ভাব সম্প্রসারণ : দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা (২টি)

"দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার" ভাবসম্প্রসারণটি ২টি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো। তোমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে সহজ মনে হয় সেটাই শিখে নিতে পারো। 

দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা ভাব সম্প্রসারণ - ১

মূলভাব : বিচারক অপরাধীর অপরাধের শাস্তি বিধান করেন। বিচারক যদি অপরাধীর প্রতি সহমর্মিতা রেখে যথার্থ শাস্তি বিধান করেন, তবে সেটাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিচার বলে পরিগণিত হয়।

সম্প্রসারিত ভাব : অপরাধীকে শাস্তি বা দণ্ড প্রদান বিচারের লক্ষ্য এবং বিচারকের কর্ম। মূলত এ শাস্তি প্রদান অপরাধ দমনের জন্য। দণ্ড বা শাস্তি ব্যতীত অপরাধীর অপরাধ প্রবণতা কমতে পারে না। তবে দণ্ড অর্থহীন হবে, যদি না অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তার মনে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্মানো না যায়। পাপকে ঘৃণা করা উচিত; তবে পাপীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পাপকার্য থেকে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করা উচিত। 

দণ্ডভয়ে অন্যায়কারী অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকে ঠিকই কিন্তু তার অন্যায় করার মানসিকতার পরিবর্তন হয় না। তার মানসিকতায় পরিবর্তন আনা তখনই সম্ভব হবে যখন তার অন্যায় কর্মের পশ্চাতে যে কারণ বিদ্যমান সে কারণ অপসারিত করা হবে। মোহসীনের ঘরে যে চোর ঢুকেছিল, তিনি তাকে শাস্তি দেননি। বরং চুরি যাতে না করে তার ব্যবস্থা করেছিলেন। 

তার সহানুভূতি প্রদর্শনের জন্য চোর ঝরঝর করে কেঁদে পুনরায় চুরি না করার শপথ করেছিল। দরদ ও মমতা দিয়ে যদি অন্যায়কারীর বিবেক জাগানো যায়, তবে তার পরিবর্তন হয়। সে ভালো মানুষ হয়ে ওঠে। অন্যায়কারীকে মানবিক সহানুভূতি দিয়ে বিবেচনা করলে সামাজিক অপরাধ কমে আসবে। হ্রাস পাবে অন্যায়কারীদের সংখ্যা। তাই প্রতিশোধ গ্রহণ দণ্ডদানের লক্ষ হওয়া উচিত নয়।

মন্তব্য : অপরাধীর প্রতি বিচারকের সংবেদনশীলতা বিচারকার্যকে নিরপেক্ষ ও মহান করে। সহমর্মিতাহীন বিচার পাষাণ দণ্ডে রূপ নেয়। যা সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারের পরিপন্থি।

আরও পড়ুন :- ভাবসম্প্রসারণ : কীর্তিমানের মৃত্যু নেই/মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে

দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা ভাব সম্প্রসারণ - ২

মূলভাব : অপরাধীর শাস্তি দেখে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। বিচারক যদি অপরাধীর মতো ব্যথা অনুভব করে। তাহলেই সে বিচার সার্থক হয়।

সম্প্রসারিত ভাব : যে বিচারক অপরাধীকে দণ্ড দিয়ে দণ্ডিতের ব্যথায় ব্যথিত হন, তার সে বিচার হয় সর্বোত্তম। কারণ ন্যায়ের শুভ্র পাষাণ বেদীর উপর বিচারকের আসন পাতা। নিরপেক্ষভাবে অপরাধ নির্ণয় করে অপরাধীকে শাস্তি দান করাই বিচারকের কাজ। কিন্তু এই কাজটি সুকঠিন। অপরাধীকে দণ্ডদানের ব্যাপারে বিচারককে সংবেদনশীল হতে হবে, হতে হবে অনুভূতিপ্রবণ। তাকে একথা বুঝতে হবে যে, বিচারের কাঠগড়ায় দণ্ডায়মান ব্যক্তিটিও একজন মানুষ। 

আর ন্যায় ন্যায় মানুষই করে থাকে। অন্যায় করে থাকলে তাকে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। কিন্তু শাস্তি দেয়ার সময় বিচারককে পক্ষপাতহীন হতে হবে। তানা হলে তিনি যদি অপরাধীকে নির্মমভাবে দণ্ডদান করেন, দণ্ডিতের বেদনায় তাঁর হৃদয়ে যদি করুণার উদ্রেক না হয়, তবে তাঁর দণ্ডদান হয়ে ওঠে প্রবলের অত্যাচার এবং তিনি হয়ে পড়েন বিচারক পদের অযোগ্য। যে দণ্ডিত, যাকে তিনি দণ্ড বিধান করলেন, সেও কোনো এক হতভাগ্য পিতা মাতার সন্তান। সন্তানের ব্যথা বেদনায় তাঁরাও ব্যথিত হবেন। 

তা ছাড়া, যে কোনো শাস্তিই কষ্টদায়ক। অপরাধীকে সেই কষ্ট ভোগ করতে হয়। বিচারক যদি তার এবং তার পিতামাতার ব্যথা বেদনার কথা চিন্তা করে ব্যথিত না হন, তাহলে তাঁর শাস্তি দান হবে নিষ্ঠুরতার নামান্তর। কাজেই দণ্ডিতের প্রতি বিচারককে সমব্যথী হতে হবে। তাঁর কান্নায় তাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হতে হবে। অপরাধী ভুল করে যতটুকু ব্যথিত হয়েছে তা সার্থক হবে বিচারের ব্যথিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। আর সে বিচার প্রতিশোধ পরায়ণতার মানসিকতায় হবে না। তা হবে বিচারের ন্যায়পরায়ণতা, অপরাধ ও বিচার এখানেই সার্থকতা লাভ করবে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad