উপস্থাপনা
দেশ ও জাতিগঠনমূলক সর্ববিধ কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
কোন কালে একা হয়নিক জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী ।
দেশের তথা বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। সুতরাং এ নারীসমাজকে দেশ গঠনের উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা-দীক্ষায় তাদেরকে যথার্থই যোগ্য নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হবে। তবেই জাতি গঠনে তারা স্মরণীয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
পৃথিবীতে নারী-পুরুষ
বিধাতার ইচ্ছার প্রতিফলন আদম আর হাওয়া, সেই আদি মানব মানবী মাটির ধরণিতে আসেন। এখানে এসে গড়লেন সুখের নীড় । সমাজের উদ্ভব তখন থেকেই। সে সমাজ গঠনে আদম ও হাওয়া উভয়েরই সমান অবদান ছিল এবং অদ্যাবধি নারী-পুরুষের সম্মিলিত চেষ্টায়ই আমাদের সমাজ জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধি সাধিত হয়েছে।
আরও পড়ুন : রচনা : নারীর ক্ষমতায়ন (২০ পয়েন্ট)
পরস্পর নির্ভরশীলতা
ইতিহাস সাক্ষী দেয় নারী ও পুরুষের ঐকান্তিক চেষ্টা এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ভিত্তিতেই মানবসমাজের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। একটি সমাজের উন্নতি বর্তমান বিশ্বে নারী সমাজের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল । পৃথিবীর ছয়শত কোটি লোকের অর্ধেক নারী। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করছে।
জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা
একটি দেশ শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সামরিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে যত সমৃদ্ধ, সে দেশ তত শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তারা তাদের দেশের সকল ক্ষেত্রে নারীসমাজকে প্রাধান্য দিয়েছে। দেশের উন্নয়নমূলক সকল কাজে নারী সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত পদচারণা বলেই তারা আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত।
তারা সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে, যার সুফলও তারা পেতে শুরু করেছে। বেগম রোকেয়ার প্রচেষ্টায় আমাদের দেশে নারীসমাজের চিত্র কিছুটা পরিবর্তন হলেও এ পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা ত্বরান্বিত করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নারীসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের উৎসব – রচনা ( ২০ পয়েন্ট )
নারীত্বের গৌরব
নারীর সার্থকতা মাতৃত্বে। এ কারণে ইসলাম ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’ বলে নারীর মাতৃত্বকে সর্বোচ্চ গৌরবে ভূষিত করেছে। জাতির জন্য, দেশের জন্য নারীর সবচেয়ে বড় অবদান, সবচেয়ে বড় উপহার তার সন্তান। পৃথিবীর সকল সমাজসংস্কারক, চিন্তাবিদ, বিজ্ঞানী, কবি, লেখক, রাষ্ট্রনায়ককে তারাই প্রতিপালন করেছেন।
কেবল প্রতিপালন নয়, সন্তানের জীবনগঠন এবং জীবনের দিকনির্দেশনায়ও তারা অমূল্য অবদান রেখেছেন। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মতো মহান ব্যক্তিত্ব, নিউটনের মতো বৈজ্ঞানিক, প্লেটো, সক্রেটিস, এরিস্টটলের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, বিশ্ববিজয়ী বীর নেপোলিয়ন— সবাইকে গর্ভে ধারণ করে মাতৃত্বের গৌরব অর্জন করেছে নারীই।
আগামীদিনেও বৈজ্ঞানিক, রাষ্ট্রনায়ক, লেখক, সাহিত্যিক, কবি, সমাজসংস্কারক, চিন্তানায়ক প্রভৃতি দেশ গড়ার মানুষদের মানুষ করার দায়িত্ব পালন করবে নারীই। এ দায়িত্ব, এ কাজ মহাগুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই মায়ের ঋণ সন্তান কোনোদিনও শোধ করতে পারে না। অনুরূপভাবে দেশ ও জাতির পক্ষেও নারীর ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়।
নারীর কর্তব্য
জাতীয় জীবনের উন্নয়ন ও দেশগঠনে পুরুষের পাশাপাশি নারীসমাজের ভূমিকাও বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে বিশ্বে ৬৫০ কোটি লোকের অর্ধেক নারী। সুতরাং সমাজ ও সভ্যতার উন্নয়নের জন্য নারীর ভূমিকা একান্ত প্রয়োজন । সন্তান প্রতিপালন, সন্তানের জীবনগঠন নারীর প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হলেও জীবনের আরো অনেক ক্ষেত্রে নারীর করণীয় অনেক কিছুই রয়েছে।
আরও পড়ুন :- কম্পিউটার – রচনা ( ২০ পয়েন্ট )
অতীতের মতো আজ নারীসমাজ পিছিয়ে নেই। আজ যুগের বিবর্তনে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে। সেই সাথে পরিবর্তিত হয়েছে মানুষের জীবনের গতি, বেড়েছে কাজ। আর এ পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীর দায়িত্বও বেড়েছে।
সন্তানের চরিত্র গঠনে
মায়ের কাছ থেকে সন্তান যে শিক্ষা লাভ করে তাই পরবর্তী জীবনে তার চরিত্র এবং জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে। একজন মা শিক্ষিতা হওয়া মানে একটি পরিবার শিক্ষিত হওয়া। একটি পরিবার শিক্ষিত হওয়া মানে একটি সমাজ শিক্ষিত হওয়া। একটি সমাজ শিক্ষিত হওয়া মানে একটি দেশ উন্নত হওয়া। সুতরাং সন্তানের চরিত্র গঠনের মাধ্যমে নারীসমাজ জাতি গঠনে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে পারে ।
পারিবারিক জীবনে
নারী পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তি, পুরুষের জীবন সুন্দর ও সার্থক করে তোলে। এতে পুরুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয় জীবনের উন্নতির পথও প্রশস্ত হয়। পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তি রক্ষা করার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমাদের নারীসমাজ দেশ ও জাতি গঠনে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। আল্লামা ইকবালের ভাষায়-
পৃথিবীর তসবীর রঙ্গীন করেছে নারী,
জীবন চিত্তের উষ্ণতা তারই সেতারের ধ্বনি।
শিক্ষাক্ষেত্রে
শিক্ষাক্ষেত্রে নারীসমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে তারা পুরুষের চেয়ে অধিক দক্ষতা ও যত্নসহকারে শিশুদের মন-মানসের বিকাশ ঘটিয়ে ভবিষ্যতে জাতির পরিচালক হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
আরও পড়ুন :- অধ্যবসায় – রচনা : ২০ পয়েন্ট | সাথে pdf
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী
পুরুষের পাশাপাশি বর্তমানে নারীরাও সকল অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করছে। জাতীয় জীবনের উন্নতি সাধনে সকল কর্মক্ষেত্রে নারীসমাজকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের কর্মপরিধিও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘরে ও বাইরে তারা আজ কর্মমুখর জীবনের স্বাদ গ্রহণ করছে।
ইট ভাঙা থেকে শুরু করে অফিস-আদালতের কাজেও পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সম্পৃক্ততা লক্ষ করা যায়। তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি-মনীষা ও কর্মবহুল জীবনের চক্রে আবর্তিত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। পুরুষের পাশাপাশি নারীর অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করেই কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেছিলেন-
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী- অর্ধেক তার নর।”
সামরিক ক্ষেত্রে নারী
একটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও দেশের অভ্যন্তরের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যে ক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হচ্ছে সে দেশের সামরিক ক্ষেত্র। বর্তমানে আমাদের দেশের সামরিক ক্ষেত্রেও নারীসমাজ সদর্পে অংশগ্রহণ করছে। দেশ রক্ষার মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তারাও আজ দেশের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করছে।
অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় লোকদের মাঝে দ্রুত ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ ও তাদের পুনর্বাসনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়ে তারাও সেবাব্রতীর ভূমিকা পালন করছে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারী
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও নারীরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের প্রধান একজন নারী। এছাড়া রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমানে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের নেতৃত্বেই দেশ, জাতি ও সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এমনকি জনগণের অধিকার আদায়ে তারা রাজপথে নেমে আন্দোলনও করছে।
উৎপাদন বৃদ্ধিতে
কৃষিক্ষেত্রে :
সন্তানের ভবিষ্যৎ ভাগ্য বিনির্মাণে
উন্নত দেশে জাতিগঠনে নারী
ইউরোপ-আমেরিকা তথা উন্নত দেশগুলোতে নারীকে উন্নত মর্যাদা দেওয়া হয়। তারা দেশ ও জাতি গঠনে পুরুষের সাথে সমান তালে এগিয়ে চলে। দেশের প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টরে যেমন তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ আছে, তেমনি শিল্প-কারখানা, ব্যবসায়- বাণিজ্য, গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মহাকাশ অভিযানসহ সবক্ষেত্রেই নারীদের অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে তারা নিজেরাই বেছে নিয়েছে তাদের কর্মক্ষেত্র এবং কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছে তাদের মেধা ও যোগ্যতা ৷
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা (২০ পয়েন্ট) SSC, HSC- pdf
জাতিগঠনে নারীর অন্তরায়সমূহ
জাতিগঠনে শিক্ষিত নারীর ভূমিকা
জাতি গঠনে নারীর অধিক ভূমিকার জন্য করণীয়
জাতি গঠনে নারীসমাজের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে-
উপসংহার
বিশ্বের সকল কল্যাণমূলক কাজেই নারীর অবদান অনস্বীকার্য। একটি আদর্শ জাতি গঠনে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ভূমিকা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। নারীরা যদি পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রে সমানভাবে পদচারণা করে তবেই দেশ তথা জাতির উন্নতি সম্ভব।
এগুলো কপি করা যায় না কেন?
kkkkkkkkkkkk