নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস : ভাবসম্প্রসারণ (২টি )

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ, তোমাদের শেখার সুবিধার্থে "নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ওপারেতে সর্বমুখ আমার বিশ্বাস" ভাবসম্প্রসারণটি ২টি বই থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো । তোমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে সহজ মনে হয় সেটাই শিখে নিতে পারো। 

নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ভাব সম্প্রসারণ - ১

মূলভাব : মানুষের জীবন অতৃপ্তির বেদনা দিয়ে গড়া। মানুষ কখনো তাঁর বর্তমান অবস্থায় তৃপ্ত থাকে না। মানুষ সবসময় নিজের সুখকে ছোট করে দেখে আর অন্যের সুখকে বড় করে দেখে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ যা পায় তা নিয়ে তৃপ্ত থাকা মানুষের স্বভাব নয় বরং তার আয়ত্তের বাইরে আরও যা কিছু আছে তা লাভের আকাঙ্ক্ষায় বর্তমান সময়কে দুর্বিষহ করে তোলে। সে আরও বেশি পাওয়ার জন্য লালায়িত থাকে।

নদীর ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি বেশ স্পষ্ট। নদীর এক পার অন্য পারের দিকে তাকিয়ে ভাবে সকল সমৃদ্ধি কেবল ঐ পারেতেই। তারা একে অপরকে উভয়ের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধশালী কল্পনা করে। এরূপ ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা তাদের বর্তমান সুখকে ম্লান করে দেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোনো পারেই সুখ নেই। প্রত্যেকেরই নিজের ব্যাপারে অতৃপ্তি অপরের প্রতি উচ্চ পর্যায়ের ধারণা থাকে। ফলে তাদের অতৃপ্ত বেদনা তাদেরকে প্রকৃত সুখ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। নিজের সবকিছুতে পরিতৃপ্তি সুখের সন্ধান দেয়।

মন্তব্য : নিজের যা আছে তা নিয়ে সুখী থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

আরও পড়ুন :- সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা : ভাব সম্প্রসারণ - ২ টি 

নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ভাব সম্প্রসারণ - ২

মূলভাব : মানুষ সুখের অন্বেষায় উন্মত্ত। কিন্তু প্রকৃত সুখের সন্ধান লাভ মানুষের ভাগ্যে কদাচিৎ ঘটে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ কী চায়? জিজ্ঞেস করলে সমস্বরে সকলে বলে উঠবে সুখ। কিন্তু কোথায় সুখ, সন্ধানের তো শেষ নেই। আজও সুখের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল কই? নদীর এপার বলছে সুখ এপার নয়, ওপারে। ওপার বলছে এপারে নয়, ওপারে । সাকিবকে জিজ্ঞেস কর, কে সুখি? সে বলবে, রাজিব। রাজিবকে জিজ্ঞেস করলে সে বলবে সাকিব। 

নিজ পরমায়ু এবং পরের সুখ ও ঐশ্বর্যের প্রতি মানুষের অসাধারণ পক্ষপাতিত্ব আছে। মৃত্যুকে কোনক্রমেই এড়ানো যায় না, জেনেও কেউ মৃত্যু ভাবনা নিয়ে মাথা ঘামায় না। মৃত্যুকে সে কোন রকমে এড়িয়ে যেতে পারবে বলে তার ধারণা হয় না। তদ্রূপ মানুষ নিজের চেয়ে পরের ঐশ্বর্য ও সুখকে খুব বড় করে দেখতে অভ্যস্ত । সুখ মায়ামৃগের মতো মানুষকে দূর থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। 

আর মানুষ তারই পেছনে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছে । মায়ামৃগ দূর থেকে দূরান্তরে পালাচ্ছে। আর মানুষ অ-ধরা কিছুতেই ধরতে পারছে না। কিন্তু ছোটাছুটি এবং লৌহ শৃঙ্খল পরিয়ে দিয়েছে যে, কিছুতেই বন্ধন মুক্তি ঘটছে না। তাই দিন-রাত এ অন্তহীন কোলাহল আর অস্বাস্থ্যকর কৌতূহল । মানব মন সতত বলে যায়-

“যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই

যাহা পাই তাহা চাই না ।”

মন্তব্য : মানুষ নিজের অবস্থায় তুষ্ট থাকতে পারছে না বলে, আপনার মধ্যে সুখের সন্ধান পাচ্ছে না বলেই, পরস্পরের মধ্যে সুখ খুঁজছে, তাই আজ সমাজে রাষ্ট্রে, মানুষে মানুষে জাতিতে জাতিতে এত হানাহানি, এত মারামারি, এত দ্বন্দ্ব সংঘাত । সে যে মায়ামৃগ এপার নয় ওপার ওপার নয় এপার ওপার কি আর শেষ আছে?

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad