প্রবন্ধ রচনা : বিশ্বস্বাস্থ্য দিবস

ভূমিকা : 

মানুষের জীবনের সঙ্গে রোগব্যাধি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যেখানে জীবনের উপস্থিতি সেখানেই অলক্ষ্যে রোগেরও উপস্থিতি রয়েছে। রোগব্যাধি ছাড়া জীবনের কল্পনা অবাস্তব। রোগশূন্য জীবন অকল্পনীয়। তবে সুস্থ-সবল দেহে জীবনধারণ করে পৃথিবীতে বিচরণ করতে হলে রোগব্যাধির আক্রমণ দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। রোগব্যাধি সরিয়ে রাখতে না পারলে এর কবলে পড়ে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য হারিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। কারণ রোগব্যাধির দ্যোতনাই হলো অকাল মৃত্যু।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা : 

বিশ্বের মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার এবং বিশ্বকে রোগমুক্ত করে সুখের বাসস্থান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা' (World Health Organization - WHO)-এর উদ্ভব।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি : 

লীগ অব নেশনস-এর পতনের পর ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ বা UNO জন্ম লাভ করে। WHO জাতিসংঘের একটি সংস্থা। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল এ সংস্থা গঠিত হয়। এ সংস্থার প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এর শাখা অফিস আছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করা। বিভিন্ন রোগের প্রকোপ থেকে মানুষকে রক্ষা করা এবং উন্নত ধারায় চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।

আরও পড়ুন : রচনা : ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস - PDF

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কার্যক্রম : 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশে শাখা অফিস খুলে প্রত্যেক দেশ থেকে জীবন ধ্বংসক বড় বড় রোগব্যাধি নির্মূল করার জন্য নানা উপায়ে বহু ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ সংস্থার কল্যাণে Small-pox-এর মতো মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি পৃথিবী ছাড়া হয়েছে। ফলে এখন আর কোনো মানুষ Small-pox-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে না। এখন কেবল মানুষ Chicken pox-এ আক্রান্ত হয়। এতে মানুষের জীবনের কোনো ক্ষতি হয় না বা অকাল মৃত্যুবরণ করতে হয় না। ঘামাচিকে যেমন মানুষ ভয় পায় না, Chicken pox-কেও তেমনি ভয় পায় না।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আর একটি মারাত্মক ব্যাধি ম্যালেরিয়াকে শৃঙ্খলিত করে পৃথিবী থেকে দূর করে দিয়েছে। এখন আর কেউ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে না। আগে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হতো এবং গ্রামকে গ্রাম মানুষ শূন্য হয়ে যেত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রচেষ্টায় ম্যালেরিয়া উচ্ছেদ প্রোগ্রামের আওতায় পৃথিবী থেকে ম্যালেরিয়া রোগ দূরীভূত হওয়ায় মানুষ বিরাট স্বস্তি লাভ করেছে।

কয়েকটি মরণব্যাধি : 

এখন পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি মারাত্মক ব্যাধি মানুষের ভয়ের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব ব্যাধির মধ্যে ‘ক্যানসার' ও ‘এইডস’ খুবই মারাত্মক রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এসব রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেননি, তবে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি এইডস প্রতিষেধক ইনজেকশন আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে তা খুবই ব্যয়বহুল। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী থেকে অসহায় অবস্থায় বিদায় নিচ্ছে। ক্যানসারের জন্য যে ইনজেকশন আবিষ্কৃত হয়েছে তা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ বিধায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

আরও পড়ুন : জাতীয় দিবস : বাংলা প্রবন্ধ রচনা 

সম্প্রতি বিশ্বে এইডস রোগের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগ হওয়া মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। WHO এইডস প্রতিরোধ করার জন্য বহু অর্থ ব্যয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং বিশ্বের মানুষকে এইডস সচেতন করে তোলার জন্য প্রাণান্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রচেষ্টা সফল হলে এবং এইডস-এর বিস্তার প্রতিরোধ করতে পারলে মানুষ অকালে দুঃখজনক মৃত্যু কবলিত হওয়া থেকে রেহাই পাবে।

ক্যানসার, এইডস ও অন্যান্য ব্যাধির কারণে বিশ্বের মানুষ আজ ভীষণভাবে চিন্তিত এবং বিশ্বস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন। এসব রোগের আক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে পরম নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

উপসংহার : 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কর্মসূচির মাধ্যমে পৃথিবী রোগমুক্ত হয়ে মানুষের সুন্দর আবাস-ভূমিতে পরিণত হোক –এটাই সকল মানুষের একান্ত কামনা। রোগব্যাধি দূর হলে রোগমুক্ত পৃথিবী মানুষকে শান্তি, স্বস্তি দিতে পারবে এবং তার সামনে জাগিয়ে তুলতে পারবে স্বপ্নময় সম্ভাবনা। WHO-এর কল্যাণে ও কর্ম সাধনায় পৃথিবী আনন্দধামে পরিণত হোক, আরো সুন্দর হোক পৃথিবী, বসবাসের উপযোগী হোক, বিশ্ববাসীর এটাই প্রত্যাশা।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad