১. নাম ও পরিচয় :-
তাঁর নাম মুয়াবিয়া। উপনাম আবু আবদুর রহমান। পিতা সখর, আবু সুফিয়ান উপনামে প্রসিদ্ধ। মাতা হিন্দা বিনতে উতবা । ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন উমাইয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
২. ইসলামগ্রহণ :-
মক্কা বিজয়ের দিন তিনি পিতার সাথে একত্রে ইসলামগ্রহণ করেন। অন্য এক বর্ণনা মতে, তিনি হোদায়বিয়ার সন্ধির সময় ইসলামগ্রহণ করেন; কিন্তু পিতার ভয়ে তা প্রকাশ করেননি।
৩. জেহাদে অংশগ্রহণ :-
তিনি হোনাইন ও তায়েফ যুদ্ধে রাসূল (স)-এর সাথে ছিলেন। হযরত আবু বকর (রা)-এর যুগে তিনি শামের অভিযানসমূহে অংশগ্রহণ করেন এবং ওমর (রা)-এর খেলাফতকালে রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
৪. ইসলামে তাঁর মর্যাদা :-
ইসলামগ্রহণের পর রাসূল (স) তাঁকে অহী লেখার দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। তাঁর পিতার ও তাঁর মন জয়ের জন্য রাসূল (স) হোনাইনের যুদ্ধ হতে একশতটি উদ্ভী ও চল্লিশ আওকিয়া স্বর্ণদান করেন। তাঁর নিকট রাসূল (স)-এর একটি চাদর, একটি জামা, কয়েকটি চুল এবং কিছু নখের কাটা অংশ সংরক্ষিত ছিল।
৫. রাসূলের সাথে সম্পর্ক :-
ক. ঊর্ধ্বতন ষষ্ঠ পুরুষের দিক থেকে তিনি রাসূল (স)-এর বংশের লোক ।
"খ. রাসূলের শ্যালক । তাঁর বোন উম্মে হাবীবাকে রাসূল (স) বিবাহ করেন।
গ. মহানবী (স)-এর কাতেবে অহীর অন্যতম সদস্য ছিলেন।
আরও পড়ুন :- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর জীবনী
৬. শাসনক্ষমতা গ্রহণ :-
হযরত ওমর (রা) তাঁকে দামেশকের শাসক এবং হযরত ওসমান (রা) তাঁকে সমগ্র সিরিয়ার শাসক নিয়োগ করেন। হযরত আলী (রা)-এর শাহাদাত লাভের পর তিনি ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র মুসলিম জাহানের রাজা হন। তাঁর সময় সমগ্র আফ্রিকা মুসলিম শাসনের অধীনে আসে এবং পূর্ব দিকে বুখারা, সমরকন্দ ও সিন্দুর সীমা পর্যন্ত রাজ্য বিস্তৃত হয়।
৭. আলী (রা)-এর সাথে বিরোধ :-
হযরত আলী (রা) খেলাফতে আসীন হয়ে প্রশাসনে বহু রদবদল করেন। মুয়াবিয়া (রা)-কে সিনিয়র গভর্নরের পদ থেকে অপসারণ করে তিনি সাহল ইবনে হানীফ (রা)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন। কিন্তু মুয়াবিয়া (রা) এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে স্বপদে বহাল থাকেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
৮. হাদীস বর্ণনা :-
তিনি রাসূল (স) থেকে সর্বমোট ১৬৩টি হাদীস বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে متفق عليه হাদীস হচ্ছে ৪টি। এছাড়া এককভাবে বুখারীতে ৮টি এবং মুসলিমে ৫টি হাদীস স্থান পেয়েছে।
৯. ইন্তেকাল ও দাফন :-
দীর্ঘ ২০ বছর রাষ্ট্র শাসনের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ৭৮ বছর বয়সে ৬০ হিজরী সালে দামেশকে লাকওয়া নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে দামেশকেই দাফন করা হয়। দেহাক ইবনে কায়েস তাঁর জানাযার ইমামতি করেন।