হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

রচনা: নারী শিক্ষা/নারী শিক্ষার গুরুত্ব (২০ পয়েন্ট)

পোস্ট সূচিপত্র সমূহ

ভূমিকা  

আজ নবযুগে নবীন প্রভাতে দিকে দিকে নারী প্রগতির জয়ধ্বনি ঘোষিত হচ্ছে। সুখের বিষয়, নারী আজ আর সেই বিগত শতাব্দীর অন্ধকারাচ্ছন্ন অন্তঃপুরে মৌনম্লান মুখে বসে নেই। সে আলোহীন প্রাণহীন দুর্ভেদ্য অন্তরাল থেকে বের হয়ে আজ আলোকিত জগতের উদার প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়িয়েছে। 

আজ আমরা বুঝতে পেরেছি- নারী ও পুরুষ সমাজজীবনের দুটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সমাজ ও জাতি গঠনে উভয়েরই সমান ভূমিকা রয়েছে। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীশিক্ষারও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এ সম্পর্কে কবি নজরুল ইসলাম যথার্থ বলেছেন-

“এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চিরকল্যাণকর 

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

নারী শিক্ষার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা  

জাতির সামগ্রিক কল্যাণের জন্য নারীশিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে দ্বিমতের অবকাশ নেই। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই নারী, সেহেতু নারীকে শিক্ষিত করে তুলে দেশের উন্নতির জন্য অনগ্রসরতার অভিশাপ থেকে নারীসমাজকে উদ্ধার করে পুরুষের পাশাপাশি পথ চলার অধিকার ও সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারী কল্যাণকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর প্রভাব  

একজন সুশিক্ষিত মাতা তার সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজ আদর্শে গড়ে তুলতে পারে। কারণ ছেলে-মেয়েদের ওপর মায়েদের প্রভাবই বেশি পড়ে। মায়ের কাছ থেকে তারা আচার-আচরণ, আদব-কায়দা ইত্যাদি শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের প্রভাব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে নেপোলিয়ান বলেছিলেন, ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদিগকে একটি শিক্ষিত জাতি দিব।’ তাই নারীদের শিক্ষাগ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।

স্বাবলম্বিতা অর্জন :

স্বারলম্বিতা অর্জনের ক্ষেত্রে নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীনকালে নারীরা সবকিছুর জন্য তাদের স্বামীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তারা ছিল অবহেলিত ও নির্যাতিত। গৃহের মধ্যেই তাদের কার্যাদি সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষিকা, পুলিশ অফিসার, পাইলট এমনকি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীও নারী। সুতরাং আজ আর নারীকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। তাই কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়-

“সে যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল নাক,
নারীরা আছিল দাসী ।”

গৃহস্থালি কাজে নারী :

গৃহস্থালি কাজের দিকে তাকালেও দেখা যায়, নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষিত নারী পুত্র-কন্যাদের অসুখ-বিসুখে যে শুশ্রূষা ও সংসারের প্রাত্যহিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ করতে পারে, অশিক্ষিত নারীরা সেভাবে করতে পারে না। শিক্ষিত নারী তার শিক্ষা, মেধা ও মননের সহায়তায় সংসারে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাতে পারে। তাই জ্ঞান সাধনা ও বুদ্ধির বিকাশে পুরুষের পাশাপাশি নারীকে সুযোগ করে দিতে হবে।

দেশ গঠনে নারী :

অতীতে দেশ গঠনে নারীদের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। বর্তমানেও দেশ গঠনে নারীরা যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতটি আন্দোলন হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে নারীদের কিছু না কিছু অবদান রয়েছে। আর এ অবদান রেখেছে শুধু শিক্ষিত নারীরাই । তাই দেশ গঠনে নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে নারী শিক্ষা :

বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে একটি জনবহুল দেশ এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এদেশের প্রধান সমস্যা। আর এ সমস্যার পেছনে একটি বড় কারণ হলো নারীশিক্ষার অভাব । নারীশিক্ষার অভাবে এদেশের গ্রামবাংলার ১২/১৩ বছরের বালিকারা বিয়ের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদনের যন্ত্রে পরিণত হয়। অল্প বয়সে সন্তান জন্মদান মা ও শিশু উভয়ের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এতে মায়ের স্বাস্থ্য নষ্ট হয় এবং সন্তানও দুর্বল, রোগাক্রান্ত ও মেধাহীন হয়। নারী শিক্ষিত হলে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করবে, সীমিত সংখ্যক সন্তান গ্রহণ করবে এবং নিজের ও সন্তানের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারবে ।

নারী শিক্ষার অন্তরায় :

বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশগুলোতে নারীশিক্ষার অন্তরায় হচ্ছে কুসংস্কার আর ধর্মীয় গোঁড়ামি। এছাড়া নারীশিক্ষার একটা বিশেষ বাধা হচ্ছে দারিদ্র্য ও নিরাপত্তার অভাব। নিরাপত্তার অভাবে অনেক অভিভাবকই তাদের কন্যাসন্তানদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পান। আর এতে করে ব্যাহত হচ্ছে নারীশিক্ষার অগ্রযাত্রা। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের অসচেতনতাও নারীশিক্ষার অন্তরায় সৃষ্টি করে থাকে ।

নারী শিক্ষা বিস্তারের উপায় :

নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য কতিপয় কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি। যেমন-

১। দেশে নারী শিক্ষার্থীর অনুপাতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ।

২। মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা কোনোভাবেই নির্যাতনের শিকার না হয় । প্রয়োজনে বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা ।

৩। বয়স্ক নারীদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।

৪। শিক্ষা গ্রহণে নারীকে উদ্যোগী ও উৎসাহী করার লক্ষ্যে সরকার যে উপবৃত্তি চালু করেছে তা যেন যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয় সেজন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করা।

৫। নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা, নারীশিক্ষা আন্দোলন গড়ে তোলা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের উদারনীতি গ্রহণ ইত্যাদি।

৬। সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ সৃষ্টি করা যাতে শিক্ষার প্রতি নারীর আগ্রহ বৃদ্ধি পায় ।

৭। গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের জন্য স্থানীয়ভাবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। এতে শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে ।

নারী শিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ :

“যে হাত দোলনা দোলায়, সেই হাত বিশ্ব শাসন করে”- কথাটি একেবারে সত্যি। আজ আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে, নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। নারীশিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক গৃহীত পদক্ষেপ অনেকটা প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছে। নারীশিক্ষা প্রসারে মেয়েদের বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ ও স্কুল পর্যায়ে উপবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এ উপবৃত্তির ব্যবস্থা কলেজ পর্যায়ে উন্নীত করার প্রক্রিয়াও চালু রয়েছে।

তাছাড়া মেয়েদের স্নাতক পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে মেয়েদের ৬০% কোটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের স্বাচ্ছন্দ্যময় ক্রমবিকাশের জন্য এখন দেশে স্বতন্ত্র নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া বয়স্ক নারীদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বয়স্ক নারীশিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি মহলও নারীশিক্ষা প্রসারে নানাভাবে অবদান রাখছে ।

নারী-পুরুষের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা :

এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, ‘Man cannot live alone.’- মানুষ একাকী বাঁচতে পারে না। আর নারী ছাড়া পুরুষও বাঁচতে পারে না। এ সৃষ্টি জগতে ঈশ্বর সামাজিক প্রয়োজনেই নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। নারী ও পুরুষ পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। আদিম সমাজে গুহাবাসী মানুষ ও সমাজবদ্ধ ছিল। সেখানে নর-নারী উভয়েই সমান ভূমিকা পালন করত। সুতরাং সমাজ, দেশ, জাতি গঠনে নারী ও পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নারীর স্থান যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, আমাদের দেশে শিক্ষার অভাবে এখনো তা সম্পূর্ণরূপে হয়ে ওঠে নি। দেশে সামগ্রিক শিক্ষার হার কম এবং পুরুষের তুলনায় নারী শিক্ষার হার আরো কম। তাই সারাবিশ্বে আজকে নারী জাতির মুক্তির যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে, আমাদের দেশে তা যথার্থ ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। শিক্ষার এ অনগ্রসরতার জন্য নারীরা পুরুষের সমান তালে পা ফেলতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে, এদেশের নারী চিরদিনই অবহেলিত।

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আমাদের সমাজব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক। তাই এখানকার নারীরা চিরকালই পুরুষদের দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে। এদেশে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠার সময় নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কেউ অনুভব করেনি। ফলে একই পরিবারের পুরুষের শিক্ষার সুযোগ থাকলেও নারীর ক্ষেত্রে তেমন নেই। এদেশে ধর্মীয় কুসংস্কার নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। যার অন্ধকার এদেশে এখন রয়ে গেছে। এতে জাতীয় জীবনে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা এবং জাতীয় অগ্রগতি হচ্ছে ব্যাহত।

বাংলাদেশের নারীদের বর্তমান অবস্থা :

অতীতের আঁধার অনেকটা কেটে গেলেও আজও আমাদের সমাজব্যবস্থায় নরনারী উভয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব সমানভাবে দেখা হচ্ছে না। তবে এটা আজ দিবালোকের মতো সত্য যে, নবযুগের আলোকোজ্জ্বল প্রভাতে দিকে দিকে নারীপ্রগতির জয়গান ঘোষিত হচ্ছে। নারী যে আর কারো গলগ্রহ নয়, এখন তার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যে দুর্জয় চালিকাশক্তি অন্তরালবর্তিনী নারীকে অন্ধকার পাষাণপুরী থেকে মুক্ত করে আধুনিক জগতের আলোকিত প্রাঙ্গণে নিয়ে এসেছে তা হলো আধুনিক শিক্ষা। আপন ভাগ্য জয় করার ন্যায্য অধিকার এখন তার হাতের মুঠোয়।

উন্নত দেশে নারী :

উন্নত দেশে নারীদের অবস্থান আজ সুদৃঢ়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে তারা নারীশিক্ষার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীতে সেখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, জার্মানি, কানাডা প্রভৃতি দেশের নারীরা সব ক্ষেত্রে পারদর্শী। এসব দেশের নারীরা আজ আর পুরুষের মুখাপেক্ষী নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা পুরুষকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।

সমাজের প্রেক্ষাপটে নারী :

নারী ও পুরুষ উভয়েই স্রষ্টার সৃষ্টি, মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত। তারপরও সভ্যতার এ চরম উৎকর্ষের কালে নারী তার সাধারণ মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এমনকি প্রায়ই শিকার হচ্ছে মধ্যযুগীয় নানা অমানবিক নির্যাতনের। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই আজও নারী যেন পুরুষের করুণার পাত্র। একদা কন্যা-সন্তান জন্মালে তাকে পুঁতে ফেলা হতো মাটির নিচে। কন্যা- সন্তানকে মনে করা হতো বিধাতার অভিশাপ। সব ধর্মের দৃষ্টিতে মেয়েরা ছিল ‘বিষধর সর্প’, ‘শয়তানের অস্ত্র’, ‘নরকের দ্বার’; এমনকি ধর্মকর্ম পালনেও তাদের অধিকার ছিল না।

নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা :

“তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।” একটি সুন্দর জাতি গঠনের জন্য নারীর ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ নেপোলিয়নের এই চিরস্মরণীয় বাণীতে তা ফুটে ওঠে। একটি শিক্ষিত জননীই জাতির ভবিষ্যৎ বংশধরদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। দেশের লোকসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। এই বিপুল জনগোষ্ঠী যদি অজ্ঞানতার তিমিরে পড়ে থাকে, তবে সমগ্র জাতিই দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ব্যাহত হবে। সংসারের সুখও নারীর হাতে। সমাজের সামগ্রিক প্রয়োজনেও মেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষাদীক্ষা ও মুক্ত মানসিকতার অধিকারী করে গড়ে তোলা আবশ্যক।

‘সে যুগ হয়েছে বাসি
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না’ক,
নারীরা আছিল দাসী। ‘

শিক্ষিত জননী হিসেবে নারী :

একজন সুশিক্ষিত মা সুশিক্ষিত সন্তান তৈরি করতে পারে সন্তানকে নিজের আদর্শে আদর্শিত করতে পারে। কারণ ছেলে মেয়েদের ওপর মায়ের প্রভাবই বেশি পড়ে। মায়ের কাছ থেকে তারা আচার-আচরণ, ভাষা, আদব-কায়দা ইত্যাদি শিক্ষা গ্রহণ করে। এছাড়া একজন শিক্ষিত মা তার সন্তানের ভবিষ্যতের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সে অনুযায়ী শিক্ষিত করতে পারে।

নারী শিক্ষায় গৃহীত ব্যবস্থা :

বর্তমান সরকার দেশের নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা ৭০-৭৫ শতাংশ। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে যেহেতু নারীসমাজ এগিয়ে যাচ্ছে তাই শতভাগ সফল না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ আরো উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। ইতোমধ্যেই নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গ্রামীণ মেয়েদের বিনা বেতনে পড়ার যে সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মেয়েদের জন্য যে উপবৃত্তি প্রদানের পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছে তা নারী শিক্ষা সম্প্রসারণে যথেষ্ট সুযোগ এনে দিয়েছে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও বর্তমানে মেয়েদের জন্য বেতন মওকুফ করা হয়েছে। ফলে মেয়েদের পক্ষে সহজে লেখাপড়া করা সম্ভব হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বর্তমানে শতকরা ৬০ জন মহিলা কোটার সুবিধা দেয়া হচ্ছে মেয়েদের শিক্ষার এই অগ্রগতি চারদিকে সহজেই লক্ষ করা যায়।

কতিপয় মহীয়সী নারীর দৃষ্টান্ত :

অতীতের গৌরবময় ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বহু মুসলিম মহিলা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর স্ত্রী উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা (রা) স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছেন বহু বীরাঙ্গনা মহিলা রণক্ষেত্রে গিয়ে আহতদের সেবা শুশ্রুষা করেছেন। মুসলিম ভারতের জাহানআরা, জেবুন্নেসা, চাঁদ সুলতানা নূরজাহান, বেগম রোকেয়া প্রমুখ বহু নারী সাহিত্য, কাব্য, শিল্প, রাজনীতি ও সমাজসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিভার স্বা রেখে গেছেন। এছাড়াও নারী মুক্তির পথ প্রশস্তকারী সমাজ সংস্কারক মহামানবী মাদার তেরেসার নাম ইতিহাসের পাতায় হর্ণাক্ষরে দেখা রয়েছে।

পারিবারিক জীবনে শিক্ষিত নারী :

পারিবারিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হলো নারী। একটি সুখী পরিবার গড়ে তুলতেও নারীর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শুধু একজন মা হিসেবে নয়, একজন স্ত্রী হিসেবেও তার ভূমিকা অনেক বড়। কারণ, পরিবারের সুখশান্তির চাবিকাঠি থাকে নারীর হাতে। তিনি তার জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা সহযোগে পারিবারিক জীবনে আনন্দের সঞ্চার করবেন। ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’ প্রবাদটি। কিন্তু শিক্ষার অভাব থাকলে এখানেও তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হবে না। শিক্ষার আলোয় তার নিজের জীবন আলোকিত হলেই কেবল তিনি অপরের জীবনকেও শান্তিপূর্ণ করে তুলতে সক্ষম হবেন ।

উপসংহার  

আমাদের সমাজে আমরা চাই আদর্শ জননী, আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ কন্যা। আদর্শ জীবন ও সমাজ গঠনে চাই উপযুক্ত নারীশিক্ষা । নারীরাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক জন্ম দেয় এবং তাদের পরিচর্যা করে গড়ে তোলে। ভবিষ্যৎ শিশুর মা যদি শিক্ষিত না হয় তবে শিশুর সুনাগরিক হওয়ার পথই রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই নারীকে অবহেলা না করে তার শিক্ষার প্রসারে এগিয়ে এসে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ সাধন করার সুযোগ দিতে হবে।

Leave a Comment