ভাবসম্প্রসারন : জীবে প্রেম করে যেই জন (৩টি)

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমাদের শেখার সুবিধার্থে "জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর" ভাবসম্প্রসারণটি ৩টি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো। 

জীবে প্রেম করে যেই জন ভাবসম্প্রসারন - ১

মূলভাব : সৃষ্টি কর্তার সৃষ্ট জীবকে ভালবাসলে স্রষ্টা খুশি হন ।

সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীকে রূপ রস দিয়ে সাজিয়ে তোলার জন্য আল্লাহ পাক পৃথিবীতে নানা প্রকার জীব জন্তু তৈরি করেছেন। এদের মধ্যে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ । আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি জীবকে ভালবাসলে আল্লাহকেই ভালবাসা হয় । কেননা তার সৃষ্টি সব জীবের মধ্যেই তিনি বিরাজমান । আল্লাহর নাম গুণ কীর্তনের জন্যে তিনি বিবেক বুদ্ধিমান মানুষ তৈরি করেছেন। আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে সব থেকে সুন্দর করে তৈরি করেছেন। 

এবং তিনি সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এজন্য আল্লাহতালার নৈকট্য লাভের অন্যতম এক উপায় হচ্ছে মানুষকে ভালোবাসা। এই মানুষকে ভালোবাসার পাশাপাশি টিনার সৃষ্টি অনন্য জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, সমস্ত সৃষ্টি জগতই আল্লাহর পরিবার।যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবারকে দয়া প্রদর্শন করবে আল্লাহ পাক তাকেও দয়া প্রদর্শন করবেন।

মন্তব্য : আল্লাহর সৃষ্ট জীবকে সেবা করা আর আল্লাহকে সেবা করা একই কথা। অতএব আল্লাহকে পেতে হলে তার সৃষ্ট জীবকে ভালবাসতে হবে । 

আরও পড়ুন :- ভাবসম্প্রসারণ : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল (৩টি)

জীবে প্রেম করে যেই জন ভাবসম্প্রসারন - 

মূলভাব : আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার সৃষ্টিকে ভালোবাসলো সে যেন আমাকেই ভালোবাসলো ।

সম্প্রসারিত ভাব : ‘জীব সেবা” এবং ‘আল্লাহর উপাসনা” একই কাজ। প্রত্যেক সৃষ্টির মধ্যেই আল্লাহ বিরাজমান। এ সত্য প্রত্যেক মহাপ্রাণ মনীষী, ধর্মপ্রবর্তক, লোকহিতৈষী এক বাক্যে স্বীকার করেছেন। প্রত্যেক ধর্মেই সাধন ভজনের মূল্য অবশ্যই রয়েছে, তাই বলে সংসার ধর্ম ত্যাগ করে লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়ে আল্লাহর আরাধনা করলে ধর্মজীবন সম্পূর্ণ হয় না। মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব বিধায় মানুষকে অবশ্যই মানবীয় কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। 

স্রষ্টাকে পাবার শ্রেষ্ঠ পথ তাঁর সৃষ্ট জীবকে ভালোবাসা। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমে স্রষ্টার উপলব্ধি সহজতর হয়। তাই মানুষের প্রথম কর্তব্য জীবে দয়া করা। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘জীব সেবাই ঈশ্বর সেবা'। তাই জীব সেবা বাদ দিয়ে যদি কেউ ঈশ্বরের সেবা করতে যায়, ঈশ্বর তাতে সন্তুষ্ট হতে পারে না। মহামানবদের মুখ নিঃসৃত বাণী— মানুষকে সেবা, সাহচর্য ও ভালোবাসা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম। যাঁর শুভাশীষে সৃষ্টি ধন্য, এ জগৎ পরিব্যাপ্ত, জীব সেবাতো তাঁরই সেবা।

মন্তব্য :  স্রষ্টার প্রকাশ পাই একমাত্র তিনার সৃষ্টির ভিতরে, এজন্য তিনার সৃষ্টির জীবকে সেবা করা মানেই হলো তিনাকে সেবা করা।

আরও পড়ুন :- ভাবসম্প্রসারণ : দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য (২টি)

জীবে প্রেম করে যেই জন ভাবসম্প্রসারন - ৩

মূলভাব : জগতে যত প্রকার জীব আছে সবই বিধাতার সৃষ্টি। তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই তাঁকে পাওয়া যায় ।

সম্প্রসারিত ভাব : প্রেম-ভালোবাসা হলো মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই প্রেম-ভালোবাসা যিনি সকল জীবের সেবায় নিয়োজিত করতে পারেন তিনিই হলেন সর্বত্তোম মানুষ। সকল ধর্মের মূল কথা হলো সকল জীবের প্রতি করুণা ও ভালোবাসা। ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায়ের সংকীর্ণ ভেদ-বুদ্ধির মোহে আমরা অন্ধ বলে দেখতে পাই না আমাদের ভেতরের মানুষকে । 

কাউকে ঘৃণা বা অবজ্ঞা করার অর্থই হলো ঈশ্বরকে ঘৃণা করা। অনাদৃত মানুষের ব্যথা সৃষ্টিকর্তাকে ব্যথিত করে। কেননা ঈশ্বর জীব সৃষ্টি করেছেন। তাই জীবসেবা মানেই ঈশ্বরসেবা। জীবের প্রতি যিনি প্রেম ও সেবার বাঁধনে বাঁধা পড়েছেন তিনি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরসেবা করে চলেছেন। 

যিনি প্রতিটি প্রাণীকে তাঁর পরমাত্মীয় বলে ভাবেন তিনি সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ধন্য। দরিদ্র, অন্ধ, মুচি, মেথর তাঁর আপনজন । তিনি ভেদাভেদ না করে তাদের অকুণ্ঠ সেবা করেন। আর এ সেবা ধর্মই ঈশ্বর সাধনার শ্রেষ্ঠ সোপান । এই পবিত্র মানব ধর্ম পালন করলে ধর্ম সাধনার মূল লক্ষ্য ঈশ্বরসেবা সার্থক হয় ।

মন্তব্য: ঈশ্বর মানুষের মাঝে বিরাজমান এবং তাঁর সৃষ্টিশীল জীবকে ভালোবাসার মাধ্যমে তাঁর অনুগ্রহ লাভ করা যায় ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad