মহানবী সাঃ এর জীবনী- রচনা: ৫০০, ৭০০ ও ১০০০ শব্দ- PDF (৩টি)

মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা ৫০০ শব্দ

ভূমিকা : 

হযরত মুহাম্মদ (স) ইসলামের শেষ নবী। আমরা তাঁর উম্মত। হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত লক্ষাধিক নবী রাসূল দুনিয়াতে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর পরে আর কোনো নবী রাসূল দুনিয়াতে আসবেন না।

জন্ম ও বাল্যজীবন : 

৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ আগস্ট (১২ রবিউল আউয়াল) হযরত মুহাম্মদ (স) আরবের সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম আমেনা। তাঁর জন্মের পূর্বে পিতা আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। ছয় বছর বয়সে মাতা আমেনাও ইন্তেকাল করেন। অতঃপর শিশু নবী পিতামহ আবদুল মোত্তালিবের স্নেহছায়ায় বড় হতে লাগলেন। 

দাদার স্নেহ আদরে তিনি পিতামাতার অভাব অনেকটাই ভুলে গিয়েছিলেন। ভাগ্যের পরিহাস দাদা মোত্তালিবও তার অত্যন্ত স্নেহভাজন আট বছরের নাতী শিশু নবীকে ত্যাগ করে মানবলীলা সংবরণ করেন। এরপর পিতৃব্য আবু তালেব তার লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আল আমিন উপাধি লাভ : 

শৈশব কৈশোরের সততা কোমল স্বভাব ও অপরিসীম কর্তব্যবোধ অকৃত্রিম সাধুতা প্রভৃতি গুণাবলির জন্য * তাঁকে সর্বশ্রেণির লোকজন আল আমিন বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করেন।

বিবাহ : 

তৎকালীন মক্কার ধনবতী বিধবা মহিলা বিবি খাদিজা যুবক নবীর সুখ্যাতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে নিজ ব্যবসায়ের দায়িত্বভার প্রদান করেন। ক্রমশ তাঁর বিশ্বস্ততার প্রতি অনুরক্ত হয়ে বিবাহের প্রস্তাব দেন । হযরত মুহাম্মদ (স)-এর বয়স যখন ২৫ বছর তখন তিনি ৪০ বছর বয়স্কা বিবি খাদীজার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

আরও পড়ুন :- রচনা : হযরত ওমর রাঃ জীবনী 

নবুয়তপ্রাপ্তি :

৪০ বছর বয়সে একদিন যখন হেরা পর্বতের গুহায় হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহর গভীর ধ্যানে নিমগ্ন তখন আল্লাহর আদেশে ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) তাঁকে নবুয়তের খোশ খবর দিয়ে অহী অর্পণ করেন।

ইসলাম প্রচার : 

অহী প্রাপ্তির কিছুদিন পর তিনি আল্লাহর আদেশপ্রাপ্ত হয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। স্ত্রী বিবি খাদীজা (রা)—ই হলেন ইসলামে দীক্ষিত প্রথম মুসলমান নারী। তাঁর পর ইসলাম গ্রহণ করেন আবু বকর (রা), কিশোর হযরত আলী (রা) এবং যায়েদ ইবনে হারেসা। ক্রমে নবীর আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়ে ইসলামে দীক্ষিত মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল। 

অন্যদিকে বিধর্মী কুরাইশরা ক্ষিপ্ত হয়ে নবীজী ও তাঁর অনুসারীদের ওপর নানারকম অত্যাচার উৎপীড়ন শুরু করে দেয়। এতদ্‌সত্ত্বেও তাঁরা সত্যপথ থেকে একবিন্দুও সরে দাঁড়ায়নি। বিধর্মীরা ইসলামের প্রসার দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। একদিন তারা একত্রিত হয়ে পরামর্শ করে, হযয়রত মুহাম্মদ (স)-কে হত্যা করে ইসলাম প্রচার স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু বিধর্মী কুরাইশ নেতাদের মনস্কামনা পূরণ হয়নি।

মদিনায় হিজরত : 

কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মহানবী আল্লাহর আদেশে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় গমন করেন। মহানবীর এ মদিনা গমনকেই ‘হিজরত' বলা হয়। মদিনার পূর্বনাম ছিল ইয়াসরিব। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মদিনায় 'আগমনের পর তাঁর' সম্মানার্থে এর নাম রাখা হয় ‘মদিনাতুন্নবী’ বা নবীর শহর সংক্ষেপে মদিনা। 

যেসব মুসলমান জন্মভূমি ত্যাগ করে মদিনায় গিয়েছিলেন তাঁদেরকে 'মুহাজেরীন' এবং যেসব মদিনাবাসী তাঁদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য দিয়েছিলেন তাঁদেরকে ‘আনসার’ বলা হয়।

আরও পড়ুন :- ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান -বাংলা প্রবন্ধ রচনা 

উপসংহার :

তিনার আদর্শের অনুসারী হলে পৃথিবীতে অসাম্য, অনৈক্য, অবিশ্বাস, মিথ্যাচার কোন কিছুই থাকতে পারবে না। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সঠিক চরিত্র মানবতার জন্য আদর্শ অনুকরণীয়। আজকের বিভ্রান্ত, নির্যাতিত মানবতা যদি তিনার চারিত্রিক আদর্শকে পূর্ণাঙ্গভাবে আঁকড়ে ধরে তাহলে পৃথিবীর বুকে স্বর্গীয় শান্তি ধারা নিশ্চিত নেমে আসবে। 

সবগুলো যুদ্ধেই তারা পরাজয়বরণ করে। অবশেষে তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর প্রচারিত ইসলামে কোনো জাতিভেদ, বর্ণভেদ, উচ্চ-নীচ এবং ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য নেই। এজন্য ইসলাম শ্রেষ্ঠ জীবনবিধান হিসেবে শেষ অবধি টিকে থাকবে।

মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা ৭০০ শব্দ

উপস্থাপনা :

পৃথিবীতে যুগে যুগে মহামানবের আবির্ভাব হয়েছে । মানুষকে সৎপথ দেখানো এবং জগতের সার্বিক কল্যাণ সাধনই তাদের একমাত্র ব্রত। এ সকল মহাপুরুষদের চরিত্রে নানাগুণের সমাবেশ দেখা যায়। তাঁরা নিঙ্কুলয় চরিত্র ও উদার মনের অধিকারী। তাঁদের আদর্শ অনুসরণ করে পৃথিবীর মানুষ সত্য ও সুন্দরের সাক্ষাৎ পায় । 

জন্ম ও লালন-পালন : 

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ৫৭০ খ্রীস্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ্ এবং মাতার নাম আমেনা। হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা মারা যান । ছয় বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন । এতিম বালক মুহাম্মদ (সঃ) দাদা আবদুল মোত্তালিবের আশ্রয়ে ও স্নেহে লালিত-পালিত হতে থাকেন। মোত্তালিবের মৃত্যু হলে চাচা আবু তালিব তাঁকে লালন-পালন করেন।

আল-আমিন উপাধি :

হযরতের বাল্যজীবন দুঃখের ভেতর দিয়ে কেটেছে। লেখাপড়ার সুযোগ তিনি পাননি । তিনি ছিলেন সাধুতা ও বিশ্বস্ততার প্রতীক। তাঁর বিশ্বস্ততার জন্য লোকে তাঁকে-'আল আমিন' বলে ডাকত। জীবনে তিনি মিথ্যা কথা বলেননি। মিথ্যা আচরণ করেননি। অর্থ সম্পদের প্রতি তার কোন লোভ ছিল না। বাল্যকাল থেকেই তিনি চিন্তাশীল ও চরিত্রবান ছিলেন ।

আরও পড়ুন :- বাংলা রচনা : ঈদে মিলাদুন্নবী ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ 

চিন্তাধারা : 

আরবদেশের তৎকালীন সামাজিক অবস্থা ভাল ছিল না। নানা প্রকার কুসংস্কার ও ব্যভিচারে দেশ ছেয়ে গিয়েছিল গোত্রে গোত্রে হিংসা বিদ্বেষ ছিল। দলাদলি, মারামারি, মিথ্যা আর জুয়াচুরি ছিল নিত্যকার ঘটনা। এ সব দেখে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ব্যথিত হতেন । 

