(toc) Table Of Contens
উপস্থাপনা
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এ দেশটি নদীবাহিত পলিমাটিতে তৈরি একটি বদ্বীপ। বিশাল গঙ্গা-যমুনা-মেঘনার প্রবাহ মিলিয়ে সাতশত নদ-নদী বয়ে গেছে এদেশের ওপর দিয়ে।
তার ওপর এদেশের দক্ষিণাংশ জুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগর; যার আকার অনেকটা ওল্টানো ফানেলের মতো। ফলে সাগরে ঝড় উঠলেই প্রবল দক্ষিণা হাওয়ার তোড়ে সমুদ্রের লোনা পানি উঁচু হয়ে গড়িয়ে পড়ে নিচু উপকূলে। আর এতেই সৃষ্ট হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধরন
ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহকে প্রধান তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায় । এগুলো হলো- ১. বায়ুমণ্ডলে সংঘটিত দুর্যোগ (কালবৈশাখী ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, টর্নেডো, খরা, অতিবৃষ্টি প্রভৃতি)। ২. ভূপৃষ্ঠে সৃষ্ট দুর্যোগ (বন্যা, ভূমিধস, নদীভাঙন, ভূ-অভ্যন্তরস্থ পানিদূষণ প্রভৃতি)। ৩. ভূ-গর্ভস্থ দুর্যোগ (ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত)। এসব দুর্যোগের মধ্যে ঝড়-ঝঞ্ঝা, নদীভাঙন, খরা, ভূমিধস, ভূ-গর্ভস্থ পানিদূষণ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি।
কালবৈশাখি
বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই নানা দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে থাকে। কালবৈশাখির ফলে বাংলার বহু এলাকা বিধ্বস্ত হয়। ঝড়ের তাণ্ডবলীলায় গাছপালা, ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। মারা যায় হাজার হাজার গরু বাছুর, পাখপাখালি, মানুষ হয় অসহায়। কিছুদিন পূর্বে এমনি এক কালবৈশাখির শিকার হয়েছিল মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার জনসাধারণ।
১৯৮৯ সালে সুন্দরবন এলাকা, ১৯৯১ সালে গাজীপুর এবং ১৯৯৬ সালে টাঙ্গাইলের অনেক থানা বিধ্বস্ত হয়েছে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে। নিশ্চিহ্ন হয়েছে বহু গ্রামগঞ্জ । প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশের কোনো না কোনো অঞ্চলের ওপর দিয়ে এরকম কালবৈশাখি বয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড়
ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের তীব্রতা হয় অনেক বেশি। কখনো কখনো তা ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায়। সমুদ্রে সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাসের ৷ প্রতিবছরই এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বরে বাংলাদেশে ছোটো-বড়ো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। প্রবল শক্তিসম্পন্ন এ ঝড়ে বাংলাদেশে সবেচেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল এবং সমুদ্র তীরবর্তী দ্বীপসমূহ ।
আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য - রচনা : ২০ পয়েন্ট
সাইক্লোন বা জলোচ্ছ্বাস
সাইক্লোন বা জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় বছরই জলোচ্ছ্বাস হয়। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিগত ১৮৫ বছরে বাংলাদেশে ৫১ বার সাইক্লোন সংঘটিত হয়েছে। ১৯৭০ সালের সাইক্লোন জলোচ্ছ্বাস সবাইকে হতবাক করে দেয়। সেই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল আড়াইশ কিলোমিটার। রুদ্র কালনাগিনীরূপে ধ্বংসযজ্ঞ চলায় পাঁচ লাখেরও বেশি লোক মারা যায় জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে।
১৯৮৫ সালেও বাংলাদেশের দক্ষিণের দ্বীপাঞ্চলে হানা দেয় সর্বনাশা সাইক্লোন। সাইক্লোনের প্রচণ্ড আঘাতে উড়ির চর এলাকা বিধ্বস্ত হয়। এ সময়ে প্রায় দেড় লাখের মতো লোক প্রাণ হারায় এবং ধ্বংস হয় জমির ফসল ও অসংখ্য ঘরবাড়ি । ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে সংঘটিত হয় স্মরণকালের আরও এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। বাংলাদেশের ১৬টি জেলার প্রায় ৪৭টি থানা বিধ্বস্ত হয়।
২০ হাজার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে এই ঝড় হ্যারিকেনের রূপ নিয়ে ২০ ফুটেরও বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। ঐ প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসে প্রায় পাঁচ লাখ লোক মারা যায়। এক পরিসংখ্যানে জানা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার সম্পদ এই দানবীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিনষ্ট হয়েছে। সম্প্রতি আইলা, সিডর প্রভৃতি দুর্যেঅগে এ ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হয়।
নদীভাঙন
অনাবৃষ্টি বা খরা
টর্নেডো
আরও পড়ুন :- রচনা : মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার - ২০ পয়েন্ট
লবণাক্ততা
শিলাবৃষ্টি
ভূমিকম্প
অতিবৃষ্টি
আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ - প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট
বন্যা
নদীর গভীরতা হ্রাস
উজানের পানি
বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর হ্রাস
আরও পড়ুন :- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার - রচনা ২০ পয়েন্ট
ভারত কর্তৃক সৃষ্ট সমস্যা
অমসৃণ নদী পথ
দুর্যোগ মোকাবেলার উপায়
বিভিন্ন উপায়ে এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায়। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রধান প্রধান উপায়গুলো নিম্নরূপ -
১.দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীবাহিনী গঠন করা ।
২. জাতীয় ভিত্তিতে দুর্যোগ মোকাবিলা করার নীতিমালা, পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করা।
৩. জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা।
৪. পরীক্ষিত পদ্ধতির ভিত্তিতে যথাসময়ে সতর্কবাণী দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৫. দুর্যোগ ঘটার পর দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি ও চাহিদা নিরূপণের ব্যবস্থা করা। ৬. তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থাকে উন্নত করা ।
৭. দুর্যোগপূর্ণ এলাকাতে আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা ।
৮. বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগানো ।
৯. বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহকে কাজে লাগানো।
১০. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে কাজ করার সুযোগ দানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং
১১. শিক্ষার মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা ইত্যাদি ।
উপসংহার
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেকোনো দেশের জন্য অভিশাপস্বরূপ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ একদিকে যেমন জান-মালের ক্ষতি করে অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করে। তাই বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই উচিত দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য সরকারি ও ক বেসরকারিভাবে বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। কিন্তু শুধু প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ দ্বারা কখনো দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব নয়, তাই এ সকল উদ্যোগ বাস্তবায়নে আমাদের সকলকে দৃঢ়চিত্তে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে ।