বাংলাদেশে ইসলাম অথবা ইসলামের আগমন ও বিকাশ-রচনা

অবতরণিকা ঃ

প্রভাতের সোনালী সূর্য কিরণ যেভাবে সারা দুনিয়ায় বইয়ে দেয় আলোর ফোয়ারা, ঠিক তেমনি হেরার রশ্মি থেকে বিচ্ছুরিত কিরণ সারা বিশ্বে শান্তির বার্তা বইয়ে দিয়েছিল।

জাতীয় কবির ভাষায়-

“ইসলাম সে তো পরশ মানিক

তাকে কে পেয়েছে খুঁজি,

পরশে তাহার সোনা হল যারা 

তাহাদেরই মোরা বুঝি-

বাংলাদেশে ইসলামের আগমন :

আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ বিশ্বের অনন্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপ নয়, যদিও মুসলিম পরিবেশিত সবার দিক দিয়ে এটা কোন মুসলিম দ্বীপ মনে হয়। বাংলাদেশ সর্বপ্রথম মুসলমানদের আগমন কখন হয়েছিল তার সন তারিখ  নির্ণয় করা বড়ই দুঃসাধ্য কাজ। 

ঐতিহাসিক ধারা 

স্মরণাতীত কাল হতে আরব ও ভারতীয় বণিকদের মাঝে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। উপমহাদেশের অফুরন্ত ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্য-বিভবের সাথে তখন থেকেই আরবরা পরিচিত ছিল। বাংলাদেশে ইসলাম আগমনের ধারাগুলোকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে চারভাগে ভাগ করা যায়-

১. আরব বণিকদের দ্বারা।

২. খোলাফায়ে রাশেদা কর্তৃক বিশেষ জামাত প্রেরণ 

৩. কতিপয় ওলী ও দরবেশ দ্বারা।

৪. ইসলামের রাজনৈতিক বিজয়।

নিম্নে এতদসম্পর্কীয় আলোচনা করা হলো-

আরব বণিকদের দ্বারা :

ইসলামপূর্ব যুগ হতে আরব বণিকরা সামুদ্রিক পথে চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া যাবার পথে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়াতেন এবং পণ্য বিনিময় করতেন। এভাবে বাংলায় চট্টগ্রাম এবং তৎকালীন আসামের সিলেট তাদের যাতায়াতের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হত। তাই এ সময়ের সাহাবীদের মাঝে কেউ এ পথে ব্যবসার জন্য আসতে পারেন এটাই স্বাভাবিক। এসব ঐতিহাসিক অনুমান মোটেই অসম্ভব নয় । সুতরাং তাদের দ্বারা এদেশে ইসলাম আগমন করে ।

খোলাফায়ে রাশেদা কর্তৃক জামাত প্রেরণ :

তৎকালে (৬৩৬-৬৩৭) সালে হযরত ওমর (রা) কর্তৃক ওমান থেকে ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে কয়েকটি নৌ-অভিযান প্রেরিত হয়েছিল ।

প্রখ্যাত গবেষক ডঃ হাসান জামান স্বীয় গবেষণায় কয়েকটি জামাতের কথা উল্লেখ করেন । প্রথম দলের নেতা ছিলেন হযরত মামুন ও মুহাইমেন। তারা নিঃসন্দেহে তাবেয়ী ছিলেন। যদিও কোন কোন গবেষক দাবী করেছেন যে, তারা ছিলেন সাহাবী ।

কতিপয় ওলী ও দরবেশ দ্বারা :

এদেশে অসংখ্য ইসলাম প্রচারক সূফী, পীর, মাশায়েখ, ওলামাগণের প্রধান আপ্রাণ প্রচেষ্টায় অত্র এলাকায় ইসলামের প্রসার ঘটে এবং এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে যায়। এতে অত্র এলাকায় ইসলাম প্রচারে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তারা হলেন পীর-মাশায়েখ ও সুফীয়ানে কেরাম। 

তাঁদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা, চারিত্রিক গুণাবলি ও সাধারণ মানুষের সেবা প্রভৃতি গুণাবলিতে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজার হাজার লোক ইসলাম কবুল করেন। যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিক, মুবাল্লিগ, পীর- মাশায়েখ সূফীয়ানে কেরামের মধ্যে কয়েকজন হলেন-

• শাহ্ সুলতান রুমী - আগমন - ৪৪৫ খ্রিঃ 

• শাহ্ মাখদুম রুমী - আগমন- ৪৫০ খ্রিঃ 

• শরফুদ্দীন আবূ তাওয়ামা- মৃত- ৭০০ খ্রিঃ 

• ফরিদুদ্দীন শঙ্করগঞ্জ – মৃত- ১২৬৯ খ্রিঃ 

• শাহ্ জালাল ইয়ামেনী – ১৩৪৭ খ্রিঃ

• নূর কুতুবুল আলম - মৃত- ১৪৪৭ খ্রিঃ

ইসলামের রাজনৈতিক বিজয় :

সাধারণভাবে একথা সর্বজনবিদিত যে, মোহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু রাজা দাহিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। তার সিন্ধু বিজয়ে ধর্মীয় ক্ষেত্র ইসলাম ছিল অতীব সন্তোষজনক। 

এ বিজয়ের প্রশংসা করে ঐতিহাসিক Arnond বলেন- "The spread of Islam in India is in the quite unobrrusive labours of the preacher and trader who have carried their faith into very quarter of the gbaharul." এ বিজয় হলো ভারতীয় উপমহাদেশের সামগ্রিক বিজয়। কিন্তু আমাদের প্রশ্নের দাবি হলো- বাংলাদেশ প্রসঙ্গে । তাহলে এবার বাংলায় মুসলমানদের রাজনৈতিক বিজয় সম্পর্কে আলোচনা করা যাক ।

বাংলাদেশের মুসলিম শাসন :

বাংলাদেশের মুসলিম অভিযানের নায়ক ছিলেন তুর্কী বীর ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি (মৃত ১২০৬)। বাংলাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেই তিনি শাসন ব্যবস্থার দিকে মনোযোগী হয়েছিলেন। তার বাংলা বিজয় এক বিস্ময়কর ব্যাপার। বলতে গেলে এ মানুষটিই এক ঐতিহাসিক বিস্ময় ।

মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের পর থেকে ১৭৫৭ খ্রিঃ পর্যন্ত ৫৭৪ বছরে একশত একজন বা ততোধিক শাসক বাংলায় শাসন পরিচালনা করেন। তাঁদের কয়েকজন হলেন-

• ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ্ - মৃত্যু – ১৩৫০ খ্রিঃ 

• গিয়াস উদ্দীন আযম শাহ্ - মৃত্যু - ১৪০১ খ্রিঃ 

• মুর্শীদ কুলী খাঁ - মৃত্যু - ১৭২৭ খ্রিঃ

উপসংহার :

বিভিন্ন পর্যায়ে ইসলাম প্রচারকগণ বিভিন্ন পদ্ধতিতে এদেশের অমুসলিম জাতিকে মুসলিম জাতিতে পরিণত করেন। তাদের কেউ কেউ মসজিদ-মাদ্রাসা-মক্তব প্রতিষ্ঠা করে, কেউ ওয়াজ নসিহত করে, আবার কেউ দেশ শাসন করে, কেউ সমাজসেবা করে এদেশে ইসলামী শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করেন। সুতরাং কারো অবদান খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। 

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad