১. নাম ও পরিচয় :
তাঁর নাম যয়নব। উপনাম উম্মুল হেকাম। উপাধি উম্মুল মাসাকীন পিতার নাম জাহাশ। মাতার নাম উমায়মা বিনতে আবদুল মুত্তালিব। তিনি রাসূল (স)- এর ফুফু। এ হিসেবে যয়নব রাসূল (স)-এর ফুফাতো বোন। ইসলামের পূর্বে যয়নবের নাম ছিল- 'বাররাহ'। পরে রাসূল (স) তার নাম রাখেন যয়নব। তদ্রূপ জাহাশের পূর্ব নাম ছিল বুররাহ। রাসূল (স) তাঁর নাম রাখেন জাহাশ । যয়নব ছিলেন আসাদ গোত্রীয় নারী
২. ইসলামগ্রহণ :
তিনি ইসলামের প্রথম ভাগেই ইসলামগ্রহণ করেন। ইসলামগ্রহণ করার কিছুকাল পর মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করেন।
৩. প্রথম বিবাহ :
প্রথমে রাসূল (স) নিজেই তাঁর ফুফাতো বোন যয়নব (রা)-কে স্বীয় আযাদকৃত দাস এবং পালক পুত্র যায়েদ ইবনে হারেসার সাথে বিবাহ দেন। চতুর্থ হিজরীতে এ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বিবাহ সুখের হলো না। হযরত যায়েদের মনে হলো, যয়নব তাঁর যথোচিত সম্মান করেন না এবং হযরত যয়নবও মনে করতেন হযরত যায়েদ মর্যাদায় তাঁর সমতুল্য নন।
অতঃপর যায়েদ রাসূল (স)-এর নিকট যয়নবকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে আরজ করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! যয়নব আমার মুখের ওপর কথা বলে (তর্ক করে) আমি তাঁকে তালাক দিতে চাই।' কিন্তু রাসূল (স) তাঁকে বারবার বোঝানোর পরও হযরত যায়েদ (রা) তাঁকে তালাক দিয়ে দেন।
আরও পড়ুন :-হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ এর জীবনী
৪. রাসূল (স)-এর সাথে বিবাহ :
হযরত যায়েদ (রা) হযরত যয়নব (রা)-কে তালাক দেয়ার পর রাসূল (স) তাঁকে বিবাহ করার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করেন। কিন্তু পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করলে মানুষ খারাপ মনে করবে এ চিন্তা মানসপটে ভেসে ওঠে তাই তিনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। তখন আয়াত নাযিল হলো- 'হে নবী! আপনি আপনার মনে তা-ই গোপন করছেন, আল্লাহ যার প্রকাশ করেছেন (যে পালক পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে আপনাকেই পত্নীত্বে গ্রহণ করতে হবে)
আর মানুষকে (মুনাফিকদের) ভয় করছেন (যে, তারা তজ্জন্য আপনার নিন্দা করবে) ফলত (উচিত যে,) আপনি আল্লাহকেই ভয় করবেন, আল্লাহ তারই সমধিক যোগ্য। অনন্তর যখন যায়েদ (রা) তাঁর (যয়নবের সম্বন্ধে তালাকের) ইচ্ছা পূর্ণ করলেন, (তখন) আমি তাঁকে যয়নবকে বিয়ে করলাম। যাতে মুমিনদের মনে নিজেদের পালক পুত্রের স্ত্রীদের বিবাহের ব্যাপারে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব না থাকে।' (সূরা আহযাব)
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ আগমনের পর ৫ম হিজরীতে উভয়ের মধ্যে বিবাহ বন্ধন স্থাপিত হয়। তখন হযরত যয়নব (রা)-এর বয়স ৩৫ এবং রাসূল (স)-এর বয়স ৫৮ বছর। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, দ্যুলোকে (স্বর্গলোকে) স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাঈল (আ) এবং অপর দু'জন ফেরেশতার সাক্ষ্যে তাঁর ইজাব কবুল করিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করেন।
আরও পড়ুন :-হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এর জীবনী - PDF
হযরত যয়নবের সাথে বিবাহের অলিমা কিছু আড়ম্বের সাথে হয়েছিল। ইবনে সাদ (র) বলেন, হযরত যয়নবের বিবাহের ভোজ রাসূল (স) যেমন ধরনের করেছিলেন, অন্য কোনো স্ত্রীর বিবাহে তেমন ধরনের করেননি এ বিবাহের অলিমার ভোজের পর পর্দা সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হয়। (সূরা আহযাব : আয়াত- ৫৬)। তখন রাসূল (স) সকলের দরজায় কম্বলের পর্দা ঝুলিয়ে দেন।
৫. গুণাবলি :
তিনি অতি উদারচিত্তা, মুক্তহস্তা, আল্লাহর ওপর নির্ভরকারিণী, সন্তুষ্টচিত্তা নারী ছিলেন। তিনি ছিলেন সত্যবাদিনী, ন্যায়পরায়ণ নারী। তিনি পিতৃহীনগণ এবং অভাবগ্রস্তদের প্রতিপালনকারিণী এবং নিঃস্বগণের আশ্রয়স্থল ছিলেন। ইবনে সা'দ (র) বলেন, 'জাহাশ কন্যা হযরত যয়নব (রা) একটিও দিরহাম ও দীনার রেখে যাননি। হযরত আয়েশা (রা) অনেক সময় বলতেন, সৎগুণ সম্বন্ধে রাসূল (স)-এর নিকট আমার যে মর্যাদা ছিল, যয়নব ব্যতীত রাসূল (স)-এর অন্য কোনো পত্নীর তা ছিল না ।
মুহাম্মদ ইবনে ওমর বলেন, ‘একদিন হযরত যয়নব রাসূল (স)-এর নিকট নিবেদন করলেন, ‘আপনার অন্য পত্নী এবং আমার মধ্যে পার্থক্য হলো, তাঁরা পিতা, ভ্রাতা, আত্মীয়স্বজনের অভিভাবকত্বে আপনার সাথে বিবাহিত হয়েছেন, কিন্তু আল্লাহ স্বৰ্গলোক হতে আমাকে আপনার পতিত্বে অর্পণ করেছেন।' তিনি এতই দানশীলা ছিলেন যে, দানের জন্য তাঁকে ‘উম্মুল মাসাকীন' বলা হতো ৷
আরও পড়ুন :-হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর জীবনী
৬. হযরত যয়নব বিনতে জাহাশের বিবাহের বৈশিষ্ট্যাবলি :
এ বিবাহের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন-
১. স্বয়ং আল্লাহর নির্দেশে এ বিবাহ সংঘটিত হয়েছে।
২. পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করা যাবে না, জাহেলী যুগের এ কুসংস্কার রহিত করা হয়েছে।
৩. দাস এবং স্বাধীনদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে হবে।
৪. পর্দার আয়াত এ বিয়েতে অবতীর্ণ হয় ।
৭. হাদীসশাস্ত্রে তাঁর অবদান :-
হাদীসশাস্ত্রে তিনি বিরাট অবদান রেখে গেছেন। রাসূল (স) থেকে তিনি বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর থেকে তাঁর ভাই হযরত মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (রা), হযরত আয়েশা (রা), হযরত উম্মে হাবীবা (রা), হযরত যয়নব বিনতে আবু সালামা (রা), হযরত কাসেম ইবনে মুহাম্মদ (র) প্রমুখ
৮. ইন্তেকাল :
ওয়াকিদী (র) বলেন, তিনি ২০ হিজরী সনে হযরত ওমর (রা)-এর হাদীস বর্ণনা করেছেন । খেলাফতকালে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। হযরত ওমর (রা) তাঁর জানাযা পড়ান। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।