সব সময় চিন্তা করতেন, কি করে জাতির জীবনকে সুন্দর করা যায়, সমাজ থেকে কুসংস্কার ব্যভিচার দূর করা যায়, মিথ্যা আর খুন-খারাবী রোধ করা যায় । এ সব চিন্তা তাঁকে আকুল করত। প্রায়ই তিনি একাকী ধ্যানে মগ্ন থাকতেন।

নবুয়ত প্রাপ্তি : 

তাঁর বয়স তখন চল্লিশ বছর। তিনি আল্লাহ্র বাণী লাভ করেন জিব্রাইল ফেরেস্তার মারফত। তিনি নতুন ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে আল্লাহ্ কর্তৃক মনোনীত হয় । তাঁর নিকট প্রেরিত আল্লাহ্র বাণী সমষ্টিই হলো 'আল কুরআন'। কুরআন মুসলমানদের পথপ্রদর্শক “মহাগ্রন্থ। "

মদিনায় প্রবর্তন : 

আল্লাহ্র বাণী প্রচার করতে যেয়ে তিনি অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেন । মক্কার লোকেরা কাবা ঘরে তিনশ ষাটটি মূর্তি স্থাপন করে পূজা করত। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) প্রচার করেন, “এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই।” তিনি মূর্তিপূজা গর্হিত কাজ, পাপের কাজ বলে ঘোষণা করেন। এতে মক্কাবাসীরা তাঁর শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। শত্রুতা যখন চরমে ওঠে তখন জীবন সংশয়ের ভয়ে অল্পসংখ্যক অনুচর নিয়ে তিনি মদীনায় চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি সত্য ধর্ম প্রচার করেন।

মদিনা সনদ প্রণয়ন : 

হযরত মুহাম্মদ (স) মুসলমান ও ইহুদি এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি এবং মদিনাকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষাকল্পে সকলের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য গড়ে তোলার জন্য যে সনদ প্রস্তুত করেন, তা ‘মদিনা সনদ নামে খ্যাত। 

মদিনা সনদ পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান। এ সনদের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়, হযরত মুহাম্মদ (স) কেবল একজন ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সমরকুশলী ও দূরদর্শী রাজনীতিবিদ ।

আরও পড়ুন :- বাংলা রচনা - ইসলামে নারীর মর্যাদা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] - PDF

আদর্শবাদী :

তিনি ছিলেন আদর্শের মূর্ত প্রতীক । ক্ষমা সুন্দর মনের অধিকারী ছিলেন তিনি। তিনি নিজে যা করতেন না অপরকে তা করতে বলতেন না। তিনি 'আপনি আচরী ধর্ম' পরকে শিখিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ধর্ম প্রবর্তক, রাজনীতিবিদ, যোদ্ধা, উদার, ক্ষমাশীল। তাঁর চরিত্রে যতগুলো গুণের সমাবেশ ঘটেছে, পৃথিবীর আর কোন মহাপুরুষের জীবনে একাধারে এতগুণের সমাবেশ লক্ষ্য করা যায় না।

ইসলাম প্রচার : 

ইসলামের বাণী প্রচারের সূচনা লগ্ন থেকে মক্কাবাসীরা মহানবী (সঃ)-এর উপর সর্বপ্রকার অত্যাচার চালিয়েছিল, সৃষ্টি করেছিল মক্কা ত্যাগের পরিবেশ। তারা তাঁকে মদীনায় যাবার পথেও হত্যার জন্য ঘাতক পাঠিয়েছিল । হুদায়বিয়ার সন্ধির পরেও তারা বিশ্বাসঘাতকতা করার চেষ্টা করেছিল। এই চিরবৈরী মক্কাবাসীদের মহানবী (সঃ) ক্ষমা করেছিলেন। তিনি তাদের জানালেন, তারা সবাই স্বাধীন মুক্ত।

ভালবাসা :

মহানবী (সঃ) উঁচু-নীচু, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলকে ভালবাসতেন। তাই তিনি নিজেকে দীনহীন সমপর্যায়ের মনে করতেন। মদিনার একচ্ছত্র অধিপতিরূপে মক্কা বিজয়ের পরও ভয়ে কম্পমান এক ব্যক্তিকে তিনি বলেছিলেন, “ভয়ের এখানে কিছুই নেই । আমি রাজা নই, মানুষের প্রভু নই।” বস্তুত তিনি সকলের একজনরূপে, দীনের চেয়ে দীনের মত জীবন যাপন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন ।

চারিত্রিক গুণ :

অসাধারণ দৈহিক সৌন্দর্য ও চারিত্রিক গুণাবলি মহানবী (সঃ) কে করেছিল মহামহীয়ান। আর তার আকর্ষণকে করেছিল অপ্রতিরোধ্য। তাই তিনি অসাধারণ সাফল্য লাভ করেছিলেন। অলৌকিক কিছু দিয়ে তিনি মানুষের মন সম্মোহিত করেননি। মানুষ হিসেবে মানুষের যা শ্রেষ্ঠ সম্পদ তা দিয়ে তিনি জয় করেছিলেন মানুষের হৃদয় । তাই তো মুহাম্মদ (সঃ) মহামানব।

আরও পড়ুন :- চরিত্র - বাংলা রচনা  [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] এবং HSC

উপসংহার : 

তাঁর আদর্শের অনুসারী হলে পৃথিবীতে অসাম্য, অনৈক্য, অবিশ্বাস, মিথ্যাচার কোন কিছুই থাকতে পারবে না। হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর সঠিক চরিত্র চিরায়ত মানবতার জন্য আদর্শ অনুকরণীয় । আজকের বিভ্রান্ত, নির্যাতিত মানবতা যদি তাঁর চারিত্রিক আদর্শকে পূর্ণাঙ্গভাবে আঁকড়ে ধরে, তাহলে পৃথিবীর বুকে স্বর্গীয় শান্তিধারা নিশ্চিত নেমে আসবে।

মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা ১০০০ শব্দ

উপস্থাপনা : 

হযরত মুহাম্মদ (স) আমার প্রিয় নেতা। কেননা তিনি আইয়ামে জাহেলিয়ার সেই অন্ধকার যুগে এসেও আরবের বুকে সত্যের আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে সকল অন্ধকার দূর করেছেন। যখন মানব সমাজ এক চরম অধঃপতনে পৌঁছেছিল, তখন তিনি মুক্তির দূত হয়ে এ ধরাধামে আগমন করেছিলেন। মানব কল্যাণে তাঁর অবদান অতুলনীয়।

জন্ম ও বংশ পরিচয় : 

৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট সোমবার সুবহে সাদেকের সময় পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স) জন্মগ্রহণ করেন। আরবের সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের কুল শ্রেষ্ঠ হাশেমী গোত্রে তাঁর জন্ম ।

আদর্শ সমাজ সংস্কারক/নেতা মহানবী (স) : 

মানব সভ্যতার ইতিহাসে মহানবী (স) বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নেতা ও আদর্শ সমাজ সংস্কারক তা সর্বজনস্বীকৃত। একটি অধঃপতিত আরব জাতিকে সুসভ্য জাতিতে পরিণত করার বিরল কৃতিত্ব কেবল তাঁরই। 

জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত আরব সমাজকে তিনি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানামুখী সংস্কারের মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজে পরিণত করতে সক্ষম হন। একটি আদর্শ সমাজ নির্মাণে মহানবী (স) যেসব গুণ অর্জন ও সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তা নিচে উপস্থাপন করা হলো :

আল আমীন উপাধি লাভ : 

একজন আদর্শ নেতার প্রধান গুণ সততা। আর ছোটকাল হতেই হযরত মুহাম্মদ (স) এ গুণের অধিকারী ছিলেন। সততা, মহত্ত্ব, ন্যায়পরায়ণতা ও বিশ্বস্ততার কারণে আরববাসী তাঁকে ‘আল আমীন' বলে ডাকত।

হিলফুল ফুযুল গঠন : 

সতেরো বছর বয়স থেকেই তিনি সমাজের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। এ সময় তিনি 'হিলফুল ফল' সংঘ গঠন করে বিভিন্ন সমাজ সংস্কারমূলক কাজ করেন ।

হারবুল ফুজ্জারে অংশগ্রহণ : 

কিশোর মুহাম্মদ (স) পনেরো বছর বয়সে নিজের জাতিকে শত্রুকর্তৃক আক্রান্ত দেখে হারবুল ফুজ্জারে তাঁর চাচাদের সাথে অংশগ্রহণ করেন। তবে তিনি কাউকে অন্যায়ভাবে আঘাত করেননি।

নবুয়ত লাভ : 

৬১০ খ্রিস্টাব্দে চল্লিশ বছর বয়সে হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহর দূত হযরত জিবরাঈল (আ) মারফত অহীপ্রাপ্ত হন। আল্লাহর বিধান উচ্চকিত করার মহান দায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁর কাঁধে।

ইসলাম প্রচার ও কুরাইশদের নির্যাতন : 

নবুয়ত প্রাপ্তির পর মহানবী (স) সর্বপ্রথম গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিলে তাঁর নিকটাত্মীয় কয়েকজন ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেন। এরপর তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াতী কাজ শুরু করেন। এ কারণে তাঁর ও নওমুসলিমদের ওপর শুরু হয় অত্যাচারের স্টিমরোলার।

মদিনায় হিজরত : 

কুরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে, তখন মহানবী (স) আল্লাহর নির্দেশে স্বদেশ ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন। ফলে ইসলাম প্রচারে যোগ হয় নতুন মাত্রা। শুরু হয় মহানবী (স)-এর মাদানী জীবন ।

আরও পড়ুন :- মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য - রচনা ২০ পয়েন্ট

রাজনীতিবিদ : 

মুহাম্মদ (স) ছিলেন সর্বকালের সেরা রাজনীতিবিদ। বিশৃঙ্খলাপূর্ণ আরব সমাজে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্কার সাধন করেন। মদিনায় রাষ্ট্র গঠন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, মদিনা সনদ, হোদায়বিয়ার সন্ধি প্রভৃতি তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচায়ক।

সমাজ সংস্কারক : 

সমাজনীতিতে হযরত মুহাম্মদ (স) এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছিলেন। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, দাস প্রথা উচ্ছেদ, মদ, জুয়া ইত্যাদি অপকর্মের মূলোচ্ছেদ করে একটি শক্তিশালী নৈতিক আদর্শিক সমাজ গঠনে হযরত মুহাম্মদ (স) শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। 

সুষ্ঠু অর্থনীতি প্রবর্তন : 

রাসূল (স)-এর পূর্ববর্তীকালে আরবে সুষ্ঠু কোনো অর্থব্যবস্থা ছিল না। লুটতরাজ আর পশু পালনই ছিল তাদের পেশা। রাসূল (স) কৃষিব্যবস্থার প্রভূত সংস্কার সাধন করে গানীমত, ফায়, যাকাত, জিযিয়া ও খেরাজ ধার্য করে সুষ্ঠু রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা : 

রাসূল (স) ছিলেন Human rights তথা মানবাধিকারের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা। যখন মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল, নির্যাতিত, নিরীহ মানুষগুলো মহান আল্লাহ্র নিকট একজন মুক্তিদাতার জন্য প্রার্থনা করছিল; ঠিক সে সময় তিনি কুরআন-সুন্নাহ তথা মানবাধিকারের শ্রেষ্ঠ বাণী নিয়ে উপস্থিত হন।

নারীর মুক্তিদাতা : 

তৎকালীন আরব সমাজে মেয়েসন্তান জন্ম দিলে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। পুরুষরা যত বেশি খুশি স্ত্রী গ্রহণ করতো, যখন ইচ্ছা তালাক দিত। এহেন অবস্থায় নারীমুক্তির সুমহান বাণী নিয়ে রাসূল (স) আবির্ভূত হলেন ।

আরও পড়ুন :- প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষা সংস্কারক : 

রাসূল (স) নবুয়তী জীবনে তাঁর উম্মতকে শিক্ষার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, “প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর জ্ঞান অর্জন করা ফরয।”

অর্থনৈতিক সংস্কার : 

মহানবী (স)-এর আবির্ভাবকালে আরব উপদ্বীপে কোনো সুষ্ঠু অর্থনীতি ছিল না। সমাজের কমসংখ্যক লোকই ছিল বিত্তশালী। মদ, জুয়া, প্রতারণা, লুটতরাজ ছিল অর্থোপার্জনের প্রধান উপায়। তাই মহানবী (স) সুষ্ঠু অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন। 

তাঁর প্রবর্তিত রাজস্ব ব্যবস্থায় আয়ের উৎস ছিল মালে গনীমত, ফাই, যাকাত, জিযিয়া ও খারাজ। জাতিবর্ণ নির্বিশেষে সকল রকমের বিপন্ন লোকদের বায়তুলমাল থেকে স্থায়ীভাবে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ‘মিতব্যয়িতা ও শস্য ফলাও' নীতি ছিল মহানবী (স)-এর অর্থনৈতিক সংস্কারের অন্যতম দিক 

দাস প্রথার উচ্ছেদ : 

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) আরবসমাজে যুগ যুগ ধরে চলে আসা দাস প্রথার উচ্ছেদ সাধনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে মানবতার মর্যাদাকে সমুন্নত করেন। তিনি ঘোষণা করেন, “দাসকে মুক্তিদানের চেয়ে সর্বোত্তম কাজ আল্লাহর কাছে আর কিছুই নেই” ।

সামাজিক বৈষম্যের অবসান : 

রাসূল (স) আরবসমাজে বিদ্যমান ধনী-গরিব, উঁচু-নীচু, সাদা-কালোর ব্যবধান ও বৈষম্যের অবসান ঘটান। তিনি “হাবশি গোলাম আর কুরাইশদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই বলে ঘোষণা করেন।”

জীবন, সম্পত্তি ও বিধর্মীদের নিরাপত্তা বিধান : 

মহানবী (স) সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করেন। তিনি দুনিয়ার সকল ধর্মানুসারীদের সমমর্যাদা প্রদান করেন।

শ্রেষ্ঠ আদর্শবান : 

রাসূল (স) ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদর্শ মানুষ। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন, “রাসূল (স)-এর জীবনেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।”

শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক : 

মানবতার শ্রেষ্ঠ আদর্শ, পরকালে একমাত্র সুপারিশকারী ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর মতো দক্ষ, সুযোগ্য, বিচক্ষণ ও সফল রাষ্ট্রনায়ক তাঁর আগেও ছিল না, ভবিষ্যতেও হবে না।

সামরিক সংস্কারক : 

সামরিক ক্ষেত্রেও মহানবী (স)-এর সংস্কার লক্ষণীয়। একজন দক্ষ রণকুশলী হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন । যুদ্ধ ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দান করেই তিনি দ্বীনকে বিজয়ী শক্তির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। খোদাদ্রোহী ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষার জন্য তিনি নিয়মিত সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।

শ্রেষ্ঠ আদর্শবান পুরুষ : 

রাসূল (স) ছিলেন দুনিয়ার সবচেয়ে সেরা আদর্শ মানুষ। আল্লাহ তাঁর ব্যাপারে ঘোষণা করেন-"রাসূল (স)-এর জীবনেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।”

কয়েকটি যুদ্ধ : 

মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা এবং হযরত মুহাম্মদ (স)-এর প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে মক্কার কুরাইশরা শঙ্কিত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র গঠন ও মুসলমানদের আধিপত্য বিস্তার প্রতিরোধকল্পে বিধর্মীরা ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। 

উপসংহার : 

এত বড় সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, মানবাধিকারের প্রবক্তা বিশ্বে আর দ্বিতীয় কেউ নেই। এজন্য বিশ্বের বরেণ্য ব্যক্তিগণও একথা স্বীকার করেছেন, রাসূল (স) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মানুষ। বর্তমানেও তাঁর এ নীতি অনুসরণের মাধ্যমেই কেবল পৃথিবীর যে কোনো সমাজকে আদর্শ সমাজে পরিণত করা সম্ভব।








Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad