বিজয় দিবস - রচনা ( ২০ পয়েন্ট )

(toc) Table Of Contens

উপস্থাপনা : 

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বরে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয় এই দিনে। তাই প্রতি বছর এই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা: 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। মধ্যরাতের পর তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। তবে গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। 

মুক্তিবাহিনী রুখে দাঁড়িয়ে গণহত্যাকারী পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করতে থাকে। প্রতিবেশী ভারত অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী আত্মসমর্পণ করে । জয় হয় বাঙালির । জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

বিজয়ের প্রকৃত অর্থ : 

প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জীবনে নিয়ে আসে সংগ্রামী বিজয়ের স্মৃতি । জীবনকে গৌরবান্বিত তোলার শপথ এ পবিত্র দিনটি থেকেই আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। বিজয় অর্জন বড় কথা নয়, তার সুফলকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়াই বড় কথা। 'স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন'- এ আপ্তবাক্যটিকে আমাদের ভুলে গেলে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অর্থহীন হয়ে পড়ে।

পটভূমি : 

১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তঝরা সংগ্রামের পর ১৬ই ডিসেম্বরে মহান বিজয় সাধিত হয়েছে। কিন্তু এই স্বাধীনতা মূলত এই নয় মাসের ফসল নয়, এর শুরু হয়েছে অনেক আগে। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত আমাদের দেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় দশ বছর শাসনের পর ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিলে বাংলাদেশ হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ। 

পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ছিল দুটি আলাদা ভূখণ্ডে বিভক্ত। পূর্ববাংলা পরিচিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান নামে। অন্যটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। প্রথম থেকেই পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। তারা পূর্ব পাকিস্তানিদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করত।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষ প্রথম তাদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়। পশ্চিম পাকিস্তানিদের অত্যাচার, দুঃশাসন পূর্বপাকিস্তানের মানুষ মুখ বুজে সহ্য করেনি। '৬২, '৬৬-এর ছাত্র আন্দোলন এবং '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দেয় বাঙালি কারো হাতে বন্দি থাকতে রাজি নয়।

আরও পড়ুন : স্বাধীনতা দিবস রচনা ১০০ শব্দ , ২০০ শব্দ এবং ৫০০ শব্দ

বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপট : 

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে পাকিস্তান রাষ্ট্র। বর্তমান বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে তখন উক্ত রাষ্ট্রের একটি প্রদেশ ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ। তাদের দুঃশাসন 3 অর্থনৈতিক শোষণে এদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব-পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও তাদের নিকট শাসনভার না দিয়ে চালাতে থাকে ষড়যন্ত্র। 

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে  'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' বলে জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। সারা বাংলায় শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাক সেনাবাহিনী এদেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্যাপক গণহত্যা চালায় ।

একই রাতে তারা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে হামলা চালায়। কিন্তু গ্রেফতারের আগেই ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ চলে। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর পাক সেনাবাহিনীর প্রধান আত্মসমর্পণ করলে এদেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এ কারণে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস।

স্বাধীনতা সংগ্রাম : 

স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এদেশের সর্বস্তরের জনগণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাতৃভূমিকে শৃঙ্খলমুক্ত করার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এদেশের জনগণ। পাকিস্তানিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি এ দেশের শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, নারী। ঘরবাড়ি, দোকানপাট সবকিছু তাদের গোলার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। 

এসব অত্যাচারের মুখে বাঙালিরাও বসে থাকেনি। দেশের সবখানে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার, ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, কৃষকসহ সাধারণ জনতাকে নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। মুক্তিবাহিনী দেশের সীমান্তে এবং দেশের ভিতরে যুগপৎভাবে শত্রুদের ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে।

বিজয় দিবসের কর্মকান্ড : 

দিবসটির সূচনা হয় একুশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে। ভোর বেলা থেকেই সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়। সবাই মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি সম্মান জানাতে সেখানে সমবেত হয়। প্রতিটি বাড়ি, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাস্তাঘাট বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়। 

সন্ধ্যাবেলায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়। বেতার ও টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। পত্রপত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র ও সাময়িকী প্রচার করে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত ছাত্রছাত্রীরা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে। তারা 

এ সময় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণকারীদের অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং শারীরিক কসরৎসহ বিভিন্ন খেলাধুলা উপভোগ করেন। এ দিনে মসজিদে মসজিদে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহিদদের জন্য মিলাদ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও একইভাবে শহিদদের বিদেহী আত্মার উদ্দেশ্যে শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। দেশের সকল শিশুসদন, জেলখানা, হাসপাতাল ও ভবঘুরে কেন্দ্রে এ দিনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে, পাড়ায়-মহল্লায় সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিজয়ের সেই পরিবেশ : 

ঢাকায় ১৬ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়। আত্মসমর্পণের দৃশ্য দেখার উদ্দেশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। জনপদে কোথাও তিলমাত্র ঠাঁই নেই। মৃদু চলার গতিতে আনন্দের আতিশয্যে তারা আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে। 

তাদের হৃদয়ভরা আবেগ প্রকাশ পাচ্ছিল। আজ জাগ্রত জনতার বিজয় দিবস। আজ নব উদ্যমের জোয়ার এসেছে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর খুশিতে যেন ফেটে পড়ে। সমগ্র ঘরবাড়ি, দালান-কোঠার শীর্ষদেশে শোভা পায় রক্তরঙিন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ।

আরও পড়ুন : বিজয় দিবস - রচনা [ class 6, 7, 8, 9 ] এবং HSC

বিজয় দিবসের ইতিহাস : 

বিজয় মহান, কিন্তু বিজয়ের জন্য সংগ্রাম মহত্তর। প্রতিটি বিজয়ের জন্য কঠোর সংগ্রাম প্রয়োজন। আমাদের বিজয় দিবসের মহান অর্জনের পেছনেও বীর বাঙালির সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মদানের ইতিহাস রয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির প্রায় প্রথম থেকেই বাঙালিদের মনে পশ্চিমা শোষণ থেকে মুক্তিলাভের ইচ্ছার জাগরণ ঘটে। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা প্রবল আকার ধারণ করতে থাকে। অবশেষে বাঙালির স্বাধিকার চেতনা ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে রূপ লাভ করে। বাঙালির স্বাধিকারের ন্যায্য দাবিকে চিরতরে নির্মূল করার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাঙালি-নিধনের নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠে। 

এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাঙালিরা রুখে দাঁড়ায়। গর্জে ওঠে, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে। কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পী-সাহিত্যিক, নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান- বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান- সবাইকে নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশমাতৃকার মুক্তিসংগ্রামে। সুদীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ চলে ।

অবশেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এদেশের মুক্তিসেনা ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের অবসান ঘটে। বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। অর্জিত হয় বাংলাদেশের মহান বিজয়।

আত্মসমর্পণ : 

বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায় আত্মসমর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। পাক বাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. নিয়াজী, রাও ফরমান আলী ও তিরানব্বই হাজার সৈন্যের নিয়মিত বাহিনী যুদ্ধবন্দি হয়। তাদেরকে বন্দি শিবিরে নিয়ে যাওয়ার হুকুম দেওয়া হয়।

বিজয় দিবসের গুরুত্ব : 

স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসে প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষ শাহাদাত বরণ করেছে। তাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের মহান স্বাধীনতা। আমরা সেই শহিদদের কাছে চিরঋণী। আমাদের সব কর্ম ও উন্নয়ন চেতনার মূলে রয়েছে শহিদদের আত্মত্যাগ । তারাই আমাদের অহংকার, আমাদের গৌরব।

চূড়ান্ত বিজয় : 

১৯৭০ সালের নির্বাচনে এদেশের মানুষ পূর্ববাংলার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা এদেশের মানুষের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা না দিয়ে দমনের পথ বেছে নেয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সৈন্যরা এদেশের নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হত্যা করে অসংখ্য বাঙালিকে। এ বর্বরতা বাঙালিদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। তারাও প্রতিরোধের পথ বেছে নেয়। 

২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালিদের অসীম সাহস, দেশপ্রেম এবং বীরত্বের কাছে পরাজিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে লে. জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। ঐ দিন বাংলার আকাশে বিজয়ের লাল সূর্য উদিত হয়। চারদিকে মানুষের মনে মুক্তির আনন্দ হিল্লোল জেগে ওঠে। '

আরও পড়ুন : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ - প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট

৭১-এর বিজয়োল্লাস : 

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিল মুক্তির লাল টকটকে সূর্য। স্বজন হারানোর বেদনা ভুলে মানুষ সেদিন মুক্তির আনন্দে রাজপথে নেমেছিল। মুক্তির উল্লাসে মুখরিত ছিল বাংলার আকাশ-বাতাস। ১৯৭১ সালের এই বিজয়ের দিনটি ছিল বাঙালির মহা উৎসবের দিন। এর চেয়ে আনন্দের দিন বাঙালির জীবনে আর আসেনি।

বিজয় দিবস ও আমাদের প্রত্যাশা : 

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সূচিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পেরিয়ে গেছে। রাজনৈতিক মুক্তি অর্জিত হলেও দেশের আপামর জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আজো অর্জিত হয়নি। প্রতিবছর বিজয় দিবসের আদর্শ আমাদের কর্ণকুহরে যে বার্তা শোনায়, বাস্তব জীবনে আমরা তা ভুলে যাই বার বার। 

তবু বিজয়দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অদম্য প্রতিজ্ঞায় ঋদ্ধ হয়ে উঠি আমরা। আমরা বিজয়ের তাৎপর্যকে যথার্থতা দানে সফল হলেই এ দিবস উদযাপনের সার্থকতা ফুটে উঠবে।

বিজয় দিবসের উৎসব : 

১৬ ডিসেম্বর ভোরে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটির শুভ সূচনা হয় । বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মহাসমারোহে বিজয় দিবস পালন করে। ১৫ ডিসেম্বর রাত থেকেই বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি চলে। দেশের সব স্কুল-কলেজ, বাড়ি, দোকানপাট, ভবন ও যানবাহনে শোভা পায় লাল-সবুজ পতাকা। স্কুল-কলেজ কিংবা রাস্তায় রাস্তায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। 

স্বাধীনতার আনন্দে সব শ্রেণির মানুষ যোগ দেয় এসব অনুষ্ঠানে। কোথাও কোথাও বসে বিজয় মেলা। সরকারিভাবে এদিনটি বেশ জাঁকজমকভাবে উদযাপন করা হয়। ঢাকার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিরোধীদলীয় নেতা-নেত্রী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ এই কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। 

অনেক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বিশেষ ক্রোড়পত্র। বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠান । বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের আত্মার শান্তি ও দেশের কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা করা হয় । শহরে সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় আলোকসজ্জার । দেশজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয় দিবস উদ্যাপিত হয় ।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য : 

বাঙালির জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন ১৬ই ডিসেম্বর। শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অর্জিত বিজয় আমাদের চেতনায় চির অম্লান। আমাদের জাতীয় জীবনে তাই এ বিজয় দিবসের বিশেষ তাৎপর্য আছে। এ বিজয় আমাদের এনে দিয়েছে মুক্ত জীবনের স্বাদ। আমরা এখন স্বাধীন। এ বিজয়ের ফলে আমরা পেয়েছি একটি পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। 

পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছি নিজেদের অবস্থান। এ পাওয়া আমাদের অনেক বড় পাওয়া। এ বিজয় আমাদের শিখিয়েছে অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। সমগ্র বিশ্বের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের প্রেরণা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর অশিক্ষার বিরুদ্ধে নতুন সংগ্রামে বিজয় দিবস আমাদের প্রেরণার উৎস। 

অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে বাঙালি জাতি অবতীর্ণ হয়েছিল '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে। লাখো শহিদের সেই স্বপ্ন-সাধ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই বিজয় দিবসের চেতনা চিরজাগ্রত রাখা সম্ভব।

আরও পড়ুন : স্বদেশ প্রেম - রচনা : [ ২০ পয়েন্ট ]

বিজয় দিবস উদযাপন : 

বাঙালি জাতি এদিনই স্বাধীন জাতি হিসেবে দীর্ঘদিনের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে সগৌরবে জয়যাত্রা শুরু করেছে। তাই প্রতিবছর যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এ দিনে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ দিনটি সরকারি ছুটির দিন। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোভাযাত্রা, র‍্যালি, আলোচনা সভা, সেমিনার, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রভৃতির মাধ্যমে দিবসটিকে উদযাপন করে থাকে ।

বিজয় দিবসের চেতনাঃ

বিজয় দিবস একটি অমূল্য ঐতিহাসিক দিন, যা আমাদের মনে জাগায় স্বাধীনতা, সাহস এবং জনগণের একত্রীকরণের চেতনা। এই দিনটি আমাদেরকে জাতীয় গর্ব এবং অভিমান দেয়, সেই গর্বের সাথে আমরা স্মরণ করি কীভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা বিপ্লব, সংগ্রাম এবং বিজয়ের জন্য অসংখ্য বিপন্ন করেছিলেন।

বিজয় দিবসের চেতনা আমাদের মনে জাগিয়ে দেয় যে সংগ্রাম, সঙ্গে একত্রিত জনগণের সংঘর্ষ এবং অপরাজেয়তা পরাজিত করতে সক্ষম হয়। এই চেতনা আমাদের মনে জাগিয়ে দেয় যে কোন প্রতিবাদ, যুদ্ধ, বিপণ্ড বা অত্যাচারের বিরুদ্ধে সত্য, ন্যায় এবং মানবিকতা জয়লাভের জন্য সম্পূর্ণ সংগ্রাম করা উচিত।

আমাদের করণীয়: 

অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের পর আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাই বিজয় দিবস আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আমরা এদিন উদযাপনের পাশাপাশি শহিদদের ত্যাগের প্রতি সম্মান জানাব ।

উপসংহার : 

বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের বিজয়। এ বিজয় বাঙালি জাতির অবিস্মরণীয় গৌরবের ধন। যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস পালন করা হয়। বিজয়ের চেতনা জাতির সব কর্মকাণ্ডে প্রবাহিত করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad