ভাবসম্প্রসারণ:সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ, তোমাদের শেখার সুবিধার্থে "সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে" ভাব সম্প্রসারণটি ৩টি বই থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো। তোমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে সহজ মনে হয় সেটাই শিখে নেবে।

সকলের তরে সকলে আমরা ভাবসম্প্রসারণ - ১

মূলভাব : শুধু আত্মোন্নয়ন নয়, সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন করতে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ মাত্রই জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করতে চায় শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে জীবনকে সার্থক করে তোলা যায় না মানুষের জীবনে সার্থকতা আসে অপরের সহযোগিতা, কল্যাণ ও উপকার সাধনের মাধ্যমে। পারস্পরিক সহযোগিতাই মানবজীবনের উন্নতির মূল। জীবনকে সুন্দর ও দীপ্ত রূপে গড়ে তুলতে হলে মনের সংকীর্ণতা পরিহার করা অপরিহার্য। সকলকে বঞ্চিত করে কখনো মনের বিকাশ সম্ভব নয়। 

ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসা দিয়ে অপরের মন জয় করা যায় এবং তখনই নিজের মন- মানসিকতার প্রসার ঘটে। মহৎ ব্যক্তিগণ বিশ্বমানবের। তাঁরা সকলের প্রিয়, সকলের আপনজন। তাঁরা অপরের মুখে হাসি ফোটানোয় সদা সচেষ্ট থাকেন এবং তাদের আনন্দ দেখে সুখী হন। অপরের জন্যে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে কখনো তাঁরা দ্বিধাবোধ করেন না। তাঁদের জীবন পুষ্পের ন্যায় পরার্থে উৎসর্গীকৃত।

মন্তব্য : পরোপকারের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত মহত্ত্ব। তাই আমরাও এ মহত্ত্ব অর্জনে সচেষ্ট হব।

আরও পড়ুন :- ভাব সম্প্রসারণ : সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই (২টি)  

সকলের তরে সকলে আমরা ভাবসম্প্রসারণ - 

মূলভাব : এ জীবন তখনই সার্থক হয়, যখন অপরের জন্য নিজকে বিলিয়ে দেয়া হয়।

সম্প্রসারিত ভাব : আমরা সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়েই আমরা মিলে মিশে বসবাস করছি। এ পৃথিবীতে এককভাবে কেউ আমরা পরিপূর্ণ নই। প্রতিটি মানুষ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। জীবনকে গতিময়, সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তোলার জন্য অপরের সাহায্য অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের নিকট ব্যক্তিস্বার্থই সবার ঊর্ধ্বে। অন্যের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে আমরা চাই না। মানুষ সামাজিক জীব। সকল মঙ্গল পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে। এককভাবে কেউ তা কামনা করতে পারে না। এ পৃথিবীতে মহৎ ও সজ্জন ব্যক্তিরা সদা পরহিতে আত্মদান করে গেছেন । এভাবেই তাঁরা হয়েছেন স্মরণীয় ও বরণীয়।

বস্তুত অন্যের মঙ্গল কামনার মধ্যে নিজেরও কল্যাণ নিহিত। আমি যদি অন্যের মঙ্গল চাই, সেও আমার মঙ্গল চাইবে। এভাবে পারস্পরিক সহমর্মিতা দ্বারা আমরা শান্তির পৃথিবী গড়তে পারি। অপরের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনায় শরীক হওয়াই তো মনুষ্যত্বের পরিচয় এবং এতেই পাওয়া যায় নিবিড় আনন্দ। পরার্থে জীবনকে বিলিয়ে দিলেই কেবল জীবনের পূর্ণতা আসে। জীবন সার্থক, সুন্দর এবং খাঁটি হয়।

মন্তব্য : কারো পক্ষে কখনো এককভাবে জীবন চালানো সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে পরার্থে আত্মনিবেদনের চেতনা সমুন্নত রাখতে হবে।

আরও পড়ুন :- ভাবসম্প্রসারণ : ইটের পর ইট মধ্যে মানুষ কীট

সকলের তরে সকলে আমরা ভাবসম্প্রসারণ - ৩

মূলভাব : মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অপরের কল্যাণের জন্যে, শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যে নয় ।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ মানুষের সাহায্য ছাড়া বাঁচতে পারে না। সৃষ্টির প্রারম্ভেই মানুষ একথা বুঝতে পেরেছে। পারস্পরি সাহায্যের নিশ্চয়তা বিধানের জন্যে তাই সেদিন তারা সমাজ গড়ে তুলেছিল। মানুষ এখনও সমাজ ছাড়া বাঁচতে পারে না, কিন্তু দেখা যায় সমাজে বসবাস করতে গিয়ে সব সময় দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই আছে। এ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পেছনে মূলত ব্যক্তিস্বার্থ বহুল পরিমাণে কাজ করে। 

কিন্তু এই ব্যক্তিস্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্যে এই মানব সমাজকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয় নি। তাদের প্রেরণ করা হয়েে অপরের কল্যাণের জন্যে এবং মঙ্গলের জন্যে। এই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যে আপন স্বার্থকে ত্যাগ করে, আপন সত্তাকে বিসর্জ দিয়ে এবং অহমিকাকে দমিত করে অপরের মঙ্গলের কথা ভাবার জন্যে সর্বদা সকলের কাজ করে যাওয়া উচিত। 

কেননা, আমরা যদি অপরের কল্যাণের কথা ভাবি, মঙ্গলের কথা ভাবি, তবে এ পৃথিবীতে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিবর্তে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করবে নিজেকে অপরের কল্যাণে উৎসর্গ করে এ পৃথিবীতে মহীয়ান হয়েছেন এমন মনীষীদের মধ্যে আলফ্রেড নোবেল, হাজী মুহাম্মদ মোহসীন মাদার তেরেসা প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad