কুরআন সুন্নাহর আলোকে - ইসলামী আকীদার গুরুত্ব

উপস্থাপনা : মহান আল্লাহর একত্ববাদ এবং তিনার নির্দেশিত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন এবং বিধানাবলি মান্য করার নাম হলো ইসলামী আকিদা। নিম্নে ইসলামী আকিদার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হলো।

ইসলামী আকিদার গুরুত্ব :- 

ইসলামী আকিদার গুরুত্বের দিকগুলো হচ্ছে- 

১. নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর ইবাদত :- 

ইসলামী আকিদা প্রতিটি মুসলিমকে নিরঙ্কুশভাবে এবং শিরকমুক্তভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে শেখায়। মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যও তাই। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

١ وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ مَا يُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ  ِرزْقٍ وَمَا أُريدُ اَنْ يُطْعِمُونِ.

٢- وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتِ

 ٣- وَقَضَى رَبِّكَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ.

২. দৃঢ় ঈমান অর্জন :- 

ইসলামী আকিদার অধ্যয়ন মুসলমানদেরকে দৃঢ় ও নির্ভেজাল ঈমানের অধিকারী হতে সহায়তা করে। এর ফলে মানুষ পার্থিব ও পরকালীন জীবনে সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا اِنْفِصَامٌ لَهَا.

বস্তুত যে ব্যক্তি নির্ভেজাল ও সুদৃঢ় ঈমানের অধিকারী হয় সে যাবতীয় ভ্রষ্টতা ও বাতিল মত ও পথ থেকে সুরক্ষিত থাকে। 

৩. মুসলিম উম্মাহর অখণ্ড ঐক্য অর্জন :- 

নির্ভেজাল ইসলামী আকিদার ফলে মুসলিম উম্মাহর অখণ্ড ঐক্য সৃষ্টি হতে পারে। মুসলিম উম্মাহর চিন্তার বৈসাদৃশ্য, দ্বন্দ্ব ও দর্শনগত পার্থক্য থেকে মুক্ত থাকতে সক্ষম হয়। এর ফলে মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ সংঘাত, বিতর্ক ও হানাহানি দূর হতে পারে। মুসলমানদের জীবন ও সম্পদ পরস্পরের নিকট মর্যাদাবান হতে পারে। যেমন রাসূল (স) এ সম্পর্কে বলেন-

-١ أُمِرْتُ اَنْ اُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لَا ِل الله فَإِذَا قَالُواها عَصَمُوا مِنِّى دِمَانَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ إِلا بِحَقِهَا .

-٢- مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إلا الله وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مِنْ دُونَ اللهِ حَرُمَ مَالُهُ وَدَمُه وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ .

আরও পড়ুন :- আকাইদ বলতে কি বুঝায় | এর আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ কি

৪. পরকালীন শাস্তি থেকে পরিত্রাণ :- 

বিশুদ্ধ ইসলামী আকিদা মানুষকে কেয়ামতের ভয়াবহ শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পথ নির্দেশনা প্রদান করে। যেমন রাসূল (স) ইরশাদ করেন-

عَنْ جَابِرٍ (رض) أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ لَقِى لا يشرك به شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَةَ يُشْرِكُ به شَيْئًا دخَلَ النَّار

বস্তুত আকাইদের যথার্থ জ্ঞান ব্যতিরেকে বিবিধ অজ্ঞাত, জ্ঞাত শিরক থেকে আত্মরক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে-

قال الله تعالى يا ابْنَ آدَمَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقَرَاب الْاَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيْتَنِي لَا تَشْرِكَ بِي شَيْئًا لاتَيْتُكَ بِقَرَابِهَا مَغْفِرَةٌ

৫. একত্ববাদের যথার্থ শিক্ষা :- 

আকাইদশাস্ত্র একত্ববাদের যথার্থ শিক্ষা প্রদান করতে সাহায্য করে। এর দ্বারা মানুষ মহান আল্লাহর সত্ত্বা, গুণাবলির ব্যাপ্তি, তাঁর প্রতি বিশ্বাসের দাবি ইত্যাদি সবিস্তারে জানতে পারে। ফলে মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সম্ভাব্য সকল শিরক থেকে মুক্ত থেকে নিরঙ্কুশভাবে মহান আল্লাহর ইবাদত করতে সক্ষম হয়। যেমন আল কুরআনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বর্ণিত হয়েছে- والهكم إله واحد لا اله الا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ

উপসংহার :- 

বিশুদ্ধ আকিদা অর্জনের লক্ষ্যে কুরআন ও হাদীসের আলোকে আকিদাশাস্ত্র অধ্যয়ন ও বাস্তবজীবনে এর প্রতিফলন অতীব জরুরি। কেননা পৃথিবীর শান্তি ও সাফল্য এবং পরকালে আযাব থেকে মুক্তি অর্জনের জন্য ইসলামের বিশুদ্ধ আকিদা পোষণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad