রোযা থাকা অবস্থায় রমযানের বিধি লঙ্ঘনের কারণে রোযাদারের ওপর অতিরিক্ত জরিমানাস্বরূপ যে কার্য সম্পাদন করতে হয়, তাকে রোযার কাফফারা বলে।
রোযার কাফ্ফারা :-
১. একাধারে দু'মাস রোযা রাখতে হবে।
২. এতে অক্ষম হলে ৬০ জন মিস্কীনকে খানা খাওয়াতে হবে।
৩. এতেও অক্ষম হলে একজন গোলাম আযাদ করতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে-
فصيام شهرين متتابعين او اطعام ستين مسكينا أو تحرير رقبة.
রোযার কাফফারার পরিমাণ :-
রোযার কাফফারার পরিমাণ নির্ণয়ে ইমামদের মাঝে নিম্নোক্ত মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। যেমন -
১. মালেক ও শাফেয়ীর অভিমত :-
ইমাম মালেক ও শাফেয়ী (র)-এর মতে, প্রত্যেক মিসকিনকে এক সা এর চারভাগের এক ভাগ দিতে হবে। এ হিসেবে ৬০ জন মিসকিনকে মোট ১৫ সা দিতে হবে। যার বর্তমান ওজন ১ মণ ১২.৫০ সের গম।
দলীল : তাঁদের দলীল হলো-
كَمَا فِى اَبِيْ دَاوُدَ فَأْتِيَ بِعِرْقٍ قَدْرُهُ خَمْسَةُ عَشَرَ صَاعًا .
২. আহনাফের অভিমত :-
ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে, প্রত্যেক মিসকিনকে অর্ধ সা দিতে হবে। এ হিসেবে ৬০ জন মিসকিনকে সর্বমোট ৩০ সা দিতে হবে। যার বর্তমান ওজন ২ মণ ২৫ সের গম ।
দলীল : তাঁর দলীল হলো-
قَوْلُهُ تَعَالَى : فَصِيامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ أَوْ إِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَة
٢- كَمَا فِى مُسْلِمٍ فَجَاءَ عِرْقَانِ فِيهِما طَعَامُ فَاَمَرَهُ أَنْ يَتَصَدَقَ بِهِ
তৎকালীন সময়ে প্রতি عرق সমান ১৫ সা ছিল। তাই দুই عرق সমান ৩০ সা হবে ।
আরও পড়ুন :- রোজা ভঙ্গের কারণ এবং রোযা অবস্থায় যেসব কাজ বৈধ ও অবৈধ
মালেক ও শাফেয়ীর দলীলের প্রত্যুত্তর :
ইমাম মালেক ও শাফেয়ীর উল্লিখিত হাদীসের প্রত্যুত্তরে বলা হয়-
১. আগন্তুক লোকটি অর্থনৈতিক দিক থেকে অভাবী হওয়ায় প্রাথমিকভাবে তাকে এক عرق বা বড় ধরনের এক ঝুড়ি খেজুর সদকা করার জন্য বলা হয়েছে। পরবর্তীতে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসলে তাকে আরো এক عرق সদকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
২. মূলত ঐ লোকটিকে প্রদানকৃত সদকার খেজুরগুলো কাফফারা হিসেবে আদায় করার জন্য দেয়া হয়নি; বরং তা দেয়া হয়েছে তার পরিবারের খরচের জন্য । যেমন হাদীসে এসেছে- اطعمه اهلك অর্থাৎ, এগুলো তুমি তোমার পরিবারের লোকদেরকেই খেতে দাও ।
স্ত্রীর ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে কিনা:-
স্ত্রীর ওপর কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার বিধান : কোনো স্বামী রোযা অবস্থায় স্ত্রীসহবাস করলে শরীয়ত তার ওপর কাফফারা ধার্য করেছে। এখন রোযা অবস্থায় স্ত্রীসহবাস করলে স্বামীর ন্যায় স্ত্রীর ওপরও কাফফারা ওয়াজিব হবে কিনা, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য নিম্নরূপ-
১. ইমাম খাত্তাবী (র) বলেন- যদি সহবাসে স্ত্রীরও ইচ্ছা থাকে, তবে রোযা অবস্থায় সহবাস করলে স্বামীর ন্যায় স্ত্রীর ওপরও কাফফারা ওয়াজিব হবে। আর যদি স্ত্রীকে সহবাসে বাধ্য করা হয়, তবে তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না। তবে পরবর্তী সময়ে উক্ত রোযার কাযা দেয়া উত্তম হবে।
২. দাউদ যাহেরী (র)-এর মতে- স্ত্রীর ওপর কোনো অবস্থাতেই কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
৩. কেউ কেউ বলেন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য একটি কাফফারা যথেষ্ট হবে ৷
প্রথম অভিমতটি জমহুর আলেমগণ সমর্থন করে বলেছেন, এ মতটি অধিক বিশুদ্ধ, যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য ।