আমাদের জাতীয় পতাকা - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা : 

প্রতিটি স্বাধীন জাতির জাতীয় পতাকা রয়েছে। জাতীয় পতাকা প্রমাণ করে দেশটি স্বাধীন ও সর্বময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী। একটা দেশকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসন দান করে জাতির জন্যে মহাগৌরব বয়ে আনে জাতীয় পতাকা। জাতীয় পতাকা দুর্বল চিত্তের প্রাণে বল সঞ্চার করে, ভীরুকে সাহস দেয়, অকর্মণ্যকে করে কর্মঠ ও হতাশাগ্রস্তদের শোনায় আশার বাণী। তাই আমাদের জীবনে জাতীয় পতাকার গুরুত্ব অপরিসীম।

জাতীয় পতাকার আকার ও আকৃতি : 

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় ঘন সবুজ রঙের ওপর উদীয়মান সূর্যের রঙের একটি লাল বৃত্ত রয়েছে । জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০: ৬। দৈর্ঘ্য যদি ৩০৫ সেন্টিমিটার (১০ ফুট) হয়, তবে প্রস্থ ১৮৩ সেন্টিমিটার (৬ ফুট) হবে। লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আমাদের জাতীয় পতাকার ডিজাইন করেছেন শিল্পী কামরুল হাসান।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতীক : 

আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। এটি একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র। বহু সংগ্রাম ও রক্তদানের বিনিময়ে পরাধীনতার গ্লানি মুছে দুনিয়াতে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি। স্বাধীনতা লাভের এই রক্তক্ষয়ী স্মৃতিই বহন করে লাল সবুজের পতাকা। আমাদের জাতীয় পতাকা বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে ব্যক্ত করে ।

আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

জাতীয় পতাকার বিশেষত্ব : 

আমাদের জাতীয় পতাকার সবুজ রং বাংলাদেশের শ্যামল প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য জ্ঞাপক। এটি দেশের তারুণ্য, সজীবতা ও সমৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে। লোহিত বর্ণের সূর্য নবজাগরণ ও সাম্যের কথাই তুলে ধরেছে। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে বাঙালিকে কত রক্ত ঢালতে হয়েছে সেই তাৎপর্যও লাল সূর্যের মধ্যে পাওয়া যায়। 

সূর্যের আলো যেমন সব মানুষ সমানভাবে পেয়ে থাকে, এ ব্যাপারে কোনো পক্ষপাতিত্ব দেখা যায় না, তেমন বাংলাদেশের লাল সূর্য খচিত পতাকা সব শ্রেণির বাংলাদেশিদের মধ্যে সমতা বিধান ও বৈষম্যের অবসানের কথাই ঘোষণা করে ।

জাতীয় পতাকার গুরুত্ব : 

জাতীয় পতাকা সকলের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে সকলকে একত্রিত করে। এছাড়াও দেশের জন্য সর্বস্ব ত্যাগের শিক্ষাও আমরা জাতীয় পতাকা থেকেই পাই। আমাদের সামগ্রিক জীবনবোধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পতাকা। আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের প্রতীক যেমন জাতীয় পতাকা, তেমনি বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কর্ম প্রেরণার উৎসও এটি।

আরও পড়ুন :- বিজয় দিবস - রচনা [ class 6, 7, 8, 9 ] এবং HSC

জাতীয় পতাকার সম্মান : 

জাতীয় পতাকা আমাদের গৌরবের বস্তু। এ জন্য এর যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করাও আমাদের জাতীয় কর্তব্য। স্কুল, কলেজ, ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে তাকে অভিবাদন করতে শিক্ষা দেওয়া হয়। শৈশব হতেই সকলকে এ শিক্ষা দেওয়া হয় কেননা শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, একদিন তাদেরকেই জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। 

যখন কোথাও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় তখন শ্রদ্ধাপ্লুত অন্তরে মস্তক অবনত করে তার প্রতি সম্মান জানাতে হয়। যে জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানায় না সে সকলের ঘৃণার পাত্র হিসেবে বিবেচতি হয়। তাই সিনেমা হল ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে যখন জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করা হয়, তখন আমাদের দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে হয় ।

উপসংহার : 

বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা জাতীয় পতাকা পেয়েছি। এর সম্মান রাখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষায় আমরা কখনো কণ্ঠাবোধ করব না। কেননা জাতীয় পতাকাই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad