার ভার। তাই তাদের শৃঙ্খলাবোধের অনুশীলন করা একান্ত কর্তব্য। ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলাবোধ অনুশীলন করতে পারলে ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর, সুনিয়ন্ত্রিত ও সুগঠিত করে তোলা সম্ভব। অপরদিকে অসামঞ্জস্য, শৃঙ্খলাহীনতা ও অসংযমের মধ্য দিয়ে ছাত্রজীবন শেষ করলে গোটা জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ছাত্রজীবন সুশৃঙ্খল জীবন গঠনের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।

শৃঙ্খলাবোধের গুরুত্ব  

বিশ্ব-প্রকৃতি তথা মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলাবোধের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শৃঙ্খলাবোধের অভাবে মানবজীবনে নেমে আসে স্বেচ্ছাচার। জীবন ছন্দ হারিয়ে ফেলে। শৃঙ্খলাহীন জীবনের কাছে কিছু আশা করা যায় না। নিয়ম-কানুনের প্রতি আনুগত্যহীন জাতি সর্বনাশের পথে এগিয়ে যায়। তাই শৃঙ্খলাবোধের প্রতি আন্তরিক হলে জীবনকে বিকশিত করা সম্ভব।

শৃঙ্খলাবোধের সুফল  

শৃঙ্খলাবোধ মানবজীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলে। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যে জাতি যতবেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ সে জাতি ততবেশি অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করেছে। ব্যক্তিজীবনেও দেখা যায় যে, পৃথিবীর সকল মনীষীই জীবনে কঠোরভাবে শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি পালন করে গেছেন। মূলত শৃঙ্খলাবোধ মানুষের সার্বিক জীবনোন্নতির অন্যতম পূর্বশর্ত।

উপসংহার  

মানবজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম। শৃঙ্খলাবোধই ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের অগ্রগতির প্রধান উপায় এবং এ মন্ত্র উচ্চারণেই মানুষ পেতে পারে জীবনে সার্থকতার স্বাদ। তাই জীবনের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলেরই নিজ নিজ জীবন গঠনে শৃঙ্খলা তথা নিয়মনীতির প্রতি একান্ত আনুগত্য প্রকাশ করা উচিত।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad