হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর জীবনী

১. নাম ও পরিচয় :- 

হযরত আবু হোরায়রা (রা)-এর প্রকৃত নাম নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। তবে এক্ষেত্রে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য অভিমত হচ্ছে, ইসলামগ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম ছিল আবদে শামস অথবা আবদে আমর। আর ইসলামগ্রহণের পর তাঁর নাম হয় আবদুল্লাহ অথবা আবদুর রহমান। উপনাম আবু হোরায়রা। পিতার নাম সাখর। মাতার নাম উম্মিয়া বিনতে সাফীহ অথবা মাইমুনা । 

২. নিসবত ও গোত্র পরিচিতি :- 

ঐতিহাসিকগণ ধারণাপ্রসূত মন্তব্য করে বলেন, সম্ভবত তাঁর পূর্বপুরুষদের কারো নাম দাউস থাকায় তাঁকে দাউসী বলা হতো। অথবা তাঁকে আযদী বলা হতো। কারণ তিনি দক্ষিণ আরবের আযদ গোত্রের মুসলিম ইবনে ফাহম বংশোদ্ভূত ।

৩. জন্ম :-

হযরত আবু হোরায়রা (রা) ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে তথা রাসূল (স)-এর নবুয়তের ১৪ এবং হিজরতের ২৭ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন ।

৪. আবু হোরায়রা নামে প্রসিদ্ধিলাভের কারণ :- 

আরবি ভাষায় اب শব্দের অর্থ- পিতা আর هريره শব্দটি هره-এর تصغير  অর্থ- বিড়ালছানা। সুতরাং  ابو هريره শব্দের অর্থ- বিড়ালছানার পিতা। আরবদের ব্যবহারে জীবজন্তু বা পদার্থের পূর্বে اب শব্দ যুক্ত হলে তার অর্থ হয় মালিক। সুতরাং ابو هريره অর্থ- বিড়ালছানার মালিক। উল্লেখ্য, তিনি বিড়ালছানা খুব ভালোবাসতেন এবং পুষতেন।

একদিন তিনি রাসূল (স)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। এ সময় অকস্মাৎ তাঁর জামার আস্তিন হতে একটি বিড়ালছানা বের হয়ে পড়ল। রাসূল (স) তখন রসিকতা করে তাঁকে ابو هريره বলে সম্বোধন করেন। প্রিয়নবীর মুখনিঃসৃত বাণীতে আবু হোরায়রা (রা) নিজেকে গর্বিত মনে করেন এবং এটাকে নিজের নাম বানিয়ে নেন। এরপর থেকে তিনি ابو هريره নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

আরও পড়ুন :- হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এর জীবনী - PDF

৫. ইসলামগ্রহণ :- 

সর্বসম্মত মতানুসারে তিনি খায়বার যুদ্ধের পূর্বে ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক হিজরী সপ্তম সালে ৩৪ বছর বয়সে ইসলামগ্রহণ করেন এবং খায়বার যুদ্ধের সমাপ্তি পর্বেও অংশগ্রহণ করেন।

৬. আসহাবে সুফফার সদস্য :- 

হাদীসের জ্ঞানার্জন এবং ইবাদত বন্দেগীতে সর্বদা লিপ্ত থাকার উদ্দেশ্যে কিছুসংখ্যক সাহাবী রাসূল (স)-এর পবিত্র দরবারে সর্বদা থাকতেন । এদেরকে আসহাবে সুফফা বলা হতো। আর তাঁদের অন্যতম ছিলেন হযরত আবু হোরায়রা (রা) ।

৭. রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন :- 

হযরত ওমর (রা) তাঁকে বাহরাইন প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। পরবর্তী মুয়াবিয়া (রা)-এর খেলাফত যুগে মদিনার শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়েছিলেন। 

৮. রাসূলের সাহচর্য :- 

ইসলামগ্রহণের পর আবু হোরায়রা (রা) সর্বদা রাসূল (স)-এর সাহচর্যে থাকতেন। তিনি ছিলেন আহলে সুফফার স্থায়ী সদস্য। ইবনুল আসীর (র) বলেন, ইসলামগ্রহণের পর তিনি রাসূলের সাথে সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন । 

৯. বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা :- 

সাহাবায়ে কেরামের মাঝে তিনিই সর্বাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন। বদরুদ্দীন আইনী (র) বলেন, তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫৩৭৪টি। কেউ কেউ বলেন, তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫৫৭৫টি। তন্মধ্যে মুত্তাফাকুন আলাইহি হাদীস ৩২৫টি। শুধু বুখারীতে ৭৯টি এবং মুসলিমে ৯৩টি হাদীস স্থান পেয়েছে। তাঁর থেকে আট শতাধিক সাহাবী ও তাবেয়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১০. ইন্তেকাল :- 

হযরত আবু হোরায়রা (রা) ৬৭৩ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক হিজরী ৫১ সালে ৭৮ বছর বয়সে মদিনার অদূরে কাসবা নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। হযরত ওয়ালীদ ইবনে ওকবা ইবনে আবু সুফিয়ান (রা) তাঁর জানাযার ইমামতি করেন।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad