ভাবসম্প্রসারণ : মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে (৩টি)

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ, তোমাদের শেখার সুবিধার্থে "মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই" ভাবসম্প্রসারণ টি  ৩টি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো। তোমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে সহজ মনে হয় সেটাই শিখে নিতে পারো। 

 মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে ভাবসম্প্রসারণ - ১

মূলভাব : এ ধূলির ধরার প্রতি মানুষের ভালোবাসা অকৃত্রিম। তাই মৃত্যু অবধারিত জেনেও মানুষ এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চায় না।

সম্প্রসারিত ভাব : মৃত্যু অমোঘ সত্য জেনেও মানুষ পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শ ছেড়ে যেতে চায় না। এ অমরত্বের প্রার্থনা মানুষের চিরন্তন। পৃথিবীর ধূলিকণা মধুময়। মধুময় পৃথিবীর ধূলিকণা গায়ে মেখে কবি অমৃত্যের স্বাদ লাভ করতে চান। কবির কাছে পৃথিবী সুন্দর। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কবি পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিতে চান না। পৃথিবী মানবের এক অপূর্ব লীলাক্ষেত্র। এখানে মানুষে মানুষে মিলেমিশে পৃথিবীকে নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরিয়ে রেখেছে। 

কবি সে সৌন্দর্যে অবগাহনের মাধ্যমে সমস্ত মানবের মাঝে বিলীন হয়ে যেতে চান। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই, নেই কিছু মহীয়ান। এ মানুষের মাঝে থেকে মানুষের সুখ দুঃখে নিজেকে উজাড় করে ঢেলে দিয়ে কবি মানুষের মাঝে বাঁচতে চান। কবির বাঁচার আকাঙ্ক্ষা অত্যন্ত সুন্দররূপে আলোচ্য চরণে বাঙময় হয়ে উঠেছে। মনে হয় এ যেন লিরিক নয়, নিষ্ঠুর জীবনতত্ত্ব।

মন্তব্য : প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধে আকুল হয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে চায়; তাইতো মরণের কথায় মানুষ বিচলিত হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন : সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা : ভাব সম্প্রসারণ - ২ টি 

 মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে ভাবসম্প্রসারণ - ২

মূলভাব : মানুষ মরণশীল। মৃত্যু জীবনের অনিবার্য পরিণাম । জীবনের বিপরীত পিঠে অঙ্কিত আছে মৃত্যুর বেদনাঘন অন্ধকার। 

সম্প্রসারিত ভাব : মহাকালের তুলনায় মানুষকে তার স্বল্প পরিসর জীবনলীলা সাঙ্গ করে একদিন আলিঙ্গন করতে হবে মৃত্যুর নিস্তব্ধতাকে। তবুও পৃথিবীর বুকে মানুষের স্বল্প-পরিসর জীবনে গড়ে ওঠে নানা অনুষঙ্গ। জগৎ-সংসার আর প্রকৃতির বিস্তৃত বন্ধনে জীবনের যে আনন্দময় প্রকাশ ঘটে তারই মধ্যে মানুষ নিজেকে মগ্ন রাখতে চায় চিরকাল। 

সুন্দর এ পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো অজানা- লোকে সে কখনোই যেতে চায় না। সংসার আর মাটির বন্ধনে সে অনুসন্ধান করে জীবনের সার্থকতা। উদয়ান্ত পরিশ্রম করে পৃথিবীর বুকে গড়ে তুলে মনোরম এক স্বর্গ। জীবনের এই সঞ্চিত সৌন্দর্যে আনন্দের যে রূপ পরিস্ফুট হয় মানুষ তাকে অভিভূত ব্যঞ্জনায় উপভোগ করতে চায় চিরকালব্যাপী ।

মানুষ তার স্বল্পায়ু জীবনে তার সৃষ্টিশীল প্রতিভা দিয়ে স্বর্গ-মর্ত-পাতালকে জয় করলেও মৃত্যুর কাছে সে পরাজিত । তাই এক সময় তাকে চিরবিদায় গ্রহণ করতে হয় পৃথিবীর রঙ্গভূমি থেকে। জীবনের এ অনিবার্য মহাপ্রস্থানকে কারো পক্ষে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। জীবনের এ অবশ্যম্ভাবী পরিণতির জন্যে মানুষ আরো নিবিড়ভাবে ভালোবাসে পৃথিবীকে । মানুষ মুগ্ধ হয়ে পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য দেখে । জগৎসংসার আর আলোকোজ্জ্বল পৃথিবীর মুগ্ধ মানবতার-বন্ধন ছিন্ন করে মন কখনো এ সুন্দর ভুবন ছেড়ে বিদায় নিতে চায় না।

মন্তব্য : জগৎ-সংসারের বন্ধন আর পৃথিবীর অনাবিল সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ আর অভিভূত মুগ্ধতা তারই সান্নিধ্য স্বপ্নে মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকতে চায় পৃথিবীর বুকে। মানুষের এ আকাঙ্ক্ষা অপূরণীয় হলেও এটাই জীবনের চিরন্তন আকূলতা ।

আরও পড়ুন : প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয় কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না

 মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে ভাবসম্প্রসারণ - ২

মূলভাব : এ সুন্দর পৃথিবীতে কেউই মরতে চায় না। শত চেষ্টা করে বেঁচে থাকতে চায় ৷

সম্প্রসারিত ভাব : এ পৃথিবীতে দুঃখ আছে, বেদনা আছে, গ্লানি আছে। কিন্তু এ পৃথিবীর এই দুঃখময়তার মধ্যেও এক অনাবিল আনন্দ আছে। এ পৃথিবীর সূর্য করোজ্জ্বল দিন, জ্যোৎস্না রাত্রি, বর্ষণমুখর বর্ষার বা বৈরী বৈশাখী ঝড়ের উদ্দমতা সমস্ত কিছুর মধ্যেই জীবনের উত্তাপ ও আবেগ আছে, বেঁচে থাকবে বিচিত্রতর স্বাদ এবং বৈচিত্র্য।

কবি তাই এ পৃথিবীর আনন্দ বেদনার বিচিত্র স্পর্শ ছেড়ে মৃত্যুর গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যেতে চায় না। মানুষের সুখ-দুঃখের বিচিত্র কলকল্লোলের মধ্যে বেঁচে থাকার স্বাদ প্রত্যেক মানুষের মনে চিরন্তন কামনা। এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে কেউই মরতে চায় না। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তার বেঁচে থাকার কামনা।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad